স্টাফ রিপোর্টার : আসন্ন সিসিক নির্বাচনে ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর বাসার সামনে অস্ত্র মহড়ার ৭দিনেও হয়নি অস্ত্র উদ্ধার। ৩ জনকে গ্রেফতার করলেও গ্রেফতার হয়নি মূল অস্ত্রধারীসহ অন্যান্যরা। এরই মধ্যে হুমকী পাওয়া কাউন্সিলার প্রার্থী সায়ীদ মো. আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার দায়েরের একদিনের মাথায় এরই মধ্যে গ্রেফতারও করা ২ জনকে। গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন কাউন্সিলার প্রার্থী সায়ীদ মো. আব্দুল্লাহ সহ তার কর্মী সমর্থকগণ। এমন ঘটনায় সিলেটজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ মো. আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে হয়েছে। রোববার (১১ জুন) রাতে এসএমপির বিমানবন্দর থানায় আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) ও স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইনে মামলা দায়ের মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের অর্থ সম্পাদক মো. শাহানুর আলম। অভিযোগে নৌকার মেয়র প্রার্থীর কর্মীকে মারধরের অভিযোগে এনেছেন তিনি। মামলায় কাউন্সিলার প্রার্থী সায়ীদ মো. আব্দুল্লাহ সহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ৭০-৮০ জনকে আসামি করা হয়। সোমবার (১২ জুন) এসএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ কমিশনার সুদীপ দাস মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, গত শুক্রবার কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ মো. আব্দুল্লাহ তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও ৭নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র দলবল নিয়ে বাসার সামনে মহড়া ও হত্যার হুমকির অভিযোগ মামলা করেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সায়ীদকে নির্বাচন থেকে সরাতে তিনি সহযোগীদের নিয়ে মহড়া দেন। প্রার্থীর বাসার সামনে সশস্ত্র মহড়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ মামলায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ৩জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে ভিডিও ফুটেজে দেখা আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি। গ্রেফতার হয়নি মূল অস্ত্রধারীও।
এদিকে রোববার রাতে করা মামলায় শাহানুর আলম উল্লেখ করেন, আসন্ন নির্বাচনে তিনি নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থীর পক্ষে গঠিত গৌছ উলুম জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা, পশ্চিম পীরমহল্লা ভোট কেন্দ্র কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পাশাপাশি তিনি কাউন্সিলর প্রার্থী ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আফতাবের প্রচারে সম্পৃক্ত রয়েছেন। ৬ জুন রাত ৮টায় প্রচার কার্যক্রম শেষে তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুলের সঙ্গে সুবিদবাজারে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন এবং প্রচারের দিকনির্দেশনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর ৫০০ পোস্টার সংগ্রহ করেন।
এ পোস্টারগুলো ৭নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে লাগানোর কথা ছিল উল্লেখ করে শাহানুর মামলায় অভিযোগ করেন, সুবিদবাজার থেকে ফেরার সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে কাউন্সিলর প্রার্থী সাঈদ মো. আবদুল্লাহর নেতৃত্বে ৩৫-৪০টি মোটরসাইকেল তাকে ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ বলে ধাওয়া দেয়। একপর্যায়ে হকিস্টিক, লোহার রডসহ লাঠিসোঁটা দিয়ে রাস্তায় ফেলে মারধর করে ডান হাত ভেঙে ফেলে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে পালিয়ে যায়। এরপর আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। বর্তমানে তিনি ওসমানী হাসপাতালের ৯নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।
এদিকে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র মহড়ার ঘটনা আড়াল করে সাধারণ ভোটারদের মাঝে বিভ্রান্তি ও কর্মী সমর্থকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়াতেই ৭ দিন পর কাল্পনিক ঘটনায় ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, রোববার রাতে মামলা হয়েছে আর ভোরেই আমার ২ জন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ এমন ঘটনার সাথে আমি দূরে থাক আমার একজন কর্মী সমর্থক জড়িত থাকার প্রশ্নই আসেনা। এমনকি মামলায় যে সময় ও স্থানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেই সময়ে আমি কোথায় ছিলাম তা আমার বাসার সিসি ক্যামেরা দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। এমনকি যে স্থানে হামলার কথা বলা হয়েছে সেই স্থানের আশেপাশেও অনেক সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সুতরাং এই মামলা যে শতভাগ বানোয়াট তা নিয়ে ন্যুনতম সন্দেহের অবকাশ নেই। যেখানে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের কারণে আমি প্রচারণা পর্যন্ত চালাতে পারছিনা আমার কর্মী সমর্থকরা ভোটারদের ঘরে যেতে পারছেনা। সেই আমাদের বিরুদ্ধে হামলার ঘটনায় মামলা হাস্যকর ছাড়া কিছু নয়।
তিনি বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটাররা শঙ্কিত। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী আমলে নিচ্ছেনা। ঘটনার ৭ দিনে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি, মূল অস্ত্রধারীসহ অন্যান্য আসামীরা গ্রেফতার হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়।
শেয়ার করুন