গোয়াইনঘাটে বৃষ্টির পানিতেই ধ্বসে গেল ২১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সুইস গেট

সিলেট

তানজিল হোসেন, গোয়াইনঘাটঃ সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের পূর্ব তারুখাল গ্রামের মরাখালের উপর ২১লক্ষ ১১ হাজার ২৬০ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সুইস গেইট একরাতের বৃষ্টির পানিতে ধ্বসে পড়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কাজের অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, ২১ লক্ষ ১১হাজার টাকা ব্যয় করে মানসম্মত একটা বাড়ি নির্মাষ করা যায়! কিন্তু এটা কেমন সুইচ গেইট এর আগে কোথাও দেখি নি। এ ঘটনায় উপজেলা জুড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।

জানা যায়, গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের বাস্তবায়নে এবং উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্প (ইউজিডিপি)’র আওতায় উপজেলার ০২ নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের পূর্ব তারুখাল গ্রামের মরাখালের উপর কৃষি আবাদ বৃদ্ধির লক্ষে শুকনো মৌসুমের পানি ধরে রাখতে ২১লক্ষ ১১হাজার ২৬০টাকা ব্যয়ে এই সুইস গেইট নির্মাণ করা হয়। সুইস গেইট নির্মাণ কাজ পরিপূর্ণ শেষ হলে গত ২৬ মে দুপুরে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ ফারুক আহমদ নির্মাণ হওয়া সুইস গেইট পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শনকালে ফারুক আহমদ জানান, এ সুইচ গেইটের আওতায় আশপাশের প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমি শুকনো মৌসুমে চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসতে পারবে কৃষকেরা এবং প্রায় ২৫০ কৃষি সংশ্লিষ্ট পরিবার এই সুইচ গেইটের উপকার ভোগ করতে পারবেন। চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ পরিদর্শনকালীন প্রকাশিত সংবাদে আরো জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) তাহমিলুর রহমান মহোদয় ও উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের অক্লান্ত পরিশ্রমের ধারা এই কাজের গুণগত মান উন্নয়ন করে এই সুইচ গেইট টি নির্মাণ করা হয়েছে। এখন এই সুইস গেইটের সুফল ভোগ করবেন ঐ এলাকার কমষকেরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ কৃষি বিপ্লবের জন্য এবং স্থানীয় কৃষকদের পানির সমস্যা দূরীকরণে এই সুইচ গেইট নির্মাণ করা হয়।

এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এমপি’র প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ঐদিন দিবাগত রাতে বৃষ্টি হলে ২১ লক্ষ টাকা ব্যয়ের এবং উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের অক্লান্ত পরিশ্রম ও কারিগরি সহায়তার প্রতিফলন জনসম্মুখে প্রকাশ পায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৃষ্টির পানিতে সুইচ গেইট ধ্বসে পড়েছে খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে জানান, গতকাল ২৬ মে বিল দেয়ার লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদ কর্তৃক বাস্তবায়িত এবং উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্প ( ইউজিডিপি) এর আওতায় পূর্ব তারুখাল গ্রামে কৃষি আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুইচ গেইট নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করি। কিন্তু আজকে ফেসবুক বা অন্যান্য মাধ্যমে জানতে পারি সুইচ গেইটের পাশ দিয়ে পানির প্রবল চাপে মাটির বাঁধ ভেঙ্গে পানি বের হচ্ছে যা সুইচ গেইটের কোন ত্রুটির কারণে নয়। বিষয়টি জানতে পেরে আমি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে সরেজমিন পাঠিয়েছি তদন্ত করার জন্য। যদি সুইচ গেইটের ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে তাহলে বিল আটকিয়ে রাখা হবে কারণ এখনও বিলে স্বাক্ষর করা হয় নাই। আর যদি পানির চাপে মাটির অংশের সাইড ভেংগে থাকে তাহলে মেরামত করা হবে।

এই ঘটনার বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মামুন পারভেজ বলেন, এখানে অন্য কোন ত্রুটি নাই। আমাদের এলাকার মাটি বালুকাময় হওয়ায় সুইস গেইটের একটি সাইডে বৃষ্টির পানির চাপের কারণে কিছু অংশ ধ্বসে গেছে। এখানে কোন দুর্নীতি হয় নাই। এটির বিলও আটকে আছে। তিনি এই ঘটনার বিষয়টি আপাতত হাইড রাখার জন্য প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লোকমান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী লোকমান উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার সুইস গেইটটির প্রথম স্টিমিট পরিবর্তন করার কারণে এই ত্রুটি হয়েছে। প্রথম স্টিমিটে সুইস গেট লম্বা ছিল, তিনি দৈর্ঘ্য কমিয়ে প্রস্থ ২ ফুট উঁচু করায় যে সাইড থেকে দৈর্ঘ্য কমানো হয়েছে সেখানে বালু মাটি হওয়ায় ব্লকটি ভেঙে গেছে। তিনি বলেন, আমরা উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার সহ সবাই সরেজমিন বিষয়টি পরিদর্শন করবো।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের ব্যবহৃত সেলফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি প্রতিবেদকের কল রিসিভ করেন নি। এ জন্য তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *