রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনের ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রেলভবনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
মন্ত্রী বলেন, ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভোরে বিমান বন্দর থেকে তেজগাঁও স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছাতেই আগুন দেওয়া হয়। এতে ট্রেনটির তিনটি কোচ পুড়ে গেছে এবং ৪ জন নিহত হয়েছে। এদের দুইজনের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। রেলের বিভাগীয় কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
এছাড়া দগ্ধ হয়ে নিহত ৪ জনের মধ্যে দুই জনের পরিচয় পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী। নিহতদের একজনের নাম নাদিয়া আক্তার পপি (৩২) এবং তার শিশু সন্তান ইয়াসিন (৩)। অন্য দু’জনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বারবার ট্রেনকেই টার্গেট করা হচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকে সহিংসতা শুরু হয়। তারা সপ্তাহে চার/পাঁচ দিন করে কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। এসময়ে রেলের ওপরে সবচেয়ে আক্রমণ হয়।’
‘গত ১৬ নভেম্বর টাঙ্গাইলে কমিউটার ট্রেনে দাঁড়ানো অবস্থায় আগুন দেওয়া হয়। ওই ট্রেনের ২টি কোচ পুড়ে যায়। একটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ট্রেনের ওপর এটি প্রথম সরাসরি আক্রমণ। এরপর ১৯ নভেম্বর সরিষাবাড়িতে দাঁড়ানো অবস্থায় আগুন দেওয়া হয় যমুনা এক্সপ্রেসে। সে ঘটনায় দু’টি কোচ পুড়ে যায়। এরপর ২২ নভেম্বর সিলেটে দাঁড়িয়ে থাকা উপবন এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়া হয়। সে ঘটনায় ১টি কোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এরপর ১৩ ডিসেম্বর গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে ২০ ফুট ট্রেনলাইন কেটে ফেলা হয়। এতে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের সাতটি বগি ছিটকে যায়। তাতে একজন নিহত হন, পঞ্চাশ জন আহত হোন। ওই দুর্ঘটনায় কোচ ইঞ্জিনসহ নিচে পড়ে ব্যপক ক্ষতি হয়। ট্রেনটি ধীরগতিতে চলেছিলো বলে তুলনামূলক ক্ষতি কম হয়েছে,’ বলে উল্লেখ করেন রেলমন্ত্রী। এরপর সর্বশেষ ১৯ ডিসেম্বর যে ঘটনা ঘটানো হলো তা আপনারা দেখছেন।
রেলপথমন্ত্রী আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মসূচি দেবে সেটা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারা কোন ধরনের কর্মসূচি হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১১ সালে অন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ রেলকে আলাদা করেছেন। রেল নিরাপদ একটি পরিবহন ব্যবস্থা। আমরা চেষ্টা করেছি নিরাপদ রেখে মানুষের কাছে ট্রেনকে জনপ্রিয় করা। সেজন্য আমরা অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছি। কক্সবাজারের সঙ্গে ঢাকার সরাসরি ট্রেন চালু করেছি। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ভাঙা পর্যন্ত ট্রেন চলছে।
১ জানুয়ারি থেকে খুলনা মোংলা যশোর ট্রেন চালু হবে। ১ জানুয়ারি থেকে আরেকটি ট্রেন চলবে কক্সবাজার রুটে। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারনে ট্রেনে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ট্রেনকে নিরাপদ করতে প্রত্যেকের সহযোগিতা চাই।’
রেলে সহিংসতা ফৌজদারি অপরাধ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ফিসপ্লেট তুলে ফেলার ঘটনায় পুলিশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে। রেল নিরাপদ রাখতে আমরা লাইন চেক করা বাড়িয়েছি। নাশকতা এড়াতে জেলা জেলায় বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি নিরাপত্তার জন্য। ২৭০০ পুলিশ চাওয়া হয়েছে, যা এখন প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু কেউ যাত্রী বেশে ট্রেনে চেপে সহিংসতা করলে, এটা নিরাপদ করা তো কখনো সম্ভব হবে না। এই পদ্ধতি কিভাবে ঠেকানো সম্ভব? গাজীপুরের ঘটনার পর পর রিজভী নিন্দা জানিয়েছেন। যখনই তারা রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছেন তখনই সহিংসতা ঘটছে। এতে কি বোঝা যায়? এসব ঘটিয়ে কি রেল বন্ধ করতে পারবে? যারা রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করছেন তারাই এসব ঘটিয়েছেন।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার রেল লাইন, সাড়ে ৩০০ এর উপরে ট্রেন চলে। দুস্কৃতিকারী যারা ধরা পরছে তারা বিএনপির কর্মী। তাদের নাশকতার শত শত প্রমাণ রয়েছে। এরপরও অসত্য কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য হচ্ছে না বোঝা যাচ্ছে।’ এসময় তিনি ট্রেনের ওপর সহিসংতা বন্ধের আহ্বান জানান।
শেয়ার করুন