জালালাবাদ পার্কে দিন-রাত অনৈতিক কাজ, সিসিকের ‘চোখ অন্ধ’

সিলেট

কিন ব্রিজ পেরিয়ে সিলেটের উত্তর সুরমায় প্রবেশ করলেই ডান দিকে চোখে পড়ে ‘জালালাবাদ পার্ক’। কিন্তু পার্কটি সিলেটবাসীর জন্য কোনো সময়ই স্বস্তির কারণে হয়ে উঠেনি। বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে শুরু থেকেই অবহেলিত থাকা ‘জালালাবাদ পার্ক’ এখন পুরোদমে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের আখড়া।

দিন ও রাতের সব সময়ই হয় মাদকসেবন, রাতে হয় অসামাজিক কাজ। তবে এসব বিষয় দেখার যেন কেউ নেই

মহানগরের কেন্দ্রস্থলে ৯৪ শতক জায়গার ওপর গড়ে ওঠা উদ্যানটির একদিকে সিলেট সার্কিট হাউস, আরেকদিকে জেলা পরিষদ। পাশেই ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রিজ ও আলী আমজাদের ঘড়িঘর। একসময় শুধু সীমানাপ্রাচীর-ঘেরা ছিল উদ্যানটি। পরে ফটক নির্মাণ করে হাঁটাচলার ব্যবস্থা করা হয়। কয়েক বছর আগে আগে শিশুপার্ক করার জন্য এ উদ্যানের চারদিকে তোলা হয় উঁচু দেয়াল। পরবর্তী সময়ে এখানে শিশুপার্ক নির্মাণ তো হয়-ই-নি, উল্টো দেয়ালবদ্ধ হওয়ায় উদ্যানটি হারায় তার স্বাভাবিক পরিবেশ এবং ভেতরে শুরু হয় অনৈতিক কর্মকাণ্ড।

জানা যায়, ২০০৫ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন জালালাবাদ পার্কের স্থলে ১৬তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিবাদ ও নগরবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ থেকে সরে আসে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। পরে জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে সংস্কার করে পার্কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

এরপর ২০১৬ সালে জালালাবাদ পার্ককে শিশুপার্কে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে নগর কর্তৃপক্ষ। সেই অনুযায়ী পার্কে শিশুদের জন্য বিভিন্ন রাইড স্থাপনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়। একই সঙ্গে উদ্যানের চারদিকে তৈরি করা হয় প্রায় ১০ ফুট উঁচু সীমানা প্রাচীর। তবে এর কিছুদিন পরই শিশুপার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সিটি কর্পোরেশন। এরপর থেকেই উদ্যানটির প্রতি আকর্ষণ হারাতে থাকে নগরবাসী।

 

২০২০ সলের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর বন্ধ করে দেয়া হয় এই পার্কটি। জানা যায়, পার্কটি মেরামত আর করোনা বিধিনিষেধের জন্য বন্ধ করা হয় তখন। তবে আজ অবধি খোলা হয়নি পার্কটি।

অভিযোগ আছে, পার্কের ভিতরে চলে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ। আড্ডা বসে মাদকসেবীদের। পার্ক বন্ধ থাকলেও পার্কের ভিতরে ভবনে থাকা পানির ট্যাংকি থেকে অঝরে পানিও পড়তে দেখা যায়।

স্থানীয়রা বলেন, ব্যস্ত নগর জীবনে মানুষের দম ফেলার জায়গা নেই। এমনিতেই নগরীর ভিতরে বিনোদন স্পটের অভাব। এর মধ্যে এই জালালাবাদ পার্ক দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ। ছুটির দিনে যতটুকুই সময় পাওয়া যায় এসব এলাকাতেই মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন। কিন্তু এটি বন্ধ থাকায় তাও সম্ভব হচ্ছে না। পার্কটি দ্রুত খুলে দেয়ার দাবি জানান তারা।

 

জালালাবাদ পার্কের কেয়ারটেকার দুলাল জানান, বিকালবেলা পার্কে নানা পেশা-শ্রেণির মানুষ এসে সময় কাটাতেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে পার্ক বন্ধ হলে এটি মাদকসেবীদের আস্তানায় পরিণত হয়। সিসিকের নির্দেশে পার্কটি এখনও বন্ধ।

এ বিষয়ে জানতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *