স্টাফ রিপোর্টার : এ সপ্তাহেও বাজারে নেই স্বস্তির কোনো খবর। নিত্যপণ্যের বাজারে যেন নিয়মিত চিত্র, কোন একটা পণ্যের দাম কমবে অপরদিকে বাড়বে একাধিক পণ্যের দাম। এ অবস্থায় টালমাটাল নিত্যপণ্যের বাজার। পণ্য কিনতে গিয়ে অসহায় ক্রেতারা হিমশিম খাচ্ছেন।
এ অবস্থায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান শুক্রবার একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মানুষ চরম কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছে। খাবার তালিকা কাটছাঁট করে ফেলছে। শিশুখাদ্য তালিকাও কাটছাঁট করছে। নিজে থেকে এমন কষ্ট স্বীকার করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে মানুষ। মর্যাদাকর জীবনযাপনের ধারণা বাদ দিতে হচ্ছে। এসব হচ্ছেই সার্বিকভাবে জবাবদিহিতা না থাকার কারণে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকারের কঠোর ঘোষণার পরও সিলেটের বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ কমেনি। কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। এতে দিশেহারা সাধারণ ভোক্তারা।
ক্রেতারা জানান, পেঁয়াজের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। আমদানি কম থাকার অজুহাত দিয়ে বাজারে দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি কোরবানির ঈদ সামনে রেখেও পেঁয়াজের বাজার আরো অস্থির হয়ে ওঠেছে।
শাকিল নামে বন্দরবাজারে আসা এক ক্রেতা জানান, এ বাজারে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ৫ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায়। আর আড়তদাররা ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি করছেন ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। একই চিত্র পাইকারীর সেরা হাট কালীঘাটে।
পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, আড়তদাররা ঠিকমতো সরবরাহ না করায় দাম বাড়ছে পেঁয়াজের। আড়ত থেকে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। তাই বাধ্য হয়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
পেঁয়াজ সংকটের কথা স্বীকার করে আড়তদাররা জানান, বাজারে সরবরাহ কম থাকার পাশাপাশি বন্ধ আমদানিও। তবে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি চালু হলে দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা কমবে।
বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের হুঁশিয়ারিই শেষ ভরসা ভোক্তাদের কাছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সম্প্রতি পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) দিতে কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
পেঁয়াজের পর এখন আবার বেড়েছে আদার দাম। ক্রেতাপর্যায়ে সিলেটে মানভেদে আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়।
এছাড়া দেশি রসুন (ছোট) প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন (বড়) প্রতি ২২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে দাম নিয়ে ক্রেতাপর্যায়ে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার শিবগঞ্জ বাজার ঘুরে জানা গেছে, সাধারণ মানের আদা ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা বিক্রি হলেও চায়না আদা আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছে, বাজারে দেশি আদা থাকলেও আমদানি করা আদার সরবরাহ কম। তাই বাড়তি দাম। এই দাম আরও বেড়েছিল।
এদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, কিছুদিন আগেও আমদানি করা আদা বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকায়। আর এক মাস আগে এই আদা বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ২৫০ টাকায়। সেই সঙ্গে গত বছরের এই সময় আদা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়।
এদিকে, এদিকে বাজরে আদা ও পেঁয়াজ ছাড়া প্রায় সব সবজির দাম উর্ধ্বমুখী। সবজীর দাম অনেকটাই নাগালের বাইরে। ৫০-৬০ টাকার নিচে কোন সবজী নেই। গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে সবজির দাম। বাজারে প্রতিকেজি করলা ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৫০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, আলু ৪০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা ও টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়, প্রতিকেজি ধনেপাতা ৩০০ টাকা ও প্রতিকেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
বন্দরবাজারে বাজার করতে আসা এক ক্রেতা বলেন, মাছ মাংসের দাম তো আগে থেকেই বেশি। কিন্তু শাক-সবজির দামও এভাবে বাড়বে চিন্তার বাইরে। ৫০-৬০ টাকার নিচে কোনো সবজিই নেই। আমাদের কৃষিপ্রধান দেশ, কিন্তু এরপরও এত দাম সবজির। আমরা কোথায় যাবো।
একই অবস্থা মাছ, গরু ও মুরগির মাংসের বাজারে। আমিষের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়। আর প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩৬০ টাকা, লাল লেয়ার ৪০০ টাকা ও দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়।
এদিকে ঊর্ধ্বমুখী মাছের বাজারও। বাজারে আকারভেদে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে দেড় হাজার টাকা কেজিতে। এছাড়া প্রতি কেজি বার্মা রুই ৩৭০ থেকে ৪২০ টাকা, দেশী রুই মানভেদে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, কাতল মানভেদে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ও আইড় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, নিত্যপণ্যের এ অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।
আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।