জাকাত ব্যয়ের খাত

ইসলাম ও জীবন

আল্লাহতায়ালা জাকাত ব্যয়ের খাতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। জাকাতের সম্পদ ব্যয়ের খাত মোট আটটি।
সেগুলো হলো-
১. ফকির, যাদের নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই।
২. মিসকিন, যাদের কোনো সম্পদ নেই।
৩. যারা ইসলামি রাষ্ট্রের সরকারকর্তৃক জাকাত, সদকা, ওশর ইত্যাদি উসুল করার কাজে নিয়োজিত।
৪. ইসলামের দিকে ধাবিত করার জন্য জাকাত প্রদান ।

তবে এ খাতটি বর্তমান সময়ের জন্য নয়।
৫. নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ দাস-দাসী।

৬. পর্যাপ্ত পরিমাণ মাল না থাকার দরুন ঋণ পরিশোধে অক্ষম ঋণী ব্যক্তি।
৭. মুজাহিদ, যারা যুদ্ধের অস্ত্র যোগাতে অক্ষম অথবা টাকার কারণে হজের কাজ পূর্ণ করতে অক্ষম বা ইলম হাসিল ও দ্বীনি দাওয়াতের কাজে নিয়োজিত গরীব মানুষ।
৮. সফর অবস্থায় অভাবগ্রস্ত মানুষ।
মাসয়ালা কোনো ধনী ব্যক্তি যদি তার জাকাতের টাকা দিয়ে কোনো গরিবকে শিক্ষা অর্জন ও তাবলিগ ইত্যাদি দ্বিনি কাজে পাঠায়- তাহলে তার জাকাত আদায় হয়ে যাবে। অনেক আলেম বলেন, এসব ক্ষেত্রে বরং সে দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী হবে।

 

উল্লেখ্য, বর্ণিত খাতগুলোর মধ্যে জাকাত ইত্যাদি উসুলে নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া সব ধরনের লোক গরীব হওয়ার কারণেই জাকাত খাওয়ার উপযুক্ত। আর গরিবকে শর্তহীনভাবে জাকাতের অর্থ প্রদান জরুরি এবং সম্পূর্ণ মালিক বানিয়ে দেওয়া জাকাত আদায়ের পূর্বশর্ত। অতএব কাউকে কোনো কাজের জন্য জাকাতের টাকা দিয়ে বাধ্য করা উচিত নয়। বরং শর্ত করাও শরিয়তসম্মত নয়। -বাদায়েউস সানায়ে ২৪৫, ফাতহুল কাদির ২২০৫

মাসয়ালা জাকাতের টাকা পাওয়ার উপযুক্ত কোনো গরিবকে বিনা শর্তে ও বিনা স্বার্থে মালিক বানিয়ে দেওয়া- জাকাত আদায় হওয়ার জরুরি শর্ত। -তাবয়িনুল হাকায়েক ১৩০০

মাসয়ালা শরিয়তের বিধানমতে জাকাতের উপযোগী গরীব-অসহায় ব্যক্তিকে জাকাতের টাকার নিঃশর্তে মালিক বানিয়ে দেওয়া জাকাত আদায়ের পূর্বশর্ত। মালিক বানানো ছাড়া জাকাতের টাকা ব্যয় করা হলে জাকাত আদায় হবে না এবং ব্যয়কারী গোনাহগার ও দায়ী হবে। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১১৮৮, মাজমাউল আনহুর ১৩২৮

মাসয়ালা শরিয়তের দৃষ্টিতে জাকাত আদায় হওয়ার জন্য জাকাত পাওয়ার উপযোগী ফকির-মিসকিনকে নিঃস্বার্থে মালিক বানিয়ে দেওয়া পূর্বশর্ত। তাই জাকাতের টাকা দিয়ে গরিবদের ভরণ-পোষণ বাবদ খরচ করা যাবে। আর যে সমস্ত খাতে খরচ করলে গরিবদের মালিকানায় যায় না, যেমন- ঘর বানানো, পানি ও বিদ্যুৎ বিল, শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ইত্যাদি খাতে জাকাতের টাকা খরচ করা যাবে না। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১১৭০, আদ দুররুল মুখতার ২৩৪৪

মাসয়ালা কোনো সংগঠনকে দেওয়ার দ্বারা জাকাত আদায়ের শর্ত পূরণ হয় না, তাই জাকাত আদায় হবে না। -আদ দুররুল মুখতার ২৩৪৪, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১১৮৮

মাসয়ালা জাকাত আদায় হওয়ার জন্য জাকাত গ্রহীতা বালেগ হওয়া শর্ত নয়, বরং স্বেচ্ছায় খরচ করার বুঝ হয়েছে- এমন হলেই তাকে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, নাবালেগ ছেলের পিতা ধনী হলে ছেলেকে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না। -রদ্দুল মুহতার ২৩৪৯, ২৩৫৬

মাসয়ালা নিজের ঊর্ধ্বতন যথা বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি ও তাদের বরাবর উপরে এবং অধস্তন যথা ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি ও তাদের বরাবর নিচে কাউকে জাকাত দেওয়া যাবে না। স্বামী-স্ত্রী একে-অপরকে দিতে পারবে না। – ফাতহুল কাদির ২২০৮

মাসয়ালা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হলে ভাই-বোন, চাচা, মামা, ফুফু, খালা ও তাদের সন্তানদেরকে জাকাতের টাকা দিতে পারবে। -ফাতহুল কাদির ২২০৯, রদ্দুল মুহতার ২৩৪২

মাসয়ালা মেয়ের জামাই ও ভগ্নিপতিকে জাকাত দেওয়া যাবে, যদি সে জাকাতের উপযুক্ত হয়। -রদ্দুল মুহতার ২৩৪৬

মাসয়ালা জাকাতের টাকা দিয়ে ক্রয়কৃত জিনিস পরবর্তীতে নিজে নিসাবের মালিক হয়ে যাওয়ার পরও নিজে ব্যবহার করতে পারবে। -ফাতহুল কাদির ২২০৫

মাসয়ালা জাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দেওয়া জাকাত আদায়ের শর্ত। তাই মালিক না বানিয়ে দাওয়াত খাওয়ানোর দ্বারা জাকাত আদায় হবে না। -রদ্দুল মুহতার ২২৫৭

মাসয়ালা দোকান, কারখানা বা বাড়ির কর্মচারী যদি গরিব ও জাকাত নেওয়ার উপযুক্ত হয় তাহলে তাদের নিঃস্বার্থ জাকাত দেওয়া জায়েয হবে, অন্যথায় জায়েয হবে না। তবে তাদের জাকাত দেওয়ার কারণে তাদের প্রাপ্য নিয়মিত পারিশ্রমিকের মধ্যে কোনো ব্যাঘাত যেন সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ জাকাত দ্বারা কারো হক আদায় করা যায় না। বেতন যেহেতু চাকরিজীবীর প্রাপ্য হক, তাই জাকাত দ্বারা বেতনের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হবে না। -মুলতাকাল আবহুর ১২৮৪, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম ৬২৪৫

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *