নবীগঞ্জে পাহাড় ঘেঁষে ঝুঁকি নিয়ে বাস

হবিগঞ্জ

নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা, গজনাইপুর ও দেবপাড়া ইউনিয়ন নিয়ে দিনারপুর পরগনা গঠিত। যুগের পর যুগ ধরে এই পাহাড়ি অঞ্চলখ্যাত দিনারপুরে পাহাড়ের পাদদেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে আসছে কয়েক শতাধিক পরিবার।মুষলধারে বৃষ্টি হলে পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে, বিগত ১০ বছরে দিনারপুর পরগনা ও পার্শ্ববর্তী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি এলাকায় মাটি চাপা পড়ে দুটি পরিবারের ১২ জনসহ অন্তত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। লাগাতার মুষলধারে বৃষ্টি হলেই পাহাড়ধসের ঘটনা শুরু হয়।

সিলেট বিভাগের মধ্যে নবীগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পাহাড়ধসে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।নবীগঞ্জের দিনারপুর এলাকার পানিউমদাতে একই পরিবারের ছয়জন ও শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ে একই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যু এখনও এলাকার মানুষের কাছে এক ভয়াবহ দুঃস্মৃতি হয়ে আছে।এসবের বাইরে বিচ্ছিন্নভাবে পাহাড়ধসে দুই উপজেলায় এরই মধ্যে প্রায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তবুও ছিন্নমূল মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন।তাদের পুনর্বাসনে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করে সচেতন মহল।

জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাহাড় ও টিলা কেটে উজাড় করছে প্রভাবশালীরা। গত এক যুগে উপজেলার বেশকিছু সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কেটে সমান করা হয়েছে। ফলে এসব পাহাড় ও টিলাধসে মৃত্যুর ঝুঁকি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দিনারপুরের স্থানীয়রা জানান, পাহাড় ও টিলা বেশির ভাগই কাটা হয়েছে আবাসিক প্রকল্প, বাণিজ্যিক ভবন, মার্কেট কিংবা ব্যক্তিগত ঘরবাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে মাটি ভরাটের জন্য।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক নির্মাণকাজ শুরু হলে নবীগঞ্জের দিনারপুর অঞ্চলের পাহাড় কেটে উজাড় করে মাটি নেওয়া হয়। এসবপাহাড় ও টিলা কাটার ফলে দ্রুত প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। বিলীন হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, পরিবর্তন হচ্ছে ভূমিমাপের। এসব পাহাড় ও টিলা কেটে পাদদেশে নির্মাণ করা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িঘর।

ফলে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসে ঘটছে প্রাণহানি।পাহাড় ও টিলা নিধনের প্রতিবাদে এখন পর্যন্ত নবীগঞ্জে কোনো বড় ধরণের আন্দোলন হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঝেমধ্যে ট্রাক ও শ্রমিকদের আটক করলেও পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না। প্রকৃত অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এর ফলে নবীগঞ্জ উপজেলার পরিবেশ পরিস্থিতি এখন হুমকির মুখে।

পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে নবীগঞ্জের দিনারপুর এলাকার শত শত পাহাড় ও টিলা রক্ষায় প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছেন সচেতন সমাজের লোকজন।

রফিক মিয়া নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বাপদাদার আমল থেকে এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন তারা। কখন পাহাড়িধস ঘটে সে আতঙ্ক থাকে সবসময়।

পানিউমদা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইজাজুর রহমান বলেন, আমাদের পানিউমদা, গজনাইপুর, দেবপাড়া ইউনিয়ন নিয়ে দিনারপুর পরগনা গঠিত। নবীগঞ্জ উপজেলার একমাত্র পাহাড়ি অঞ্চল হিসেবে দিনারপুরে ধসের ঝুঁকি বেশি। তবে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে বসবাসকারীদের পুনর্বাসন করা প্রয়োজন।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন জানান,যদি এসব স্থানে কেউ বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন এবং পুনর্বাসনের জন্য আবেদন করেন তাহলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *