বড়লেখা পল্লবিদ্যুৎ সমিতির আজিমগঞ্জ অভিযোগ কেন্দ্র থেকে দুর্নীতির দায়ে বদলি সেই ইনচার্জ জাহাঙ্গীর সিকদারকে পুনরায় আজিমগঞ্জ অভিযোগ পদায়ন করা হয়েছে। এখানে যোগদানের মাস না পেরুতেই ফের তার বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানী ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, প্রায় চার বছর আগে পল্লীবিদ্যুতের আজিমগঞ্জ অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জ ছিলেন লাইন টেকনিশিয়ান জাহাঙ্গীর সিকদার। গ্রাহক হয়রানী ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে কর্তৃপক্ষ তাকে দাসেরবাজার অভিযোগ কেন্দ্রে শাস্তিমুলক বদলি করে। কিছু দিনের মধ্যে দাসেরবাজারে একজন বাণিজ্যিক ভবন মালিককে অর্থের বিনিময়ে অবৈধ সুবিধা দিতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ হারান নিরীহ এক রাজমিস্ত্রী সহকারি। ঘুষ নিয়ে চান্দগ্রাম এলাকায় একজন গ্রাহককে পল্লীবিদ্যুতের অনুমোদিত খুঁটির পরিবর্তে নিজেই পাকা পিলার তৈরী করে লাইন টেনে সংযোগ দেন দাসেরবাজার অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জ জাহাঙ্গীর সিকদার। যা সম্পুর্ণ বিধিবর্হিভুত। তাছাড়া জাহাঙ্গীর সিকদারের অভিযোগ কেন্দ্রের আওতাধীন এলাকার গ্রাহকের সাথে অসদাচরণ, অবৈধভাবে ট্রান্সফরমার পরিবর্তন, লোড বৃদ্ধি, নষ্ট ট্রান্সফরমার মেরামতে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠে। এসব নানা অনিয়মের পর কর্তৃপক্ষ চলিত বছরের শুরুর দিকে তাকে কুলাউড়ায় বদলি করেন।
প্রায় ২০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সেবায় নিয়োজিত আজিমগঞ্জ অভিযোগের কেন্দ্রের ইনচার্জ রেজাউল করিম খানের বিরুদ্ধে স্টেশনে না থাকা, ফোনে তাকে না পাওয়া, লাইন মেরামতে উদাসীনতসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠলে গত ২৪ এপ্রিল দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ (কাঠালতলী) কার্যালয়ে গনশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভোক্তভোগী গ্রাহক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন, ইউপি সদস্যবৃন্দ। গণশুনানিতে প্রধান অতিথি হিসেবে পল্লীবিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার গ্রাহক হয়রানীর অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ৩ দিনের মধ্যে রেজাউল করিম খানকে আজিমগঞ্জ অভিযোগ কেন্দ্র থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। এরপর তার শূন্যপদে জাহাঙ্গীর সিকদারকে পদায়ন করে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি। আর আজিমগঞ্জ অভিযোগ কেন্দ্রে যোগদান করেই তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন। অভিযোগ উঠেছে গ্রাহকদের মিটার সংযোগ দিতে সার্ভিস ড্রপের (লাইন) কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অর্থ আদায়ের ফাঁদ পাতেন। অভিযোগ কেন্দ্রে সার্ভিস ড্রপ (লাইন) না রেখে নিজের পছন্দের একটি দোকানে রাখেন। এরপর সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের লাইনের সংকট দেখিয়ে টাকা আদায় করেন। এছাড়া সম্প্রতি দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের হরিপুর এলাকায় ১০ কেভির নষ্ট ট্রান্সফরমার পাল্টাতে গ্রাহকদের দীর্ঘ হয়রানির পর ১২ জন গ্রাহকের নিকট থেকে কৌশলে প্রায় ৮ হাজার টাকা নিয়ে ১৫ কেভির একটি ট্রান্সফরমার স্থাপন করেন। অন্যদিকে সুজানগর ইউনিয়নের ব্রা²ণের চক থেকে ১০ কেভির ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করে ১৫ কেভির ট্রান্সফরমার দিয়ে ৫ হাজার টাকা ও একই ইউনিয়নের বাঘমারা এলাকায় ৫ কেভির ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করে ১০ কেভির ট্রান্সফরমার দিয়ে পরিবহণ খরচের নামে ৫ হাজার টাকা নেন অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জ জাহাঙ্গীর সিকদার।
দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের কাঠালতলী এলাকার ভোক্তভোগী গ্রাহক মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, আমার ভাইয়ের মিটার অনুমোদনের পর অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জ জাহাঙ্গীর সিকদারের কাছে ৪-৫ দিন যাই। লাইন (সার্ভিস ড্রপ) সংকট দেখিয়ে প্রায় ১ মাস নানা হয়রানি করেন। সবশেষে গত ২১ মে তার নির্দেশিত দোকান থেকে ১০৫ ফুট তার (সার্ভিস ড্রপ) ১ হাজার টাকা দিয়ে কিনে আজিমগঞ্জ অভিযোগ কেন্দ্রের লাইনম্যানদের ফোন দেই। তারপরও তারা অনেক ঘুরিয়ে মিটার সংযোগ দিয়েছে।
আজিমগঞ্জ অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জ জাহাঙ্গীর সিকদার জানান, গ্রাহকের সাথে তিনি টাকা পয়সার কোনো লেনদেন করেন না। আগের চেয়ে (পূর্বে যখন এই স্টেশনে চাকুরি করছিলেন) এখন তিনি অনেক নীট এন্ড ক্লীনভাবে মানুষের সেবা করছেন। তার বিরুদ্ধে উঠা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।
বড়লেখা পল্লীবিদ্যুত সমিতির এজিএম (কম) মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম জানান, ওভার লোড কিংবা প্রাকৃতিক কারণে ট্রান্সফরমার নষ্ট হলে গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো টাকা আদায় সম্পুর্ণ অবৈধ। নতুন মিটার সংযোগেরও ড্রপলাইন গ্রাহকের কেনার নিয়ম নেই।
শেয়ার করুন