জুড়ীতে নদী ভাঙনে বিলীন ঘরবাড়ি

মৌলভীবাজার

দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা জুড়ী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকটি বাড়ি। নিজের পৈতৃক ভিটে মাটি ছেড়ে চলে গেছেন অন্যত্র অনেক মানুষ। তবুও যারা রয়েছেন স্বপ্ন দেখেন নিজের পৈতৃক ভূমিতে যেন নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়।

জানা যায়, জুড়ি উপজেলার পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের জুড়ীর পার নামক এলাকা দিয়ে ভারত থেকে নেমে আসা জুড়ী নদী বয়ে গেছে। নদীটির সর্বশেষ গতিমুখ হাকালুকিতে গিয়ে সমাপ্ত হয়েছে। বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পানি নদীর পারের উপরে দিয়ে যায়। এ সময় পাড় ভেঙে পাশে থাকা ঘরবাড়ি বিলীন করে নিয়ে যায়। একটু বেশি পরিমাণে বৃষ্টি হলে কার বাড়ি ভাঙে এই আতংকে থাকেন এলাকার বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে ১০-১২টি ঘরবাড়ি বিভিন্ন সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ মানুষ অন্যত্র চলে গেছেন।

এলাকার মানুষের কাছ থেকে জানা যায়, জুড়ীর পাড় নামক স্থানে প্রায় ৭০-৮০টি পরিবারের বাস। বিভিন্ন সময় নদী ভাঙেনে এ এলাকার বাসিন্দা মখলিছ মিয়া, আয়াজুল ইসলামের পূর্ব পুরুষদের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ার কারণে তারা অন্যত্র জমি ক্রয় করে নতুন করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তাদের মতো এ এলাকার এবাদুল্লাহ, সুলতান মিয়া, সুলেমান আহমদ, হাইবুন বেগম, ময়না মিয়া, দুলা মিয়ার বাড়ির সীমানাও এখন নদী গর্ভে। তাদের ঘরবাড়ির কোন অস্তিত্ব নাই। এলাকার মানুষ অনেকবার এ ব্যাপারে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিকে বলেও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের শরণাপন্ন হন। তিনি বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানালে সম্প্রতি নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন। এ সময় এলাকার প্রায় শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এই রাস্তা দিয়ে ৪-৫টি গ্রামের যাতায়াত হলেও মূলত জুড়ীর পার গ্রামের মানুষের যাতায়াতের প্রধান এবং একমাত্র রাস্তা এটি। জুড়ীর পার গ্রামে শখানেক বাড়ি রয়েছে।

শতোর্ধ বয়সের স্থানীয় বাসিন্দা মখলিছ আলী জানান, নদীর বর্তমান মধ্যখানে তাদের বাড়ি ছিল। আগে পানি আসলে বেটনের ঘর থাকার কারণে এলাকার কয়েকজনের সহযোগিতায় অন্যত্র সরিয়ে নিতেন। কিন্তু কয়েক বছর আগে তাদের ঘরবাড়ির জায়গায় নদী পথ করে নেওয়ায় তারা অন্য জায়গায় বাড়ি করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার ছিল এই এলাকার ইসলাম উদ্দীনের বিয়ে। এ উপলক্ষে তাদের রাস্তা নদী ভেঙে যাওয়ায় রাস্তার উপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। ইসলাম উদ্দিনের চাচা জালাল উদ্দিন (লালা মিয়া) জানান, আমাদের রাস্তা নদী নিয়ে গেছে। সচরাচর পাশের বাড়ির উঠানে দিয়ে চলাফেরা করলেও বিয়ে উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকার মানুষ আসবেন তাই সাঁকো করেছি। এতে প্রায় ৪০-৪৫ হাজার টাকার বাঁশ লাগছে।

স্থানীয় পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওবায়দুল ইসলাম রুয়েল জানান, নদী ভাঙন থেকে রাস্তা এবং গ্রামের ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য এ নদীর পারে ব্লক দেওয়া অথবা দ্রুত কাজে আসে (ইমার্জেন্সি প্রজেক্ট) এমন প্রকল্প নেওয়ার উচিত। বিষয়টি নিয়ে পাউবো কর্তৃপক্ষকে লিখিত আকারে আবেদন করেছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, নদীকে বর্ষাকালীন সময়ে পানির স্রোত বেশি থাকে। তাই নদীর গতিপথ বদলে যায়। পাশে থাকা ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যায়। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *