বিএনপির সঙ্গে নেই জামায়াত: ডা. শফিকুর রহমান

রাজনীতি

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতকে রাখা-না রাখা আলোচিত-সমালোচিত এক রাজনৈতিক ইস্যুর নাম। বিভিন্ন ইস্যুতে দলদুটির মধ্যে টানাপড়েনও দীর্ঘদিনের। জামায়াতের সঙ্গে না থাকার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপও ছিল বিএনপির ওপর। বিষয়টির পক্ষে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যে বক্তব্যও দিতে দেখা গেছে বিএনপির কোনো কোনো নেতাকে। তবে জামায়াতের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কখনো কিছুই শোনা যায়নি। তবে এবার দুই দলের মতপার্থক্যের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।

বিএনপির সঙ্গে নেই জামায়াত: ডা. শফিকুর রহমান

ভিডিওতে দেখা যায়, দলের একটি ঘরোয়া বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এতদিন একটা জোটের সঙ্গে ছিলাম। ছিলাম বলে আপনারা হয়তো ভাবছেন কিছু হয়ে গেছে নাকি? আমি বলি হয়ে গেছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি একটি জোট ছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সেদিন বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। সেটা আর ফিরে আসেনি।’

তিনি বলেন, বছরের পর বছর এ ধরনের অকার্যকর জোট চলতে পারে না।

এদিকে, ২০ দলীয় জোট তথা বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের এই মনস্তাত্ত্বিক দূরত্বের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে জামায়াতের উচ্চ পদস্থ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটি নতুন কোনো বিষয় নয়; বরং দীর্ঘদিনের।

এ ব্যাপারে প্রধানত তিনটি কারণের কথা উল্লেখ করেন জামায়াতের এ নেতা।

তিনি বলেন, ‘ক্ষোভের শুরু মূলত ২০০৬ সালের পর থেকেই। পরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তুলে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ জামায়াত নেতাদের বিচারের নামে যে কার্যক্রম শুরু হয় এবং পরবর্তীতে একের পর এক জামায়াত নেতার ফাঁসি হয়; কিন্তু জোটের সদস্য হিসেবে বিএনপি এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি, যা জামায়াতকে ভাবিয়ে তুলেছিল।’

‘দ্বিতীয়ত, ক্ষমতাসীন জোটের বিরুদ্ধে গঠিত “জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে” বিএনপির অগ্রণী ভূমিকা থাকলেও সেখানে জামায়াতের কার্যকর অংশগ্রহণ ছিল না। মূলত ২০ দলীয় জোটকে পাশ কাটিয়েই ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিল বিএনপি, যেখানে জামায়াতকে অবহেলা করা হয়েছে। এটি দলের (জামায়াত) ভেতরে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে,’ বলেন এ নেতা।

ততৃীয় কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বিগত বেশকিছু কর্মসূচি এবং রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে জামায়াত নেতাদের দাওয়াত দেয়া হয়নি; জোটের সদস্য হিসেবে এটি খুবই দৃষ্টিকটু লেগেছে।’ ‘এরপরও তাদের (বিএনপি) সঙ্গে থাকাটা কতটা যৌক্তিক’, প্রশ্ন করেন তিনি।

এছাড়া ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে বের করে দিতে দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির ওপর চাপ ছিল। কিন্তু সে বিষয়ে দলীয়ভাবে বা জোটের পক্ষ থেকে বিএনপি থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেয়া হয়নি ঠিকই; তবে বিএনপির একাধিক নেতা প্রকাশ্যে জামায়াতকে জোট থেকে বের করে দেয়ার কথা বলেছেন, যা জোটসদস্য হিসেবে জামায়াতকে বিব্রত করেছে। এটিকেও ক্ষোভ সঞ্চারের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন এ জামায়াত নেতা।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জামায়াতের তৎকালীন আমির গোলাম আযম এবং ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আজিজুল হককে সঙ্গে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

পরবর্তীতে ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকে এ জোট। পরবর্তীতে বিরোধীদলে থাকা অবস্থায় বিএনপির নেতৃত্বে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ১৮টি দল এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে আরও ২টি দলের সমন্বয়ে ২০ দলীয় জোট গঠিত হয়, যার অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *