বন্যায় মৃত্যু হাজারের বেশি, আরও বৈশ্বিক সহায়তা চায় পাকিস্তান

জাতীয়

টানা দুই মাস ধরে ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা করছে পাকিস্তান। বন্যা এতোটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, এতে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে এক হাজারের ঘর। এই পরিস্থিতিতে বন্যা মোকাবিলায় আরও আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে পাকিস্তান।
রোববার (২৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এতে বলা হয়েছে, সারা দেশে ধ্বংসাত্মক বন্যার পর পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাকিস্তান আরও আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন করছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের সরকার বৈশ্বিক সহায়তা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। দেশটির সরকারের আবেদনে সাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-সহ অন্যান্য দেশ ইতোমধ্যেই দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশটিকে সহায়তা দিয়েছে।
কিন্তু ভয়াবহ এই বন্যা মোকাবিলায় পাকিস্তানের আরও অনেক তহবিল প্রয়োজন বলে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন। সালমান সুফি নামের ওই কর্মকর্তা বলেন, গত জুন মাস থেকে এই বন্যায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং আরও লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সরকার দুর্যোগপীড়িত জনগণকে সাহায্য করার জন্য নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী সবকিছু করছে।
এদিকে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে বহু নদীর পানি তীর ছাপিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। এর ফলে সৃষ্ট শক্তিশালী আকস্মিক বন্যায় নতুন করে আরও হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন।

বার্তাসংস্থা এএফপিকে জুনায়েদ খান নামে ২৩ বছর বয়সী এক যুবক বলেছেন, ‘আমরা বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করে যে বাড়িটি তৈরি করেছি তা আমাদের চোখের সামনে ডুবতে শুরু করেছে। আমরা রাস্তার পাশে বসে আমাদের স্বপ্নের বাড়িটি ডুবতে দেখলাম।’
অন্যদিকে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বের সিন্ধ প্রদেশও চলমান এই বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রদেশটিতে হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিবিসির সাথে কথা বলার সময় পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সালমান সুফি বলেন, জরুরিভাবে পাকিস্তানের আরও আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান অর্থনৈতিক বিভিন্ন সমস্যায় নিমজ্জিত ছিল। কিন্তু যখনই আমরা সেসব সংকট কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছিলাম, ঠিক তখনই ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বন্যার এই দুর্যোগ আঘাত হানল।’

তিনি আরও বলেন, অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থায়ন সহায়তার জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিবিসি বলছে, সিন্ধ প্রদেশজুড়ে যেদিকেই যাওয়া হচ্ছে সেখানেই দেখা মিলছে বাস্তুচ্যুত লোকদের। বন্যার কারণে এই প্রদেশটি ঠিক কতটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তা এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে সেখানকার লোকেরা এটিকে তাদের জীবনের সবচেয়ে খারাপ বিপর্যয় হিসাবে বর্ণনা করছেন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছেন, বন্যায় ৩৩ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ।

তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে পাকিস্তানে বন্যায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা ২০১০-১১ সালের বন্যার সাথে তুলনীয়। এক দশক আগের সেই বন্যাকে পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ বলে উল্লেখ করা হয়।

পাকিস্তানের কর্মকর্তারা অবশ্য ধ্বংসাত্মক এই বন্যা এবং ক্ষয়ক্ষতির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *