ধর্মীয় বিদ্বেষের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস

জাতীয় বিশ্ব

সুইডেনে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় বিদ্বেষের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধানকে ধর্মীয় বিদ্বেষ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেতে বলা হয়েছে।

সেইসঙ্গে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সরকারকে নিজ নিজ দেশে বিদ্যমান আইন এবং এর ফাঁকফোকর পর্যালোচনা করে দেখতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে সেসব আইন খতিয়ে দেখতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে যা ধর্মীয় বিদ্বেষ প্রতিরোধ, বিদ্বেষমূলক কর্মকান্ডের বিচার এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ নিয়ে প্রচারে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। খবর আলজাজিরার।

গত মাসে সুইডেনে একটি মসজিদের সামনে বিক্ষোভ করার অনুমতি নিয়ে এক ব্যক্তি ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের উৎসব ঈদুল আজহার দিন রাজধানী স্টকহোমের ওই মসজিদের সামনে কোরআন পোড়ালে মুসলিম বিশ্বে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, তুরস্ক, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশ এ ঘটনার নিন্দা জানায়।

পাকিস্তান বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বিশেষ আলোচনার দাবি তোলে। গত মঙ্গলবার থেকে সেই আলোচনা শুরু হয়।

আলোচনায় মুসলিম দেশগুলোর তরফে বলা হয়, কোরআন মুসলিমদের কাছে একটি আবেগের বিষয়। কোরআন পোড়ানো মুসলিমদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে। ফলে এই ধরনের ঘটনা মেনে নেয়া যায় না।

ইউএনএইচসিআরের প্রধান ভলকার টার্ক বলেন, ‘মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ, ইসলামোফোবিয়া, ইহুদিবিদ্বেষ, খ্রিস্টানদের নিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। একইভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেমন আহামেদি, ইয়াজেদি, বাহাইদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ অন্যায়। এই সবকিছুই অন্যায় এবং বন্ধ করা প্রয়োজন।’

আলোচনা, শিক্ষা এবং ধর্মীয় আদানপ্রদানের মাধ্যমে হেট স্পিচ বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করেন টার্ক। এর জন্য সব দেশকে এগিয়ে আসতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

তার মতে, কোরআন পোড়ানোর ঘটনা সার্বিকভাবে বিদ্বেষ তৈরি করেছে, সহিংসতার জন্ম দিয়েছে এবং মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হেনেছে। এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত। এগুলি বন্ধ হওয়া দরকার।

পাস হওয়া প্রস্তাবে বৈষম্য, ঝুঁকি ও সংঘাত উসকে দেয় এমন ধর্মবিদ্বেষ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

এই প্রস্তাব ‘আইনত বাধ্যবাধকতা’র কোনো বিষয় না হলেও দেশগুলোর ‘দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ক্যামেরুন, চীন, কিউবা, ইরিত্রিয়া, গ্যাবন, গাম্বিয়া, ভারত, আইভরি কোস্ট, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মালাবি, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, পাকিস্তান, কাতার, সেনেগাল, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনাম।

বিপক্ষে ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কোস্টারিকা, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মন্টেনেগ্রো ও রোমানিয়া।

তবে ভোটে ‘অনুপস্থিত’ থেকেছে বেনিন, চিলি, জর্জিয়া, হন্ডুরাস, মেক্সিকো, নেপাল ও প্যারাগুয়ে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *