নগরের জলাবদ্ধতার কথা স্বীকার মেয়র আরিফের, দুর্ভোগ ঠেকাতে ৮ স্ট্রাইকিং টিম

সিলেট

স্টাফ রিপোর্টার : সম্প্রতি প্রবল বৃষ্টিতে সিলেট নগরীতে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এতে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নানা পদক্ষেপের কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা ঠেকাতে ৮টি স্ট্রাইকিং টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিম দিন কিংবা রাত, যেকোনো সময় অতিবৃষ্টি শুরু হলে পরিচ্ছন্নতা কাজের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে, তা স্বীকার করতে আমার কোনো অসুবিধা নাই। এবারে বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে গেছে। আমাদের ধারণা ছিল, দুই মাস আগে বৃষ্টি শুরু হবে। বঙ্গবীর রোডে যে জলাবদ্ধতা, তা আমাদের উন্নয়নকাজ চলাকালীন আগাম বৃষ্টি চলে আসায় সৃষ্টি হয়েছে। এবারের বন্যায় দলদলি বাগানের টিলা ধসেছে। যার ফলে পলি এসে আমাদের ড্রেন ভরে গেছে। আমাদের যে ছড়া-খাল বা ড্রেনের গভীরতা ছিল, একটানা বর্ষা মৌসুমে আমরা এগুলোতে কাজ করতে পারিনি। কারণ, বন্যা ছিল, বৃষ্টি ছিল।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে সিলেট নগরের অপরিকল্পিত উন্নয়নের বিষয়ে যে সমালোচনা হয়েছে সেটি সঠিক নয় বলে দাবি করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের উন্নয়নকাজের এক হাজার ২২৮ কোটি টাকার অপরিকল্পিত উন্নয়ন জলে গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে সেটি সঠিক নয়। এই টাকা সিটি করপোরেশন এখন পর্যন্ত পায়নি। সরকারি বরাদ্দের মধ্যে মাত্র ৩২৯ কোটি টাকা সিটি করপোরেশন পেয়েছে। সেটির উন্নয়নকাজ করা হচ্ছে। ঢালাওভাবে ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকার কথা বলা হচ্ছে সেটি সঠিক নয়।

তিনি বলেন, অপরিকল্পিতভাবে কিংবা মনগড়াভাবে উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে এমনটি নয়। মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয়নকাজ করা হচ্ছে। তবে এবার বর্ষা মৌসুম শুরুর দুই মাস আগে থেকেই বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কিছু কাজ বাকি রয়েছিল। ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ শেষ না হওয়ায় কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। গত তিনদিন আগে হঠাৎ করে প্রবল বর্ষণের কারণে নগরীর প্রায় সব এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়। যে কারণে আমাদের অনেকের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানি ঢুকে যায়। এর একটি সমস্যা হলো বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন। আবহাওয়ার বিরূপ কারণে প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে এই সমস্যা।

মেয়র বলেন, গত শনিবার দিনে অস্বাভাবিক তাপদাহের পর রাতে অল্প সময়ে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টির কারণে আকস্মিক দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে। সেই দুর্ভোগের শিকার আমি নিজেও। যদিও আমার বাসা নগরীর মধ্যভাগে উঁচু এলাকায়। শনিবার রাতে ১১টা ২ মিনিট থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ৫৮ মিনিটে ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ওইদিন মোট ৬ ঘন্টায় ১৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। যা সা¤প্রতিক সময়ে সিলেটে কম সময়ে বেশি বৃষ্টির রেকর্ড। এটিকে অতিপ্রাকৃতিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মেয়র আরিফ আরো বলেন, পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আমরা তাৎক্ষণিক সচেষ্ট হই। আবহাওয়া অফিসের আগাম সতর্কবার্তায় এই অতিপ্রাকৃতিক দুযোগ মোকাবেলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের সাথে মতবিনিময়ের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমন ঘটনা আরো ঘটতে পারে, সেদিক বিবেচনায় আমরা সিসিকে জরুরী সভার আয়োজন করেছি। এরই মধ্যে আমাদের করণীয় নির্ধারণ করেছি। দিন কিংবা রাত, যেকোনো সময় অতিবৃষ্টি শুরু হলে আমাদের ৮টি স্ট্রাইকিং টিম পরিচ্ছন্নতা কাজের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আমিসহ সকল কাউন্সিলর, কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ মাঠে থাকবো।

তিনি বলেন, আমাদের নাগরিকদের অনেকের সচেতনতার অভাব আছে। বাড়িতে যতো আবর্জনা আছে, কাপড় থেকে শুরু করে লেপ-তোষক সবই ড্রেনে ছেড়ে দিয়েছেন। সবমিলিয়ে ড্রেন বা ছড়ার যে নাব্যতা, সেটাও লোপ পেয়েছে। তারপরে আমাদের রাস্তাঘাট পরিষ্কার করি রাত ১২টার পরে। সেদিন যে বৃষ্টি হলো, রাত ১১টা থেকে। আমাদের কর্মীরা তখন কাজ শুরু করেনি। তখন পথচারীরা বা ব্যবসায়ীরা যেসব পলিথিন-টলিথিন রাস্তায় ফেলেছিলেন, সব গিয়ে ড্রেনের ছিদ্রগুলো বøক করে দেয়। পানি তখন কাটতে (নামতে) পারেনি। একদিকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে বøকের কারণে পানি ড্রেন দিয়ে নামতে পারেনি। জলাবদ্ধতা হওয়ার এটা অন্যতম কারণ।

সংবাদ সম্মেলনে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, সচিব ফাহিমা ইয়াসমিন, প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানসহ কাউন্সিলর এবং সিটি করপোরেশনের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *