সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবন থেকে মাত্র ৭০০ গজ দূরের ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত সরকারি জায়গা দখলের পর বস্তা দিয়ে ঢেকে চলছে মার্কেট নির্মাণের কাজ। অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী একটি মহল প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মার্কেটটি নির্মাণ করছে। ইউনিয়ন ভূমি অফিস দুই দফা জৈন্তাপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) রীপা মনি দেবীকে এ বিষয়ে চিঠি দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি।
কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট মৌজার জেএল নম্বর ১৮ এর ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ৮৮৫ নং দাগের বাড়ি রকম ৫ শতক ভূমি ও একই খতিয়ানভুক্ত ৮৮৬ নং দাগের নালা রকম ১৬ শতক ভূমির অবস্থান। এসএ রেকর্ডেও ওই ভূমি ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত। ওই জায়গা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট পানিয়ারাহাটি গ্রামের মৃত আলকাছ মিয়ার ছেলে আরজু মিয়া। তিনি উপজেলা প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে ওই জায়গাতেই মার্কেট নির্মাণ করছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন।
অন্যদিকে, খাস খতিয়ানভুক্ত ২১ শতক ভূমির অবস্থান উপজেলা পরিষদের প্রবেশমুখে। একই সঙ্গে উত্তরা ব্যাংক জৈন্তাপুর শাখা সংলগ্ন অবস্থান ওই ভূমির। যার জন্য প্রভাবশালী মহলের দৃষ্টি ছিলো-ওই ভূমির দিকে। ওই ভূমিতে যখন মার্কেট নির্মাণের চেষ্টা চলছিলো তখনই জৈন্তাপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) রীপা মনি দেবীকে অবহিত করে জৈন্তাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস। তৎকালীন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নিত্যানন্দ দেব সরকারি ভূমিতে দোকান নির্মাণের তথ্য জানিয়ে উচ্ছেদের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছিলেন। যার স্মারক নম্বর ৯৬ (২৮/০৪/২২)। কিন্তু, জৈন্তাপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) রীপা মনি দেবী তাতে কোনো সাড়া দেননি।
জৈন্তাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বর্তমান ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. আব্দুল খালিকও জৈন্তাপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি)-কে সরকারি ভূমিতে স্থাপনা তৈরী হচ্ছে এবং তা উচ্ছেদের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। যার স্মারক নম্বর ১৭৯ (০২/১০/২০২২)। সেই চিঠিও আমলে নেননি সহকারী কমিশনার (ভূমি)। উল্টো ভূমি দখল করে দোকান নির্মাণ সম্পন্ন করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের পাশে সিমেন্টের খালি বস্তা দিয়ে আড়াল করে রাখা হয়েছে জমিটি। ভেতরে ৫টি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। সাঁটার লাগানোও হয়ে গেছে। যে কোনো দিন মার্কেট হিসেবে খুলে দিতে পারেন দখলদাররা।
জৈন্তাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. আব্দুল খালিক বলেন, ‘আমি দেড় মাস আগে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেছি। আমি আসার পর সরকারি খাস খতিয়ানের ভূমিতে মার্কেট নির্মাণের খবর পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। এর আগেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আরো একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিলো।’
জৈন্তাপুর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আব্দুর রাকিব বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দখলদারদের অবস্থানের পক্ষে কোনো কাগজপত্র থাকলে ভূমি অফিসে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দিয়ে এসেছিলাম। তবে তারা আসেনি।’
জৈন্তাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রীপা মনি দেবী বলেন, ‘খাস খতিয়ানের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। আমরা সার্ভেয়ার পাঠিয়ে জায়গা চিহ্নিত করার নির্দেশনা দিয়েছি। ওই জায়গা খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত।’
ইউনিয়ন ভূমি অফিসের প্রদত্ত চিঠি প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কাছে উচ্ছেদের অনুমতি চাইবো। এরপর নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি ভূমিতে স্থাপনা নির্মাণের খবর পেয়ে কাজ বন্ধ রেখেছিলাম। আবার যদি তারা ঘর তোলে অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
এ বিষয়ে ভূমির দখলদার আরজু মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে আমার দখলে রয়েছে এই জমি। এখন পর্যন্ত কেউ এসে আমাকে বলেননি এটি সরকারি জায়গা।’