তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সর্বত্র

জাতীয়

জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির ২ দিন যেতে না যেতেই সর্বত্র এর প্রভাব শুরু হয়েছে। তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হু হু করে বাড়ছে দূরপাল্লাসহ গণপরিবহনের ভাড়া। সিলেট থেকে আন্তজেলা ও দূরপাল্লার বাসের নতুন বর্ধিত ভাড়া নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী যাত্রী পরিবহন শুরু হয়েছে। ভাড়া নিয়ে বাস কাউন্টারে যাত্রী ও কাউন্টার কর্তৃপক্ষের মাঝে বাক বিতন্ডার ঘটনা ঘটছে।
একই সাথে পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে তরকারি ও মাছ সহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম। সিলেটের বাহির থেকে রোববার আসা প্রায় সকল পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে ভোগান্তিতে পড়েছেন জনসাধারণ।
শুক্রবার দিবাগত রাতে তেলের দাম বাড়ানোর পর থেকেই সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় শুরু হয়। শনিবার দিনভর সিলেট বিভাগজুড়ে সকল রুটেই চলে মর্জিমাফিক অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিযোগিতা। অনেক পরিবহন কোম্পানী তাদের বাসও বন্ধ রাখে। আবার অনেক বাস যাত্রীদের অনুরোধে বাড়তি টাকা নিয়ে সিলেট ছেড়ে যায়।
জানা গেছে, শনিবার সিলেট সুনামগঞ্জ রুটে ২০ টাকা বর্ধিত করে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী সিলেট-সুনামগঞ্জ ১৪০ টাকা ও সিলেট-দিরাই ১৬০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ হয়। এছাড়া সিলেট-সুনামগঞ্জ এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ হয় ১৯০ টাকা।
এদিকে সিলেট-মৌলভীবাজার রুটে নতুন বর্ধিত ভাড়া নির্ধারণ হয়েছে ১৪০ টাকা। সিলেট-হবিগঞ্জ বাইপাস রুটে বর্ধিত ভাড়া ২২০ টাকা করা হয়েছে। সিলেট-জকিগঞ্জ রুটে নতুন ভাড়া নির্ধারণ হয়েছে ১৯৮ টাকা।
সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাস ভাড়া নিয়ে শুরু হয়েছে বিভ্রান্তি। এনা বর্ধিত ভাড়া ৬৮০ টাকা নির্ধারণ করলেও হানিফ, শ্যামলী সহ অন্যান্য বাস যাত্রীদের কাছ থেকে ৭০০ টাকা আদায় করছে।
এ ব্যাপারে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিলেটের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. জিয়াউল কবির পলাশ দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আন্তজেলা রুটে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী যাত্রী বহন করা হচ্ছে। দূরপাল্লার বাসের ক্ষেত্রে কিলোমিটারের হিসাবজনিত গড়মিলের কারণে ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে ভিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। শীঘ্র্ই দূরপাল্লার বাসের ভাড়া সমন্বয় করা হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সিলেট টু দিরাই নতুন হিসাবে ভাড়া ১৬০ টাকা, একই সাথে সিলেট টু সুনামগঞ্জ রুটে ১৪০ টাকা নির্ধারণ করেছি। সে অনুযায়ী যাত্রী বহন করা হচ্ছে। প্রথম প্রথম যাত্রীরা ভাড়া নিয়ে একটু ঝামেলা করছেন কয়েকদিন গেলে অবশ্য এসব ঠিক হয়ে যাবে।
জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পণ্য আনতে যাওয়া সিলেটের ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ট্রাকপতি ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। কিলোমিটারের হিসাবে ট্রাকের ভাড়া নির্ধারণ করা নিয়ে ব্যবসায়ী ও ট্রাক চালকদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছেনা। অনেকেই বাধ্য হয়ে নতুন বর্ধিত ভাড়ায় পণ্য বহন করতে রাজী হয়েছেন। রোববার সকালে নগরীর কাচা বাজার এলাকায় তরকারি পরিবহনে আসা একাধিক ট্রাক ও পিকআপের চালক জানায়, তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে তাকে অতিরিক্ত আরো ২ হাজার টাকা আদায় করতে হয়েছে। সবজি ব্যবসায়ীগণ অতিরিক্ত ভাড়া দেয়ায় পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে সাধারণ জনগণের উপর।
রোববার নগরীর কয়েকটি সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একদিনের ব্যবধানে সবধরণের সবজিতে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ভারত থেকে আমদানী করা কাচামরিচ এখনো সিলেট না আসায় বাজারে কাচামরিচ ৩০০ টাকা কেজিতেই বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর কালিঘাট পাইকারী বাজারগুলোতে রোববার পর্যন্ত নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি না হলেও নতুন পণ্য পরিবহন হলে বাড়বে পণ্যের দাম। একাধিক ব্যবসায়ী জানান আমরা ঢাকা চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যে পণ্যবোঝাই ট্রাক ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায় ভাড়া আনতাম। সেই ট্রাকের ভাড়া এখন ১৮ থেকে ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। ফলে নতুন ভাড়ায় সিলেটে যেসব পণ্য আসবে স্বভাবতই এসব পণ্যের দাম বাড়বে।
এ বিষয়ে কালিঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জিয়া দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, এখন পর্যন্ত নিত্যপণ্যের দাম বাড়েনি। তবে নতুন বর্ধিত ভাড়ায় যেসব পণ্য সিলেটে আসবে সব পণ্যের মূল্য অবশ্যই বাড়বে। কারণ কেউ লোকসান দিয়ে পণ্য বহন করে এনে বিক্রি করবেনা। জ¦ালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব প্রতিটি সেক্টরে পড়েছে। সবচেয়ে বেশী প্রভাব পড়ছে নিত্যপণ্যের বাজারে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *