মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় বেশ কিছু অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। তবে,দুইটি স্থানকে ঘিরে পর্যটকেদের মনের ভিতর ব্যপকভাবে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।
অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রের নাম হচ্ছে কাটাইলিয়া লেক ও চায়ের রাজ্যে ছোট্ট সাজেক। এই দুটি স্থানে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের আগমন বাড়ছেই।
‘চায়ের রাজ্যে ছোট্ট সাজেকে’ শীতকালে পর্যটকের আগমন বেশি থাকে। উপজেলার হিংগাজিয়া চা-বাগানের ১০ নম্বরে গিয়ে দেখা যাবে চোঁখ জোড়ানো দৃশ্য। চায়ের সমাহারে উঁচু পাহাড়ের এক প্রান্তে কাঠ এবং লাল টিন দিয়ে তৈরি একটি ঘর। নীল আকাশের নিচে এই ঘরের মধ্যে বসে প্রকৃতির অপুর্ব রূপ দেখা যায়।
সেখানে ছোট-বড় সবুজ পাহাড় দেখতে বেশ ভালোই লাগে। শীতকালে কুয়াশায় ঘেরা একটি থেকে আরেকটি পাহাড়ের মাঝে যেন আটকে থাকে সাদা মেঘের ভেলা। এ যেন একটি স্বপ্নের দেশ! স্নিগ্ধ হিমেল হাওয়া, পশ্চিমে রক্তিম আকাশ আর পাহাড়ের নির্মল সবুজ মিলেমিশে একাকার। পাহাড় থেকে ভেসে আসে নানান প্রজাতির পাখির কোলাহল মনকে প্রফুল্ল করে তুলে। এই সৌন্দর্যের রাজ্যে না হারিয়ে উপায় নেই। এখানে কখন যে সময় গড়িয়ে যায় তার হিসাব থাকেনা। হিসাব রাখার দরকারও পড়ে না।
প্রথমবার গিয়ে মনে হবে অনন্তকাল থাকা যাবে এমন পরিবেশে। নতুন করে যোগ হয়েছে নতুন ছোট্ট দুটি লেক। এটি যেন সুন্দর্যের মাত্রাকে আরও রাঙিয়ে তুলেছে।
চা-বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য্যের ভিতর দিয়ে যেতে হয়। বাগানের ভিতর উচু টিলায় চা শ্রমিকরা চা পাতা তুলতে দেখা যায়। দেখা যায় ঝরা পাতায় রাবার বাগানের অপরুপ দৃশ্য। রাস্তায় পাওয়া যায় বানরের পাল, গাছের এক ডাল থেকে আরেক ডালে লাফাচ্ছে। বানর (মা) তার ছোট বাচ্চাকে পিঠের উপর বসিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়া মানুষকে দেখে ভয়ে পালিয়ে যায়। এ যেন সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার এক বাস্তব উদাহরণ।
সবুজের গালিচা বিছানো চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমী যে কারো মনকে আন্দোলিত করবে। সবুজ চায়ের ঘ্রাণ মনটাকে প্রফুল্য করে তুলবে। তখন মনের অজান্তেই গুনগুনিয়ে উঠবেন-ও পাহাড়িয়া মন, ও বাগানিয়া মন।
উপজেলার আরেকটি সম্ভাবনাময় পর্যটক স্থান হচ্ছে হিংগাজিয়া চা বাগানের মধ্যে থাকা ‘কাটাইলিয়া’। কেউ কেউ নামও দিয়ে দিয়েছেন ‘কাটাইলিয়া লেক’। এই কাটাইলিয়া লেকে শীতে ফুটে চোখে লাগার মতো লাল শাপলা ফুল।
সেখানে চারিদিকে পাখির কোলাহল শুনা যায়, পাড়ে ঘুরতে থাকলে হঠাৎ দেখা যেতে পারে বানর। চা-বাগানের গাছের এ ডাল থেকে অন্য ডালে লাফাতে দেখলে বেশ ভালোই লাগে। সন্ধ্যা নামলে শিয়ালের পাল দেখা যায়৷ তাছাড়া রয়েছে দেশীয় নানা প্রজাতির পাখির আনাগোনা। এটি আশপাশের পরিবেশ আর গ্রামগুলোকে মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই দুটি স্থান ঘুরার জন্য এখন অনেক মানুষের আগমন ঘটে। দিনদিন সংখ্যা বেড়েই চলছে। দর্শনার্থীরা আসলে প্রান ফিরে পায় এই স্থানগুলি।
প্রকৃতিপ্রেমী ও সাংবাদকর্মী কামরান বলেন, অপার সৌন্দর্যের ভরপুর কুলাউড়া উপজেলা। সম্ভাবনাময় এবং যেসব পর্যটন কেন্দ্রে আছে সবকটিকে বাচিয়ে রাখতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সেইসাথে জনসাধারণের ভিতর সচেতনতার তৈরি করে আরও সচেতন হতে হবে। তবেই পর্যটন স্থানগুলোকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করি৷
পরিবেশ কর্মী খোর্শেদ আলম বলেন, চারপাশের পরিবেশেকে ভালো রাখতে এসব স্থানগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হবে। দিন দিন হারিয়ে যাওয়া জাতীয় ফুল শাপলা’কে টিকিয়ে রাখতে এই ধরনের লেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
শেয়ার করুন