সিলেটের মানুষ এখনো বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো কিছু মানুষের বসবাস রয়েছে। কুশিয়ারা অববাহিকায় এখনো পানি। প্রধান সড়কগুলোসহ প্রায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের সবকটি রাস্তাঘাট ভেঙেচুরে একাকার। পানি নামায় ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠছে। দুই দফা বন্যায় এবার ঈদের ছুটিতে পর্যটক হারিয়েছে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো। সিলেটে দুই দফা বন্যা পরবর্তী অবস্থার কারণে পর্যটনকেন্দ্রগুলো পর্যটকসংকট দেখা দিয়েছে। এবার ঈদুল আযহার ছুটিতে সিলেটে ছিল পর্যটকশূন্য। পর্যটনস্পটগুলোতে কেউ বেড়াতে আসেননি।
ঈদের পরের দিন সোমবার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে সকালে তেমন পর্যটকদের উপস্থিতি দেখা না গেলেও দুপুরের পর থেকে উপস্থিতি কিছুটা বাড়ে। মঙ্গলবারও ছিল একই অবস্থা। স্থানীয় কিছু পর্যটক ছাড়া সিলেটের বাইরে থেকে বেড়াতে আসা তেমন কারও দেখা মেলেনি।
সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, পান্তুমাই, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল কম। বিকেলের পর থেকে পর্যটকদের উপস্থিতি কিছুটা বাড়ে। তবে ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের উপস্থিতি সে পরিমাণ থাকে, তেমনটার ধারে কাছেও ছিল না।
ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর। পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। ঈদ এলেই সাদাপাথরে ঢল নামে পর্যটকদের। পর্যটকদের উপস্থিতি বাড়িয়ে দেয় ওই এলাকার ব্যস্ততা। সোম-মঙ্গল ও বুধবার সাদাপাথরে গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন পরিবেশ। নেই পর্যটক। যারা এসেছেন তারা সিলেট শহর থেকে বেড়াতে গেছেন।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, এবার ঈদের পর দিন যে পর্যটক এসেছেন তা সাধারণত প্রতিদিনই আসেন। আমাদের প্রস্তুতি ছিল বেশি। সেই অনুপাতে পর্যটক আসেননি। ব্যবসারীরাও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু পর্যটক না আসায় ভেস্তে গেছে সব প্রস্তুতি। পর্যটকদের উপস্থিতি কম থাকায় বিকিকিনি কম হচ্ছে।
কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, পর্যটনকেন্দ্রে প্রত্যাশা অনুযায়ী পর্যটক নেই। তবে আগামী শুক্রবার ও শনিবার পর্যন্ত পর্যটকদের আগমন অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে গত ঈদুল ফিতরে জাফলংয়ে ঘটেছিল অপ্রীতিকর ঘটনা। এতে করে জাফলং এবারের ঈদে বাইরের পর্যটকদের সংখ্যা কম ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন, একে তো বন্যার প্রভাব, তার উপর গতবারের ঘটনার কারণে অনেক পর্যটকরাই আসেননি। তবে এবারের ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তা সহ সার্বিক বিষয় নিশ্চিত করতে প্রশাসন আগে থেকেই সতর্ক ছিল।
গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুল জলাবনে বেড়াতে যাওয়ার ভালো সময় বর্ষা মৌসুম। তবে এবারের বন্যা ওই পর্যটনকেন্দ্রটিতেও প্রভাব ফেলেছে। রাতারগুল গ্রামের মাঝি সোনা মিয়া বলেন, আগে ঈদের সময় নৌকার জন্য পর্যটকেরা দাঁড়িয়ে থাকতেন। এবার পর্যটকদের জন্য মাঝিরা অপেক্ষা করেছেন। তারা একদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এখন আয়ও ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এবার বন্যার কারণে পর্যটকরা সিলেটেই আসেননি। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ঘুরতে সিলেটে আসেননি। এবার তারা না আসায় সিলেট ছিল পর্যটক শূন্য। এছাড়া প্রচণ্ড গরমের কারণে স্থানীয় লোকজনও ঘর থেকে বের হননি বলে জানান তিনি। রাতারগুল এলাকায় বেড়ানোর সময় এখনই। স্থির হয়ে আছে স্বচ্ছ পানি। নৌকা দিয়ে সোয়াম ফরেস্ট ঘুরে বেড়ানোর উপযুক্ত সময় হলেও পর্যটক না আসার কারণে এবার রাতারগুলও ছিল নীরব, নিস্তব্ধ।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান বলেন, সিলেটে বন্যা পরবর্তী অবস্থার কারণে পর্যটক কম। তবে সোমবার থেকে পর্যটকদের উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পর্যটক উপস্থিতি বাড়তে পারে বলে তিনি আশাবাদী।