এবার সিসিকের ১৫ ওয়ার্ডে আরিফের চোখ

সিলেট

সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিধি এখন বিশাল এলাকাজুড়ে। পূর্বের ২৭ ওয়ার্ডের এলাকার বাইরে চারপাশে নতুন করে ১৫টি ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড সংখ্যা এখন ৪২টি। নগরের উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম এলাকায় গঠন করা হয়েছে এসব ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডগুলো প্রবাসী এলাকা হওয়ার সুবাদে এমনিতেই শহরের আদলে গড়ে উঠেছিল। এতে করে সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করা সহজ হয়।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এসব ওয়ার্ডকে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করেন। এই ওয়ার্ডগুলোকে সিটি করপোরেশনের আওতায় নিয়ে আসা ছিল চ্যালেঞ্জ। ওয়ার্ড বিভক্তিকরণ নিয়ে মতবিরোধ, পূর্বের ইউনিয়নে বিদ্যমান থাকা সহ নানা সমস্যা ছিল।

তবে- শেষ পর্যন্ত সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জোরালো উদ্যোগ নিয়ে এসব ওয়ার্ডকে সিটির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।এখন এসব ওয়ার্ডে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডগুলোতে নাগরিক সুবিধা বাড়াতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। প্রথমেই নজর দেওয়া হচ্ছে সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে। কারণ হচ্ছে- পূর্বে ইউনিয়ন পরিষদে থাকাকালে অনেক এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক ছিল। এতে করে নগরের জলাবদ্ধতার পাশাপাশি শহরের উপকণ্ঠেও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এর বাইরে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ। এজন্য নতুন ওয়ার্ডগুলোতে নতুন করে ডিপটিউবওয়েল স্থাপন করা হচ্ছে।

বর্ধিত এলাকার নাগরিকরা জানিয়েছেন; ইতিমধ্যে তারা সিটি করপোরেশনের নাগরিক সেবা পেতে শুরু করেছেন। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এসব এলাকায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে করে এখন থেকে টেকসই উন্নয়ন হবে বলে জানিয়েছেন নাগরিকরা।

এদিকে- নতুন গঠিত এলাকার চারদিকে যানজট একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে নগরের পূর্ব অংশ টিলাগড় থেকে বটেশ্বর পর্যন্ত যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় যানজটও হচ্ছে। এতে করে দেখা গেছে; ইসলামপুর (মেজরটিলা, দাসপাড়া, শাহ্‌পরাণ, পীরের বাজার, বটেশ্বরে রাস্তার দু’পাশে সরকারি জমি দখল করে স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। আর এই স্থাপনার কারণে রাস্তার পরিধি যেমন সংকোচিত হয়েছে, তেমনি জলাবদ্ধতাও দেখা দিচ্ছে নগরের পশ্চিম অংশে একই ভাবে সমস্যা দেখা দেওয়ার কারণে মেয়র ওই সড়কে ব্যবস্থাপনা ফিরে আনতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে মিলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন।

একই ভাবে সম্প্রতি সিলেট-তামাবিল সড়কে বটেশ্বর পর্যন্ত সড়কের ব্যবস্থাপনা ফেরাতে তিনি কাজ শুরু করেছেন।

রোববার তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকা ইসলামপুর সিলেট-জাফলং মহাসড়কের দু’পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছেন। অভিযানে সিলেট এমসি কলেজ এলাকা থেকে ইসলামপুর বাজার পর্যন্ত সড়কের দু’পাশের স্থাপনাসমূহ উচ্ছেদ করা হয়। একই সঙ্গে পরিষ্কার পরিচ্চন্নতার কাজ করে সিসিক।

এ সময় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন- সরকারি ভূমিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ বেআইনি। বিশেষ করে সড়কের পাশের ভূমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ জনচলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। সড়কের দু’পাশের সৌন্দর্য্য নষ্ট করে এমন জবরদখল চলতে দেয়া যায় না।

তিনি জানান- সিলেটের এই সড়ক ধরে প্রতিদিন অগণিত পর্যটক হযরত শাহ্‌পরাণ (রহঃ) মাজার জিয়ারত, জাফলং সহ প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্রসমূহে যাতায়াত করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কের দু’পাশের ভূমিতে অবৈধভাবে নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করেছেন দখলদাররা। অপরিকল্পিত এসব স্থাপনা নির্মাণের ফলে সড়কে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

এদিকে- সিলেট নগরীর বর্ধিত অংশের উন্নয়নে নজর দিয়েছেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ১৫টি ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য তিনি প্রথমে সরকারের কাছে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্ধ চেয়েছিলেন। পরে অবশ্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে সেটি কমিয়ে এক হাজার কোটি টাকায় নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে। বাকি টাকা সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন- মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্দ চেয়ে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। গত ২০শে ডিসেম্বর এই প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছে। এরপর এটি প্রধানমন্ত্রীর টেবিল ঘুরে একনেকে যাবে।একনেকে পাস হলেই বরাদ্দ চলে আসবে। তিনি জানান, আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে এই বরাদ্দ আসতে পারে। বরাদ্দ পাওয়া মাত্রই নতুন করে বর্ধিত এলাকায় কাজ শুরু করা হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *