উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ১ম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বুধবার। এ ধাপে জুড়ীতে তিনটি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের মধ্যে আমেজ বিরাজ করছে।
চেয়ারম্যান,ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। ছয়টি ইউনিয়নের এক লক্ষ সতেরো হাজার সাতশত পঞ্চান্ন জন ভোটারের এ উপজেলায় প্রার্থী বেশী হওয়ার কারনে জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে এ উপজেলায় আমেজ বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
এ নির্বাচনে বর্জনের মধ্যেও নির্বাচন ঘিরে চাঙ্গা বিএনপির নেতাকর্মীরা। নেতারা মুখে বর্জন করলেও অলিখিত নির্দেশে উৎসবে রুপ নিয়েছে এ নির্বাচন।এ সুযোগ নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। যেই জয়ী হোক নির্বাচন হচ্ছে উৎসবমূখর জয়ী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এ কারনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিরোধীদের সুযোগ সুবিধা দিতে কার্পন্যতা করছেন না।
চেয়ারম্যান পদে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ মোঈদ ফারুক (আনারস), সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক কিশোর রায় চৌধুরী মনি (কাপ-পিরিচ), বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান,উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিংকু রঞ্জন দাস (মটরসাইকেল), আমেরিকা প্রবাসী বিএনপি ঘরোনার কবির উদ্দিন (দোয়াত-কলম) ও তার ভাই আমেরিকা প্রবাসী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন (কড়াই) এবং পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন (ঘোড়া) প্রার্থী হয়েছেন।
নির্বাচনে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিনের ভাই কবির উদ্দিন লড়ছেন দোয়াত কলম নিয়ে। তাদের অপর ভাই নাসির উদ্দিন(কড়াই) ডামি প্রার্থী।তাদের ভাতিজা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক জাবেদ আহমদ সহ ঘরোয়া কয়েকজন নেতাকর্মী ছাড়া তাদের পক্ষে বিএনপির সিনিয়র কোন নেতাকে মাঠে দেখা যায়নি।উপজেলা বিএনপির বেশীর ভাগ নেতাকর্মীরা বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুকের পক্ষে কাজ করছেন।উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম শামীম আহমদ, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাকিম আহমদ সহ অনেক নেতারা প্রকাশ্যে সক্রিয় রয়েছেন এ প্রার্থীর পক্ষে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছ থেকে জানা যায়, বিএনপি নির্বাচনে আসলে এই উপজেলার সভাপতি হাজী মাছুম রেজা প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।জামায়াতের সিদ্ধান্তে জেলা নায়েবে আমির আব্দুর রহমান প্রার্থী হলে বিএনপি নির্বাচনী চিন্তা থেকে সরে যায়।পরে অবশ্য দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি অটুট থেকে জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দিলে ও যাচাই বাছাই এ উনার প্রার্থীরা বাতিল হয়। এরপর থেকে বিএনপি জামায়াতের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন।সম্প্রতি ৪ মে থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা মোঈদ ফারুকের পক্ষে কাজ করছেন।তবে ত্রি মুখী হয়ে বিএনপির প্রার্থীরা কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাছুম রেজা অপ্রকাশ্যে তার অনুসারীদের কে মোঈদ ফারুককে সমর্থন প্রদান করেন। এরপর থেকে তার অনুসারীদের অধিকাংশ নেতাকর্মী প্রকাশ্যে মোঈদ ফারুকের পক্ষে কাজ করছেন।অপর দিকে সাধারন সম্পাদক হাবিবুর রহমান আসকর ও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পূর্ব থেকেই গোপনে কিশোর রায় চৌধুরী মনির পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন।
তবে বিএনপির সভাপতি হাজী মাছুম রেজা ও সাধারন সম্পাদক হাবিবুর রহমান আসকর,এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,আমাদের কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা বর্জনের পক্ষে। যারা ভোটে সক্রিয় কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, মোঈদ ফারুকের পক্ষে কাজ করতে এ আসনের বিগত ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নাসির উদ্দিন মিঠু নির্দেশ দিয়েছেন।বিগত উপজেলা নির্বাচনে ও বিএনপির বিশাল একটি অংশের ভোটের কারনে মোঈদ ফারুক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
অপর দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও ত্রিধারায় বিভক্ত। মূলত এখানে আওয়ামী লীগের দুই ধারা বিদ্যমান। একটির নেতৃত্বে রয়েছেন এ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন অপর বলয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। এ উপজেলায় শাহাব উদ্দিনের অলিখিত মৌখিক সমর্থনের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রন্জন দাস। শাহাব উদ্দিন ঘরোনার প্রায় সব নেতাকর্মীরা রিংকু রন্জন দাসের পক্ষে কাজ করছেন।অপর বলয়ের নেতৃত্বে থাকা এস এম জাকির হোসাইন বলয়ের নেতাকর্মীরা কিশোর রায় চৌধুরীর পক্ষে কাজ করছেন।স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ পর্যায়ের কিছু নেতাকর্মী মোঈদ ফারুকের পক্ষে রয়েছেন।
এ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের দুই নেতার প্যাট্রিজ ইস্যুর পাশাপাশি নিজেদের নেতার সম্মান বাচাঁতে মাঠে নেমেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ভোটের আমেজ বেশি।তাদের সাথে স্থানীয় পর্যায়ের জামায়াত -শিবিরের কিছু নেতাকর্মী ও রয়েছেন।
তবে সর্বশেষ ফলাফল বিশ্লেষনে জানা যাবে, চা বাগান,সিলেটি -নন সিলেটি অধ্যুষিত এ উপজেলায় দ্বিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।মোট এক লক্ষ সতেরো হাজার সাঁতশত পঞ্চান্ন ভোটের মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার হিন্দু সহ অন্যান্য ধর্মের ভোটের পাশাপাশি সিলেট ব্যতীত অন্যান্য জেলা থেকে এখানে এসে স্থায়ী বসবাসকারী প্রায় ২০ হাজার ভোটার রয়েছেন। আদি মানুষের পাশাপাশি এই দুই পক্ষের ভোট নির্বাচনে সব সময় প্রার্থীদের জয়ী করতে হিসাব কষে।
এছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে আনজুমানে আল ইসলাহ উপজেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুস শহীদ (টিয়া পাখি), উপজেলা যুবলীগের সম্পাদক শেখরুল ইসলাম (বই), উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জুয়েল রানা (চশমা), উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক ইকবাল আহমদ (তালা), ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ (মাইক),যুবদল নেতা মোয়াজ জাকারিয়া শিবলু (বাল্ব) ও রুবেল আহমদ (টিউবওয়েল) প্রার্থী হয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস রনজিতা শর্ম্মা (প্রজাপতি), সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আজিবুন খানম (কলস) ও সাবেক ইউপি সদস্য শিল্পী বেগম (ফুটবল) প্রার্থী হয়েছেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান,নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।এখানের পরিবেশ ও অনেক ভালো।ইতোমধ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
শেয়ার করুন