দুর্ঘটনাস্থল পরিণত হয় বিনোদন বা পর্যটন স্পটে!

জাতীয়

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বঙ্গবাজারের খবর সংগ্রহ করতে চানখারপুল হয়ে আমি যাই হানিফ ফ্লাইওভারে। তখন সেখানে উৎসুক জনতায় ভরে গেছে পুরো হানিফ ফ্লাইওভার। উৎসুক জনতার বেশিরভাগের হাতে মোবাইল।

কেউ ভিডিও করছেন, আবার কেউ সেলফিও তুলছেন। এর মধ্যে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মাইকে বারবার বলছেন, অগ্নি নির্বাপনের কাজে কেউ ব্যাঘাত ঘটাবেন না। সবাই অপ্রয়োজনে এখানে ভীড় করবেন না

আমি সেখানে দাঁড়িয়ে অনেককে অনুরোধ করলাম ভাই আমাকে একটু জায়গা দেন, আমরা সরাসরি লাইভে ঢুকবো। এক পর্যায়ে একজন জায়গা দিলেও এক হাত দিয়ে ধরে রাখে ফ্লাইওভারের রেলিং। আমি উনাকে সুধাইলাম- হাত দিয়ে রেলিং ধরে রেখেছেন কেন? তিনি জানাইলেন, আমার জায়গায় যদি অন্য কেউ ঢুকে পড়ে? তখন সম্মানিত নাগরিককে আবারও সুধাইলাম, আপনি কি ব্যবসায়ী? বললেন- না। জিজ্ঞাস করলাম, তাহলে এখানে কি করেন? উত্তরে বললেন, কামরাঙ্গিরচর থেকে আসছি আগুন দেখতে।

হানিফ ফ্লাইওভারের ওপরে কয়েকজন ব্যবসায়ীর ইন্টারভিউ নেওয়ার পর একজনের কাছে জানতে চাইলাম, আপনার কি বঙ্গবাজারে দোকান ছিলো? তিনি বললেন, আরে না- আমি তো অটো চালাই। তাহলে এখানে কি করছেন? কোত্থেকে এসেছেন? বললেন, নদীর ওইপাড় কেরানীগঞ্জ থেকে। উনাকে বললাম, আজকে অটো চালাবেন না? বললেন, না আইজকা আর অটো চালামু না। আগুন দেহুম। কি আজব…

এক পর্যায়ে পুলিশ হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর থেকে সকল উৎসুক জনতাকে নামিয়ে দিলেন। ফ্লাইওভারের দুই পাশে পুলিশ আটকে জন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এরপর ফ্লাইওভার বেঁয়ে লোকজন আসা শুরু হয়। একজন মাতুয়াইল থেকে এসেছেন আগুন দেখতে।

অগ্নি নির্বাপনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একবার পুলিশ, একবার সাংবাদিক, একবার ফায়ার সার্ভিসের কাছে গিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাচ্ছেন। রোজা রেখে প্রচন্ড রোদ আর আগুনের তাপের তীব্রতায় হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর টিকে থাকা দায়। এর মধ্যে ঐলোকের বিভিন্ন প্রশ্নে  বিরক্ত হয়ে জানতে চাইলাম, ভাই আপনার কাজ নাই কোন? উত্তরে তিনি বললেন, এতো বিরক্ত হোন কেন?

সম্প্রতি সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এমন ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি সায়েন্সল্যাব এবং গুলিস্তানে ভবন বিস্ফোরণের ঘটনায়। হায়রে উৎসুক জনতা। একটি দুর্ঘটনায় কতো মানুষ অসহায় হয়ে যান, আর এই উৎসুক জনতা সেলফি আর ভিডিও করতে যায়।

এ যেনো এক বিনোদন কেন্দ্র, কিছুক্ষণের জন্য অবকাশ করতে দুঘর্টনাস্থলে যায় মানুষ। ফায়ার সার্ভিসের কাজে বাঁধা দেয়। এর শেষ কোথায়? আমরা কি একটু বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন হবো না? অনুরোধ থাকলো- ভবিষ্যতে কোন দুর্ঘটনাস্থলে অহেতুক ভীড় করা থেকে বিরত থাকুন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্বিঘ্নে কাজ করতে দিন। সেলফি আর ভিডিও করে মানবিক পরিস্থিতিকে হাস্যকর করে তুলবেন না প্লিজ…

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *