স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট সিটি নির্বাচনে সাত নম্বর ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর বাসার সামনে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া ও হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার ভোরে নগরের বনকলাপাড়া ও হাজীপাড়ায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তবে গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি অস্ত্রধারী যুবক। উদ্ধার হয়নি আগ্নেয়াস্ত্র।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- নগরীর বনকলাপাড়ার নূরানী ৬৪/২ এর মফিজুর রহমানের ছেলে আতিকুর রহমান (৪২), একই এলাকার নূরানী ৮৩/৫০ মৃত আকরাম আলীর ছেলে জুবের আহমদ (৩৮) ও এয়ারপোর্ট থানাধীন হাজীপাড়ার নীলাচলের দুই নম্বর বাসার মিছির আলীর ছেলে নুরজ্জামান (৩৪)। তারা সকলেই মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাত নম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের অনুসারী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সুদীপ দাস বলেন, গ্রেফতার জুবের আহমদ ও নুরুজ্জামানের অস্ত্র নিয়ে মহড়ার বিষয়টি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার সিসিকের ৭ নং ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সায়ীদ মো. আবদুল্লাহর বাসার সামনে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার তিনটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলোর একটিতে বর্তমান কাউন্সিলর আফতাব হোসেনকেও ওই মহড়ায় দেখা গেছে।
শনিবার সিলেটে মতবিনিময়কালে সিইসির কাছে ওই অস্ত্র মহড়া ও আফতাবের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। এসময় তিনি বলেন, ঢাকায় গিয়ে কমিশন বসে তার প্রার্থীতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার ঘটনার চারদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো উদ্ধার হয়নি আগ্নেয়াস্ত্র। পাশাপাশি অস্ত্র হাতে থাকা ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ওরফে তুহিনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
একটি সূত্র জানিয়েছে, তুহিন কাউন্সিলর আফতাবের অস্ত্রধারী ক্যাডার হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তার বিরুদ্ধে জায়গা দখল, বাসা-বাড়ি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাইসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। র্যাব-পুলিশের হাতে কয়েকবার গ্রেফতারও হয়েছে। সর্বশেষ ওয়াকিটকি, বন্দুকসহ র্যাব ছাত্রলীগ নেতা তুহিনকে গ্রেফতার করে।
এদিকে গত মঙ্গলবার কাউন্সিলর আফতাব হোসেনর নেতৃত্বে অস্ত্র নিয়ে মহড়ার পর ছাত্রলীগ নেতা তুহিন এলাকায় অবস্থান করলেও বর্তমানে সে আত্মগোপনে রয়েছে। মহড়ার এই ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে নেতাদের পরামর্শে গ্রেফতার এড়াতে শুক্রবার সে আত্মগোপনে চলে যায়। তবে পুলিশ বলছে তাকে গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধার করতে অভিযান চলছে। এজন্য একাধিক টিম মাঠে রয়েছে।
পুলিশ ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ তার বাসার সামনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী আফতাব হোসেন খান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার পাশাপাশি ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ অভিযোগ দেওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে পুলিশ কমিশনারকে অনুরোধ করেন। এরপরই পুলিশ কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ মো. আবদুল্লাহর অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে। শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে এসএমপির এয়ারপোর্ট থানায় এ মামলা হয়েছে। এতে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খানকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ এবং আইনশৃঙ্খলা বিঘœনকারী অপরাধ (দ্রæত বিচার) (সংশোধন) আইন-২০১৯ অনুযায়ী, ত্রাস সৃষ্টি করে ভয়ভীতি ছড়ানোসহ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অপরাধে মামলাটি হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ বলেন, গত মঙ্গলবার আনুমানিক সকাল ৬টার দিকে বর্তমান কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেলে ২০ থেকে ২৫ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তার বাসার ফটকের সামনে আসে। এ সময় সন্ত্রাসীরা বন্দুক তাক করে তাকে (আবদুল্লাহ) ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেয়। পাশাপাশি ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আফতাব ঘুড়ি প্রতীক, সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ লাটিম প্রতীক ও মো. জাহিদ খান সায়েক ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছেন।
শেয়ার করুন