কেন ঘোষণা দিয়েও শুরু হলো না কিনব্রিজের সংস্কার কাজ

সিলেট

আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো সংস্কার কাজের জন্য মঙ্গলবার থেকে দুই মাসের জন্য কিন ব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে মঙ্গলবার যথারীতি সচল ছিলো এই সেতু। যান চলাচলও স্বাভাবিক ছিলো।

ঘোষণা দিয়েও কিনব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করতে না পারায় জরাজীর্ন এই সেতুর সংস্কার কাজও পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কেন ঘোষণা দিয়েও কিনব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হলো না? এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতার কারণেই এমনটি হয়েছে।
কিনব্রিজের তদারককারি প্রতিষ্ঠান সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। আর সংস্কার কাজ করছে রেলওয়ের সেতু বিভাগ। এই দুই প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতার কারণে মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়েও মঙ্গলবার যান চলাচল বন্ধ করা যায়নি।

এ ব্যাপারে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার থেকে সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার কথা। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এখনো প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারেনি।

তিনি বলেন, মেরামত চলাকালীন ব্রিজ দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার কথা। রেলওয়ে বিভাগ আমাদের বললে আমরা ব্রিজ দিয়ে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দিব।

তবে রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবির আহমদ বলেন, সেতু দিয়ে যান চলাচলের বিষয়টি সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করে। তারা যান চলাচল বন্ধ করে আমাদের চিঠি দিলে আমরা সংস্কার কাজ শুরুর উদ্যোগ নেবো।

মঙ্গলবার বিকেলে কিনব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আগের মতো চলছে যানবাহন। ডথচারিরাও আগের মতোই হেঁটে পারাপার হচ্ছেন সেতু।

কিনব্রিজের উত্তর পারে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রের দায়িত্বে ছিলেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য জিষ্ণু সিংহ। তিনি বলেন, আমিও শুনেছি এই সেতু দিয়ে আজ থেকে যান চলাচল বন্ধ হবে। কিন্তু কেউ আমাদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেনননি। তাই আগেরমতোই দায়িত্ব পালন করছি।
এরআগে বাংলাদেশ রেলওয়ের পুর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জীষাণ দত্ত স্বাক্ষরিত এক নোটিশে জানানো হয়, ২৫ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিন ব্রিজ দিয়ে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকবে।

নোটিশে বলা হয়, সিলেটের ঐতিহাসিক এই সেতুতে অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচলের কারণে বর্তমানে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুটির কয়েক জায়গায় যানবাহনের ধাক্কায় গার্ড রেলিং, স্টীল ট্রাস বেঁকে গেছে। কয়েক জায়গায় স্টিলের পাত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকায় জরুরী ভিত্তিতে সেতুটি মেরামত করা প্রয়োজন। সংস্কারের জন্য আগামী ২৫ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিন ব্রিজ দিয়ে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এসময় জনসাধরণকে বিকল্প পথে যাতায়াতের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

তারও আগে আগে গত ১০ জুলাই সেতুটির সংস্কার কাজের সময় যান চলাচল বন্ধ রাখতে সিলেট মহানগর পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে পত্র দেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পুর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জীষাণ দত্ত।

জানা যায়, কিনব্রিজ সওজের নিয়ন্ত্রনাধিন হলেও লোহার তৈরি এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ে বিভাগের মাধ্যমে। লোহার কাঠামোর কাজে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ অধিক পারদর্শী। তাই কিনব্রিজ সংস্কার ও কিছু মেরামতকাজের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ের সেতু বিভাগই সংস্কার কাজ করবে।

সিলেটের পরিচিতির অংশ হয়ে ওঠা কিনব্রিজ নির্মান হয় ব্রিটিশ আমলে। টানা দুই বছর নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে  সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ হয় ‘কিনব্রিজ’। প্রায় নয় দশক ধরে সচল সেতুটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদীর ওপর প্রথম সেতু। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট।

দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে জরাজীর্ন এ সেতু। যান চলাচলেরও অনুপযোগি হয়ে আছে। তবু ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। কয়েকদফা সংস্কারের উদ্যোগ না হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, জরাজীর্ন কিনব্রিজ সংস্কারের বিষয়ে ২০২০ সালে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়। সেখানে সেতু সংস্কারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সওজের পক্ষ থেকে সেতুটি সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সওজ সিলেট অফিস। ওইবছরেরই জুনে বরাদ্ধের টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে নানা জটিলতায় আটকে যায়  সংস্কার কাজ।

সিলেট নগরের মাঝামাঝি এলাকার এই সেতুটি সড়ক ও জনপথ অধিপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধিন। তবে এটি দেখভাল করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়লে দুই দিকে লোহার বেষ্টনী দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে সিটি করপোরেশন। তবে নাগরিকদের প্রতিবাদের মুখে ৫২ দিন পর যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেয়া হয়।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, কিনব্রিজ সিলেট তথা দেশের একটি এতিহ্য। সিলেটের পরিচয়বহনকারী স্থাপত্য এটি। তাই এটি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে যানচলাচল বন্ধ করে ফুটওভার ব্রিজে (পদচারী-সেতু) রূপান্তর করার জন্য একটি প্রস্তাব আমরা ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সওজকে দিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, নাগরিকদের দাবির মুখে হালকা যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ঝুঁকি বিবেচনায় ভারি যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *