দখলে-দুষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে সোনাই নদী

হবিগঞ্জ

সোনাই নদীর তীরে গড়ে উঠেছে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা শহর। এক সময় সোনাই নদী দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করতেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। জেলেদের মাছধরাসহ নদীর পানি দিয়ে জমি চাষ করতেন চাষীরা। আজ অবৈধ দখল আর নদীতে ময়লা আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলার কারনে প্রসস্থ কমে গিয়ে খালে পরিনত হয়েছে এ নদী। ফলে বর্ষা মৌসুমে কিছু পানি থাকলেও শুকনো মৌসুমে তা বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয়।

ভারতের পশ্চিম ত্রিপুরা রাজ্যে পাহাড়ে সোনাই নদীর উৎপত্তি স্থল। দীর্ঘ ৫০ কিলোমিটার বয়ে চলেছে এই সোনাই নদী। উপজেলার ধর্মঘর, চৌমুহনী, বহরা ইউনিয়ন ও পৌরসভা হয়ে খাষ্টি নদীতে পতিত হয়ে মিলিত হয়েছে মেঘনা নদীতে। সোনাই নদী এখন দখলে দূষণে মরতে বসেছে। নদী পাড়ের মানুষ ও মাধবপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা নদীর মধ্যে বিভিন্ন ময়লা আর্বজনা ও দুষিত পদার্থ ফেলে নদীর পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছে।

বিভিন্ন স্থানে নদী দখল করে ঘর বাড়ি ও ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে তোলায় নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে। নদী থেকে একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে, যার ফলে নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। ফলে সোনাই নদীর উপর নির্ভর করা উপজেলার কৃষি অঞ্চলগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

এক সময় নদীতে চলতো লঞ্চ, ট্রলার, ছোট-বড় অসখ্য নৌকা। বর্তমানে নদীতে পানি না থাকায় জীর্ণ শীর্ণ ও মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর দু’কূল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি হলেও শুকনো মৌসুমে নদীতে পানি প্রবাহ নেই বললেই চলে।

এদিকে বাংলাদেশের সীমানা পেড়িয়ে ত্রিপুরার তেলিয়াপাড়া শহর ও তার আশপাশের শহরের পানি প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। যার কারনে সোনাই নদী আগে যে পরিমান পানি ও পলি বহন করে নিয়ে আসতো এখন তা নেই বললেই চলে।

স্থানীয়রা জানান, দূরের মানুষ ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য নৌযান দিয়ে মাধবপুরে মালামাল আনা নেওয়া করত। কিন্তু নদীর প্রতি মানুষের এখন আগের মতো ভালোবাসা নেই। যে যেভাবে পারে নদীকে ধ্বংস করে ফেলেছে। নদীপাড়ে দুর্গন্ধের কারণে যাওয়া যায় না।

স্থানীয়রা আরও জানান, মাধবপুরে গত কয়েকবছর ধরে অপরিকল্পিতভাবে শিল্প কারখানা গড়ে উঠায় শিল্প বর্জ্য নদীতে মিশে নদী নষ্ট হচ্ছে। নদীকে বাঁচাতে হলে পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপন করতে হবে।

উপজেলার চৌমুহনি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুজন মিয়া বলেন, নদী পাড়ে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠায় এখন সোনাই নদী দখল হয়ে গেছে। সোনাই নদীতে বাজার ও গৃহস্থালির বর্জ্য ফেলায় নদীর পানি কালো হয়ে গেছে। সোনাই নদীকে রক্ষা করতে সরকারের দায়িত্বশীল লোকদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশন আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জশাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, নদীর উপর ময়লা আবর্জনা ফেলা, নদী দখল ও নদীর মাঝখানে স্থাপনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, নদীর তলদেশে বিষাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্যরে স্তর পড়েছে। যদি এই সোনাই নদীরক্ষা করা না যায় তাহলে অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

সোনাই নদী দখল ও ময়লা ফেলার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সাবেক জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান আশ্বস্থ্য করলেও এখন পর্যন্ত সোনাই নদী রক্ষায় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

মাধবপুরবাসীসহ ভাটি অঞ্চলের কৃষকের প্রাণ সোনাই নদী রক্ষায় অচিরেই সকল প্রকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানান তারা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *