বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) কর্তৃক আয়োজিত ‘ব্যাংকিং টেকনলজি এন্ড সাইবার সিকিউরিটি ইস্যুজ’ শীর্ষক অনুষ্ঠান রবিবার ১৬-২০ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ দিনব্যাপি একটি বহিঃ প্রশিক্ষণ কোর্স বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেট অফিসের ট্রেনিং হলে আয়োজন করা হয়। উক্ত প্রশিক্ষণ কোর্সটি উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিআইবিএম এর মহাপরিচালক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেট অফিসের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মামুনুল হক। বিভিন্ন ব্যাংকের ৫০ জন প্রশিক্ষণার্থীসহ সিলেট বিভাগে কার্যরত সকল তফসিলি ব্যাংকসমূহের বিভাগীয় আঞ্চলিক প্রধান শাখার ব্যবস্থাপকবৃন্দ ও বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেট অফিসের পরিচালক রুপ রতন পাইন, পরিচালক একেএম এহসান ও পরিচালক মোঃ আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ ব্যাংক, সিলেট অফিস এর যুগ্ম পরিচালক সিতাংশু শেখর রায়, উপ-পরিচালকরাজেশ্বর ভট্টাচার্য্য।
বিআইবিএম এর সহযোগী অধ্যাপক মোঃ মাহবুবুর রহমান আলম এর সভাপতিত্বে ও বিআইবিএম এর সহকারী অধ্যাপক মোঃ ফয়সাল হাসান এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কোর্স শুরুর প্রারম্ভে ‘মনিটারি পলিসি স্টেটমেন্ট এন্ড ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন: ইমপ্লিকেশন ফর ব্যাংকস্’ শীর্ষক বিষয়ে বিশেষ বক্তব্য রাখেন বিআইবিএম এর মহাপরিচালক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির স্বরূপ তুলে ধরে বিনিময় হারের উঠানামা ও বৈশ্বিক প্রভাবের কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি এবং দেশের ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব মোকাবেলায় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রণীত আর্থিক নীতির (মনিটারি পলিসি) ভূমিকা ও এক্ষেত্রে ব্যাংকারদের করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করেন।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তৃতায় বলেন আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বাধা ও উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়া বর্তমান মূল্যস্ফীতির মূল কারণ, তাছাড়া বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া প্রভৃতি কারণে সৃষ্ট এ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার নীতির সাথে সাথে অন্যান্য আরো সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি বলেন সিংহভাগ ব্যাংকিং ব্যবসা আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্ট খাতের সাথে সম্পৃক্ত বিধায় সুদ হার হ্রাস-বৃদ্ধি একটি স্পর্শকাতর বিষয় যা অতি সহজেই অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। সমাজের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে আনুষ্ঠানিক আর্থিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা ও আর্থিক সাক্ষরতা সম্প্রসারণ তথা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন ব্যষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় আর্থিক নীতি প্রণয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সিএমএসএমই, গ্রিন ব্যাংকিং, সাস্টেইনেবল ফিন্যান্স এবং ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনকে প্রাধান্য দিচ্ছে যা বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে যথার্থ। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণিত এসব পলিসি বাস্তবায়নে ব্যাংকারদের আরও তৎপর হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। তাছাড়া গ্রিন ব্যাংকিং, সাস্টেইনেবল ফিন্যান্স এবং ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনে অটোমেশনের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। এক্ষেত্রে টেকনলজি এন্ড সাইবার সিকিউরিটি ইস্যুজ শীর্ষক কোর্সটি ব্যাংকারদের বিশেষ সহায়ক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মামুনুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, করোনা মহামারি, বন্যা এবং সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ উপর্যুপরি অনাকাঙ্খিত অভিঘাত হেনেছে অর্থনীতিতে। এ অবস্থায় দেশের দারিদ্র বিমোচন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মস্থান বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাকে অব্যাহত রাখার মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি যত সম্প্রসারিত হবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন তত সফল ও সহজতর হবে। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ব্যাংকিং সেবা পুরোপুরি ডিজিটালাইজড হতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সাইবার অপরাধ ও আর্থিক খাতের প্রতারণা থেকে তথ্যপ্রযুক্তিকে নিরাপদ করে তুলতে সময়োপযোগী একটি প্রশিক্ষণ আয়োজনের জন্য তিনি বিআইবিএম কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
শেয়ার করুন