বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলতেই জেল হত্যাকান্ড: সৈয়দা জেবুন্নেছা হক

সিলেট

মানবতাবোধের চরম নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার সাক্ষী হচ্ছে ৩রা নভেম্বর জেল হত্যা দিবস। ৩রা নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে বেদনাবিধূর ও কলঙ্কময় এক দিন। দিনটি উপলক্ষে শুক্রবার (৩রা নভেম্বর) সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।

শুক্রবার সকাল ১০:৩০ টায় সিলেট জেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে এবং জাতীয় চার নেতার ছবিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী’র সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট মোঃ নাসির উদ্দিন খান এর সঞ্চালনায় জেল হত্যা দিবসের উপর বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক।

জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে শুরু হওয়া আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দা জেবুন্নেছা হক বলেন, ১৫ আগস্টের ন্যায় ৩রা নভেম্বরের জেল হত্যাকান্ড ইতিহাসের আরেক কালো অধ্যায়। বাঙালি জাতির ইতিহাসে জেল হত্যাকান্ড আরেকটি কলঙ্কিত অধ্যায়। গভীর পরিতাপের বিষয়, সমগ্র বিশ্বে কারাগার সবচেয়ে নিরাপদ স্থান বলে সর্বজন স্বীকৃত, সেই কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে যাঁরা মুজিবনগর সরকারের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে, এ দেশের জনগণকে একত্রিত করে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বেগবান করে বিজয়ের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছেন, সেই জাতীয় চার নেতাকে চরম নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জাতির জন্য এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে?

তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শত্রুরা এ দেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি এই চক্রটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করে। এরপর খুনি মোশতাকের নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রটি এ দেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি ও দেশবিরোধী চক্র বাংলার মাটি থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। ঘাতকদের উদ্দেশ্যই ছিল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে ভেঙে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করা। এজন্যই তারা জাতির পিতার অনুপস্থিতিতে তাঁর বিশ্বস্থ সহচর যে জাতীয় চার নেতার নেতৃত্বে ও নির্দেশে এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে মাত্র নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকারের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে এ দেশের জনগণকে একত্রিত করে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বেগবান করে বিজয়ের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছেন, সেই জাতীয় চার নেতাকে চরম নির্মমতার স্বাক্ষর রেখে ৩ নভেম্বর কারাগারের ভেতরে রাতের অন্ধকারে হত্যা করা হয়। ঘাতকচক্রের উদ্দেশ্য ছিল দেশে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের উত্থানের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চেতনা থেকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলা। ঘাতকচক্রের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম আজ স্বাধীনতার মহান চেতনায় উজ্জীবিত।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, সিলেট জেলা বারের পিপি এডভোকেট মোঃ নিজাম উদ্দিন।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম কামাল, মোহাম্মদ আলী দুলাল, কোষাধ্যক্ষ শমসের জামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মাহফুজুর রহমান, সাইফুল আলম রুহেল, এডভোকেট রনজিত সরকার, আইন সম্পাদক এডভোকেট আজমল আলী, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হাজী ফারুক আহমদ, ত্রান ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সৈয়দ এপতার হোসেন পিয়ার, দপ্তর সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরী জগলু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ আব্বাছ উদ্দিন, বন ও পরিবেশ  বিষয়ক সম্পাদক মুস্তাক আহমদ পলাশ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বেগম সামসুন্নাহার মিনু, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বুরহান উদ্দিন আহমদ, শিল্প ‍ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী, উপ-দপ্তর সম্পাদক মো: মজির উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আখলাকুর রহমান চৌধুরী সেলিম, আবদাল মিয়া, এডভোকেট বদরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, এম কে শাফি চৌধুরী এলিম, আবু হেনা মোঃ ফিরোজ আলী, আমাতোজ জোহরা রওশন জেবিন, মোঃ জাকির হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, গোলাপ মিয়া, ডাঃ নাজরা আহমদ চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মোঃ নাজমুল উল্যা, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি এজাজুল হক এজাজ, সাধারণ সম্পাদক শামীম রশিদ চৌধুরী, জেলা মহিলা লীগের সভাপতি এড. সালমা সুলতানা, সাধারণ সম্পাদক হেলেন আহমেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসর আজিজ, জেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৃদুল কান্তি দাস, জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজিরা বেগম শীলা, সাধারণ সম্পাদক হাকীম দিনা আক্তার।

 

সভার শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এমাদ উদ্দিন মানিক।

সভা শেষে জাতীয় চার নেতার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *