স্মরণকালে সবচেয়ে বড় সমাবেশ দেখাতে প্রস্তুত

রাজনীতি সিলেট

আর ছয়দিন পরই ১৯ নভেম্বর বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সমাবেশ। এ সমাবেশ সফলে প্রায় এক মাস ধরে প্রস্তুতি চলছে সিলেট বিএনপি পরিবারে। স্মরণকালে সবচেয়ে বড় সমাবেশ দেখাতেই এ প্রস্তুতি। বিভাগীয় নগরী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গাঁও-গেরামেও চলছে প্রচার-প্রচারণা, লিফলেট বিতরণ। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও ঘন ঘন ছুটে আসছেন সিলেটে। বৈঠক করছেন, দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীদের। তাদের আগমন ও নির্দেশনায় দীর্ঘদিন পর চাঙা সিলেট বিএনপি পরিবার। সমাবেশ সামনে রেখে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে শুরু হয়েছে মঞ্চ তৈরীর কাজও।

এমতাবস্থায় দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, গ্রেফতার, হয়রানির পাশাপাশি সভা সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী বলেছেন, ‘এতে করে সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে। সিলেট থেকে অতীতের সব স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে উঠেছে। এই সমাবেশ শুধু বিএনপির নয়, এটা নিপীড়িত মানুষের সমাবেশ।’

বিভাগীয় সমাবেশের আগে নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ের পাশাপাশি পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার আশঙ্কা করছেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় ও তৃণমূল নেতারা।

এধরণের পরিস্থিতি হতে পারে-এমন আশঙ্কায় ২/৩ দিন আগে থেকেই সমাবেশস্থলে অবস্থান নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন তারা।

সিলেট জেলা যুবদল সভাপতি অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম মোমিন বলেন, ‘কোনো বাধাই নেতাকর্মীদের আটকাতে পারবে না। সাধারণ মানুষ মুখিয়ে রয়েছেন সমাবেশে যোগ দিতে। মানুষের সাড়া দেখে মনে হচ্ছে, গোটা শহরটাই সমাবেশে রূপ নেবে। সমাবেশের কয়েক দিন আগে থেকেই বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা সিলেট আসবেন। আর এ লক্ষ্যে আমরা তাদের থাকার জন্য নিজেদের বাসাবাড়ি খালি করছি।’

বিএনপি নেতা আবদুল আহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, ‘কোনো বাধাই জনস্রোত আটকাতে পারবে না। সমাবেশে বাধা এলে প্রয়োজনে আগে থেকেই নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে অবস্থান নেব। যেকোনো মূল্যে সমাবেশ সফল হবে।’

সিলেট মহানগর বিএনপির ৫ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি সাদিকুর রহমান সাদিক বলেন, ‘নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। আমার বাসায়ও রাতে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। আমরা সহযোদ্ধা আ ফ ম কামালকে হারিয়ে শোকাহত। সমাবেশের কাজ নিয়ে প্রতিটি নেতাকর্মী ব্যস্ত। এ অবস্থায় পুলিশি হয়রানি কাম্য নয়।’

সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সহ গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আলী হায়দার মজনু বলেন, ‘সকল বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ঢল নামবে। প্রচার-প্রচারণা চালাতে গিয়ে এমন বাধ ভাঙা জোয়ার দেখা গেছে। মনে হচ্ছে- শুধু সমাবেশস্থল আলিয়া মাদরাসা মাঠ নয়, পুরো সিলেট নগরীতে সমাবেশের ব্যাপ্তি ছড়াবে। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জমায়েত হবে সিলেটে।’

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘সমাবেশের অনুমতি চেয়ে মাঠের কর্তৃত্বকারী সিলেট সিটি করপোরেশনে আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া আলিয়া মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এবং সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।’

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া, চলতি দায়িত্ব) সুদীপ দাস বলেন, ‘বিএনপি সমাবেশের ব্যাপারে আমাদের অবহিত করেছে।’

মঞ্চ তৈরী শুরু
সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সমাবেশস্থল নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে কাজ শুরু করেছেন শ্রমিকেরা।

গণসমাবেশ কেন্দ্র করে সিলেটে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। সমাবেশ সফল করতে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রস্তুতি বৈঠক, গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করছেন।

সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ভরে গেছে। মাঠের এক পাশে জড়ো করা হয়েছে বাঁশ ও কাঠ। ৩০ জন শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন।

সমাবেশের আগে রোববার সিলেট নগরীর আম্বরখানা বড়বাজারে বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামালকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার সঙ্গে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে বিএনপি।

তবে পুলিশ বলছে, এ হত্যাকান্ড মূলত ব্যবসায়িক বিরোধ থেকে সংগঠিত। কামাল হত্যার পর নগরীতে বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এসময় নগরীর রিকাবিবাজার ও চৌহাট্টা এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলন উপলক্ষে নির্মিত তোরণ ও ফেস্টুন ভাঙচুর করা হয়। এসব তোরণ ও ফেস্টুনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ছিল। এছাড়া দু’টি মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে রাতেই মাঠে নামেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া ছাত্রলীগ। এসময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ এসে নিয়ন্ত্রনে আনে। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি অবমাননা ও ভাঙচুরের অভিযোগ এনে মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় কারো নামোল্লেখ না করা হলেও ২৫জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এ ঘটনায় চারজন আটক করা হলেও এ মামলায় কাউকে গ্রেফতার দেখায়নি পুলিশ।

এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালে বিএনপির পাঁচটি বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার ফরিদপুরে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি সমাবেশের আগে পরিবহণ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ হয়রানি করবেনা বলে আশাবাদি : কাইয়ুম চৌধুরী
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, সমাবেশ সফলে আমরা ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছি। বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে কেবল নেতাকর্মীই নয়, সাধারণ মানুষেরও স্বতঃফূর্ত সমর্থন পাচ্ছি। গণসমাবেশ স্থল প্রস্তুতেও কাজ করছে। চলছে। শত প্রতিক‚লতার মাঝেও নেতাকর্মীরা সমাবেশ সফল করবেন আশাবাদি।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ১৯ তারিখ পুরো সিলেট নগরী একটি সমাবেশস্থলে পরিণত হবে। এরইমধ্যে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ কমিশনারকেও লিখিতভাবে সমাবেশের বিষয়টি অবহিত করেছি। নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ের বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই। তবে অজ্ঞাত আসামি দিয়ে মামলা হলেও নেতাককর্মীদের অহেতুক হয়রানি করা হবে না, এমনটি আশাবাদি তিনি।

পরিবহণ ধর্মঘট বা কর্মবিরতির কোনো তথ্য নেই: জিয়াউল কবির পলাশ
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগেই অঘোষিত ‘পরিবহণ ধর্মঘট’ দেখা গেছে। সিলেট বিভাগীয় সমাবেশের আগে একই পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন বিএনপি নেতারা। তবে, ১৯ নভেম্বর বা এর আগে সিলেটে কোনো ধরনের পরিবহণ ধর্মঘট বা পরিবহণ শ্রমিকদের কর্মবিরতির কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. জিয়াউল কবির পলাশ।

তিনি বলেন, এখনো একটি বৈঠক চলছে। কিন্তু পরিবহণ ধর্মঘট বা পরিবহণ শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে যাওয়ার কোনো খবর তিনি এখন পর্যন্ত তিনি পাননি। এ ধরণের কোনো সিদ্ধান্ত হলে গণমাধ্যমকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হবে।

আসামিদের গ্রেফতার করা পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক : এসএমপি কমিশনার
বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ সামনে রেখে নেতাকর্মীদের বাসা বাড়িতে পুলিশি অভিযানের অভিযোগ তুললেও তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার নিশারুল আরিফ।

তিনি বলেন, আসামিদের গ্রেফতার করা পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক। তবে অহেতুক কাউকে হয়রানি করা পুলিশের উদ্দেশ্য নয়।

সমাবেশে বিএনপির পক্ষ থেকে আবেদন করার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল নন জানিয়ে বলেন, আমি ঢাকায় ছিলাম ক্রাইম কনফারেন্সে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে সমাবেশের কোনো লিখিত আবেদন পাইনি। শুক্রবার অফিসে না থাকায় বিষয়টি সম্পর্কেও জানিনা। তবে আজ শনিবার অফিস করবো। তারা লিখিত আবেদন দিয়েছে কিনা তা দেখব।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *