জলমগ্ন সিলেটে ফিকে ঈদ আনন্দ

সিলেট

টানা ভারি বৃষ্টিতে সিলেট নগরীতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে; তলিয়ে গেছে বেশিরভাগ এলাকা।

সোমবার ভোর থেকে সিলেটে ভারি বৃষ্টির সঙ্গে নামছে উজানের ঢল। ফলে সকালের মধ্যেই প্রায় সকল উপজেলায় বন্যা দেখা গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ঈদ আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে নগরবাসীর।

সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে দশটি উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার তিনটি নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৭৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

আার সোমবার সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

টানা ভারি বৃষ্টিতে সিলেট জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে নগরীর অন্তত ৫০টি এলাকায়। এসব এলাকার কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও কোমর পানি দেখা গেছে।
সকালে নগরীর সোবাহানীঘাট, যতরপুর, উপশহর, পাঠানটুলা, দরগামহল্লা, পায়রা, সুবিদবাজার বনকলাপাড়া, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, কাজলশাহ, মেডিকেল রোড, বাগবাড়ি, কালীবাড়ি, হাওলাদারপাড়া, তেরোরতন, সোনারপাড়া, কেওয়াপাড়া, সাগরদিঘিরপার, মিয়া ফাজিলচিশত, জালালাবাদ, হাউজিং এস্টেট, শাহি ঈদগাহ, ঘাসিটুলা, হাওয়াপাড়া, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, জামতলা ও তালতলা এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।

সোবাহানীঘাটের হোসেন মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “রোববার গভীররাতে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়; তখন থেকেই বাসায় পানি ওঠা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। ভোরের দিকে বাসায় পানি ঢুকে জিনিসপত্র সব ভিজে গেছে।

“সোমবার সকালে ঈদের নামাজে গিয়েছি ময়লা পানি মাড়িয়ে। কয়েকদিন পর পর এই দুর্ভোগ আর সহ্য হচ্ছে না।”

নগরীর উপশহর ডি ব্লকের আমিন চৌধুরী বলছিলেন, “একটু বেশি বৃষ্টি হলেই বাসায় পানি ঢুকে যাওয়ার ভয়ে থাকি। সকালে হাঁটুর বেশি পানি ভেঙে গিয়ে নামাজ পড়েছি।

পাড়ার অনেকের বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে দেখলাম। ঈদে আনন্দ কী করব? এখন পানি নিয়ে ব্যস্ত। কি আর করা।”

 

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটে তিনটি নদীর পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ও সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

“এছাড়া সিলেট জেলার সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে।”

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার ৫১২টি গ্রামের ১ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

এ পরিস্থিতিতে সিলেটের ১৩টি উপজেলায় ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

রাসেল বলেন, “বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী বিরতণ অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উপর সর্তক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। মেডিকেল টিমও গঠন করা হয়েছে।”

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *