দুই দশকে জাফলংয়ে ৫৯, সাদাপাথরে ১১ পর্যটকের মৃত্যু

সিলেট

সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে এসে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেক পর্যটক। ধারাবাহিকভাবে এমন ঘটনা ঘটে চললেও পর্যটকদের নিরাপত্তায় নেয়া হচ্ছে না। সিলেটের প্রকৃতিকন্যা জাফলং ও সাদা পাথরে তীব্র স্রোত, চোরাবালি, নৌকাডুবি ও সাঁতার না জানার কারণে পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছেন পর্যটকরা।

একের পর এক এমন দুর্ঘটনা ঘটলেও তার দায় নিচ্ছে না কেউ। উল্টো পর্যটকদেরই দায়ী করছে কর্তৃপক্ষ।

পর্যটকদের নিরাপত্তায় গাইডলাইন না থাকা এবং তাদের ঠিকমতো সচেতন না করায় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সতর্কতা-সংবলিত সাইনবোর্ড, স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ, লাইফ জ্যাকেট প্রদানের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট ও থানা পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও মৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ঘেঁষা পর্যটনকেন্দ্র দুটি স্থানীয় পিয়াইন ও ধলাই নদীর সঙ্গে যুক্ত। গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তঘেঁষা পর্যটনকেন্দ্র জাফলংয়ে পাথর ও বালু উত্তোলনের ফলে অনেক স্থান মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।

গত দুই দশকে এখানে ৫৯ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তঘেঁষা সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রটি যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা দৃশ্যপট। ভোলাগঞ্জের ধলাই নদীর পাড়ে এ পর্যটনকেন্দ্রটি ৫-৬ বছর আগে পরিচিতি পায়। এর পর বাড়তে থাকে পর্যটকের সংখ্যা। এর মধ্যেই সেখানে মারা গেছেন ১১ পর্যটক।

এ ছাড়া জেলার আরেক জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র বিছনাকান্দিতে মারা গেছেন চারজন। এদের মধ্যে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন। নিহত অধিকাংশই সিলেটের বাইরের পর্যটক। সর্বশেষ ১ জুলাই সাদা পাথরে সালাম নামে এক যুবক এবং ৬ জুলাই জাফলংয়ে জাওয়াজ আল আরশ নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, পর্যটনকেন্দ্রগুলো নিয়ন্ত্রণে একক কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। রয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠানের অংশিদারিত্ব। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রের উন্নয়নসহ নানা দিক দেখাশোনা করে।

তাদের নির্দেশ অনুযায়ী, সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো পরিচালনা করছে পর্যটন উন্নয়ন কমিটি। এর সভাপতি জেলা প্রশাসক।

এ কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী, স্থানীয় প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন পদেক্ষপ নিয়ে থাকে, যদিও তা অপ্রতুল। এমনকি পর্যটকরাও সেসব নির্দেশনা মানেন না।

গত কয়েক বছর ধরে ট্যুরিস্ট পুলিশ যুক্ত হওয়ায় মূলত তারাই পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রধান ভূমিকা পালন করে আসছেন। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন থেকে পর্যটকের জন্য কিছু স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

পর্যটকদের অভিযোগ, একটি পর্যটনকেন্দ্রে কয়েক হাজার পর্যটক কোথায় ঘুরবে না কিংবা সাঁতার কাটবে না, তার নির্দেশনা দেন না দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট পুলিশ কিংবা স্বেচ্ছাসেবকরা। মাঝেমধ্যে মাইকিং এবং কয়েক জায়গায় সাইনবোর্ড টানিয়ে দায়িত্ব শেষ করা হয়।

শুক্রবার সাদা পাথরে ঘুরতে যাওয়া সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র মাহফুজ জানায়, পর্যটকদের নিরাপত্তায় কেউ আন্তরিক নয়। স্বেচ্ছাসেবক থাকলেও কেউ কোনো নির্দেশনা দিচ্ছে না। জেলা উন্নয়ন পর্যটন কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান জানান, তারা সাধ্যমতো পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন। অনেক পর্যটক নির্দেশনা না মানার কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন বলে জানান তিনি।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান বলে, বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যাতে কেউ গোসল করতে না নামেন, তা নিয়ে সতর্কতা-সংবলিত সাইনবোর্ড টানিয়ে রাখা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের অবগতির জন্য হ্যান্ডমাইক দিয়ে সর্বক্ষণ প্রচার চালান। কিন্তু অনেকেই তাতে কর্ণপাত করেন না।

জাফলংয়ের ট্যুরিস্ট পুলিশের ওসি রতন শেখ জানান, বিশেষ দিনগুলোয় এত পর্যটকের ভিড় হয়, ট্যুরিস্ট পুলিশের অল্প লোকবল দিয়ে তা সামলানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। অসেচতনতা ও নির্দেশনা না মানার কারণে মাঝেমধ্যে পর্যটকের মৃত্যু হয় বলে তিনি মনে করেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *