স্টাফ রিপোর্টার:
‘আইইএলটিস’ কোর্স সম্পন্ন করে ‘কেয়ার বা ষ্টুডেন্টস’ ভিসায় যুক্তরাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। ফলে ‘কেয়ার বা ষ্টুডেন্টস’ ভিসার থাবায় বিশ্বনাথের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বেজেছে বারোটা! এমনকি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ওই সকল শিক্ষক-শিক্ষিকারা সরকারি চাকুরীতে কর্মরত থাকার পরও বিদেশে পাড়ি দিলেও কর্তৃপক্ষকে কিছুই জানানোয় প্রয়োজনই মনে করেন নি। এতে করে বিদেশে চলে যাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্কুলে ব্যাঘাত ঘটছে পাঠাদানে।
বিশ্বনাথ উপজেলা ও পৌর এলাকার কয়েক শতাধিক ব্যক্তি ‘আইইএলটিস’ কোর্স সম্পন্ন করে ‘কেয়ার বা ষ্টুডেন্টস’ ভিসায় সুবাদে ডিফেন্ডার হয়ে সিলেটীদের স্বপ্নের দেশ যুক্তরাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। আর তাদের মতো বিশ্বনাথের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে নাজুক করে ‘যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রে’ পাড়ি দেওয়ার তালিকায় রয়েছেন ১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাদের অনেকেই ‘শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বা অন্য পেশার ব্যক্তি’র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ডিফেন্ডার হয়ে যুক্তরাজ্যে গেছেন। তবে ওই ১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি ‘উপজেলা শিক্ষা অফিস’ অবগত না হওয়ায় না করেই অনানুমোদিত ভাবেই গোপনে চলে যান। ফলে বিশ্বনাথের ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘প্রধান ও সহকারী শিক্ষক’ পদ পদশুন্য হয়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিদেশ যাওয়া ওই ১১ জন শিক্ষক তাদেরকে কিছু না জানিয়ে প্রবাসে যাওয়ার বিষয়ে জানাতে পেরে উপজেলা শিক্ষা অফিস ইতিমধ্যেই লিখিতভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে বিষয়গুলো অবহিত করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য। আর এরই মধ্যে প্রবাসে যাওয়ার ফলে বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকা হেকুরাগাঁও-পাঠানচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা উম্মে হাবিবা ও বাহাড়া-দুবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা তাছলিমা আক্তার’কে চাকুরী চ্যুত করেছেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। চাকুরী চ্যুত হওয়া ওই ২ জন ছাড়া প্রবাসে যাওয়া বাকী ৯ জনের মধ্যে ৩ জন শিক্ষক ও ৬ জন শিক্ষিকা। আর ওই ৯ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা অনুপস্থিত থাকায় বিদ্যালয়ে পাঠদানে বিঘœতা সৃষ্টি হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপজেলা শিক্ষা অফিস লিখিত সুপারিশ রয়েছে সিদ্ধান্ত গ্রহনের অপেক্ষায়।
‘উম্মে হাবিবা ও তাছলিমা আক্তার’সহ উপজেলা শিক্ষা অফিসকে কিছুই না জানিয়ে গোপনে প্রবাসে যাওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অপর ৯ শিক্ষক-শিক্ষিকারা হলেন- টুকেরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রুহানা ইয়াসমিন, বরুনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সায়েদ খান, মিয়াজানেরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শিরিন বেগম, দ্বীপবন্ধ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ছাদিয়া বেগম, হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছাম্মত বেদানা বেগম, চারিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা কায়েলা বেগম, শাহজালাল পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফুলজাহান বেগম, পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জয়নাল উদ্দিন ও ধনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম শিবলী। এদের মধ্যে টুকেরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রুহানা ইয়াসমিন ও ধনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম শিবলী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ডিফেন্ডার হয়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন।
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা শিক্ষা অফিস তথা শিক্ষার সাথে সংশ্লিস্ট কাউকে কাউকে কিছুই না জানিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা গোপনে প্রবাসে চলে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এসকল শিক্ষক-শিক্ষিকারা অনানুমোদিত ভাবে প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি যে দিন থেকে তারা অনুপস্থিত আছেন, সেদিন থেকেই তাদের বেতনও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর ওই ১১ জনের মধ্যে ইতিমধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ২ জনকে চাকুরী চ্যুত করেছেন। বাকীদের ব্যাপারের করণীয় আদেশ কপি এখনও আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি।
শেয়ার করুন