ছাতক, দোয়ারাবাজার(সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের মঙ্গলপুর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি ( লিঃ) এর ব্যবস্থাপনা কমিটির বিরুদ্ধে এলাকার নিরিহ কৃষকদের একাধিক অভিযোগে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, সর্বশেষ,চলতি বছরের ৯ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন এলাকার কৃষকরা। এর আগে, ১০ এপ্রিল দোয়ারাবাজার উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা, ৬ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলা সমবায় কর্মকর্তা বরাবর ও এলজিইডি সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর পান্ডারগাঁও পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিঃ এর ব্যবস্থাপনা কমিটির বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য লিখিত অভিযোগ দেয় কৃষকরা। এর আগে, চলতি বছরের শুরুতে ১ জানুয়ারি মঙ্গলপুর সাব-প্রজেক্ট (পাবসস)লিঃ এর আওতাধীন বারিক পাইপ লাইন ব্লক বিচ্ছিন করার অভিযোগে এলজিইডি সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন এলাকার শতাধিক কৃষক।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,দোয়ারাবাজার উপজেলাধীন পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের মঙ্গলপুর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি (লিঃ) এর ব্যবস্থাপনা কমিটি নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে। সমিতিকে একটি গোষ্ঠি নিজস্ব সম্পত্তিতে পরিনত করেছে। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে সংগঠনের কার্যক্রমে স্থবিরতা সৃষ্টি করে বাপ-দাদার সম্পত্তির ন্যায় পকেট কমিটি বানিয়ে লুটপাট করছে দূর্নীতিবাজ একটি মহল।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হওয়া পান্ডারগাঁও পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি ২০২১-২২ সেশনের জন্য ২০২১ সালের ৫জুলাই দুই বছর মেয়াদি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। চলতি বছরের ৫ জুলাই কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও এখনো নতুন কমিটি করার কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি।
বর্তমান কমিটির সভাপতি রাকিব আলী,সাধারন সম্পাদক শামসুল ইসলাম নিজেদের মনমত করে পরিচালনা কমিটি বানিয়ে পোষ্ট মাষ্টার হেলালকে দিয়ে নিজেদের দখলে করে রেখেছেন সহ সভাপতির পদ। বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ও সাবেক সভাপতি হেলাল উদ্দিন পোষ্ট অফিসে চাকুরি করেও এই সমিতির সহ-সভাপতির পদ পদবী ব্যবহার করে সকল অনিয়ম দুর্নীতির জন্ম দিয়েছেন। শুরু থেকে উক্ত সমিতির সভাপতি পদ-পদবী ব্যবহার করে অনিয়ন দূর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে প্রচুর অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছেন।
তাদের এই অনিয়ম দূর্নীতির কারনে এলাকার সাধারণ কৃষকরা সরকারের দেওয়া বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সমিতির সভাপতি- সম্পাদক ও তাদের মনোনীত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাদের বিভিন্ন অনিয়ম – দুর্নীতির একাধিক খবর প্রকাশিত হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়,সিলেট বিভাগের আইডিএস, সদর দপ্তরের পানি সম্পদ প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরের সোসিওলজির সহকারী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে উপ-সহকারী প্রকৌশলী, সাধারণ ফ্যাসিলিটেটর সম্মুখে এলাকার প্রকৃত কৃষকদের সমিতির অর্ন্তভূর্তির লক্ষ্যে ৫০ জন কৃষকদের কাছ থেকে সদস্য ফরম পূরন বাবদ ৩২০ টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করলেও আদৌ তাদের সদস্য করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে জানানো হয়নি। সদস্য হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিভিন্ন টালবাহানা করে তা এড়িয়ে যাচ্ছেন কমিটির লোকজন। কমিটির মেয়াদ তিনবছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার যোগসাজশে
নতুন কার্যকারী কমিটি গঠনের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
কমিটির সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমিতির ৫০ পিছ ও ২টি পানির পাইপ যন্ত্রপাতি বিক্রি করে উক্ত টাকার হিসাব না দিয়ে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেছে। জমির প্রকৃত মালিকদের সদস্য না করে, যাদের কোন জমি নেই তাদেরকে সমিতির সদস্য করা হয়েছে।
এদিকে, সদস্য হতে চাদা দিয়েও সদস্য না হতে পারা একাধিক কৃষকের অভিযোগ, দোয়ারাবাজার উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কমিটির বার্ষিক অডিট নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সমিতির কার্যক্রম গতিশীল ও নতুন সদস্য ভর্তির জন্য বারবার বলার পরেও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার যোগসাজশে তা এড়িয়ে চলছে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক।
এমতাবস্থায়, প্রকৃত কৃষকদের স্বার্থ সু-বিবেচনায় দূর্নীতিবাজ,লুটেরাদের হাত থেকে মঙ্গলপুর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি (লিঃ) এর সকল অনিয়ম ও দূর্নীতির সঠিক তদন্ত পূর্বক নতুন সদস্য অর্থভূক্তির মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী কৃষকদের।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বিকালে পান্ডারগাঁও পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির কার্যালয়ে চলমান কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করে উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা। এতে আগামী কয়েকদিনের বিতরে একটি এডহক কমিটি করে পূর্নাঙ্গ কমিটির ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দোয়ারাবাজার উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা৷ আব্দুল হামিদ জানান,পান্ডারগাঁও মঙ্গলপুর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছে। তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জড়িত থাকার বিষয়টি ও দেখা হচ্ছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু জানান,আমি গত সপ্তাহে এসেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা সমবায় কর্মকর্তা বশির আহমদের মোবাইল নাম্বার- 01990653807 একাধিকবার কল দেওয়া হলেও কল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
শেয়ার করুন