ক্বিন ব্রিজ সংস্কার : ১ মাসে ৪০শতাংশ কাজ সম্পন্ন

সিলেট

সিলেটের সুরমা নদীর ওপর স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী ক্বিন ব্রিজের সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে সেতু প্রকৌশলী বিভাগ পূর্বাঞ্চল।গত ১৬ আগস্ট থেকে ১৫সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত ২ মাসের জন্য উত্তর ও দক্ষিণ সুরমার সংযোগকারী ব্রিজটির দুই প্রবেশ মুখে ব্যারিকেড দিয়ে সব ধরনের যানচলাচলসহ জনসাধারণের যাতায়াত বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ।এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় ব্রিজ দিয়ে যাতায়াতকারীদের।১ মাসের মধ্যে ব্রিজের উত্তর পাশের কাজ শেষ করে দক্ষিণ পাশে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও ১মাস ৪ দিনেও তা সম্ভব হয়নি।ব্রিজের পুরোপুরি কাজ শেষ করতে তিন মাস সময় লাগতে পারে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

ব্রিজের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।তারা বলছেন, ১ মাসে ৪০-৪৫ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছেন। দুই মাসের মধ্যে ব্রিজের পুরোপুরি কাজ শেষ না হলেও ওপরের অংশের কাজ শেষ করে মানুষ চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে ব্রিজটি।যাতে জনদুর্ভোগ না হয়।

জানা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন এই সেতুর সংস্কার কাজ করছে রেলওয়ে বিভাগ। ক্বিন ব্রিজটির মূল কর্তৃপক্ষ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। দেখভাল করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ।সওজের দেয়া বরাদ্দে সংস্কার কাজ শুরু করেছে রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ।

ঐতিহ্যবাহী ক্বিনব্রিজ সংস্কারের জন্য ২ বছরের বেশি সময় আগে ২ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সংস্কার কাজের জন্য প্রকৌশলী নিয়োগ দিয়েছে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ব্রিজের কাজটি করছে চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড় আইয়ু করপোরেশন।

সরেজমিনে ক্বিন ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এক সঙ্গে ৩০জন শ্রমিক কাজ করছেন। তারমধ্যে ব্রিজের ঢেউ প্লেটের কাজ করছেন কয়েকজন আর রঙের কাজ করছেন কয়েকজন। ইতোমধ্যে ব্রিজের উত্তর পাশের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ব্রিজের উত্তর পাশের ত্রিশটি জয়েজের মধ্যে ২০টির জয়েজ লাগানো হয়েছে।আর ঢেউ প্লেট লাগানোর কাজ চলছে।মধ্যখানে রেলিংয়ে রঙের কাজে শ্রমিকরা দ্রুতগতিতে কাজ করে যাচ্ছেন।

ব্রিজের কাজে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংস্কারের জন্য ব্রিজ বন্ধের আগেই শ্রমিকরা চলে আসে এবং তাদের কাজের প্রস্তুতি নেয়।ব্রিজ বন্ধের প্রথম দশদিন বৃষ্টিসহ নানা কারণে ব্রিজের উপরে কাজ করতে পারেননি ঠিকদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা।ফলে এক মাসের মধ্যে পুরোপুরি কাজ শুরুর ২০দিনে ৪০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পেরেছেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড় আইয়ু করপোরেশনের সুপারভাইজারের দায়িত্বে থাকা নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, ব্রিজটির সংস্কার কাজের ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। রঙের কাজ দ্রুত এগিয়েছে। তবে, ম্যাকানিকাল কাজ একটু পিছিয়ে আছে।একমাসের ভেতরে দক্ষিণ পাড়ে আসার কথা ছিলো।কিন্তু বৃষ্টিসব কিছু মিলিয়ে পিছিয়ে রয়েছে।দু’মাসের ভেতরে ব্রিজের ওপরের সব কাজ শেষ করতে পারবেন বলে মনে করছেন। আর ৩মাসের মধ্যে পুরো ব্রিজের কাজ শেষ হয়ে যাবে।

তিনি আরও জানান, ব্রিজের উপরের কাজ শেষ করে সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য ব্রিজ খুলে দেয়া হবে। কিন্তু কোনো গাড়ি চলাচল করতে দেয়া হবে না। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা আমাদের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তার এব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।

এ বিষয়ে ব্রিজের কাজের ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা শিপন আহমদ বলেন, প্রথম দশদিন ব্রিজের কাজ করতে পারিনি।২০দিন থেকে পুরোদমে কাজ চলছে।তবে মাঝেমধ্যে বৃষ্টির জন্য কাজের গতি কমে যায়।আগামী সপ্তাহ থেকে আশা করছি দক্ষিণপাশের কাজ শুরু করতে পারবো।

এব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম সেতু প্রকৌশলী(পূর্ব) জীষান দত্তের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য- ব্রিটিশ আমলে লোহার কাঠামোর দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটি নির্মাণ করেছিল রেলওয়ে বিভাগ। টানা দুই বছর নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ হয় ‘ক্বীন ব্রিজ’। প্রায় ৯ দশক ধরে সচল সেতুটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদীর ওপর প্রথম সেতু। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট। মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেতুটি ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রথম দফা সংস্কার করেছিল। এরপর আর বড় ধরনের সংস্কার হয়নি।

 

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *