বিশ্বনাথে গোয়াহরি বিলে ঐতিহ্যের পলো বাওয়া উৎসব পালিত

সিলেট

ফারুক আহমদ
স্টাফ রিপোর্টার

বিপুল উৎসাহ-উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে সিলেটের বিশ্বনাথে বার্ষিক “পলো বাওয়া উৎসব” পালিত হয়েছে। বার্ষিক এই “পলো বাওয়া উৎসব” শনিবার (২১ জানুয়ারি) উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের দক্ষিণের (বড়) বিলে অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহন করেন গ্রামের কয়েক শতাধিক মানুষ। প্রতিবছর টান্ডার সময় এ উৎসব হত। অধিক পানি ও কচুরিপানা না থাকায় মাছ নিয়ে ঘরে ফিরছেন অনেককেই। শিকারকৃত মাছের মধ্যে ছিল বোয়াল, শউল, মিরকা, কারপু, বাউশ, ঘনিয়া, রওউসহ ভিবিন্ন জাতের মাছ।

গোয়াহরি গ্রামের ঐহিত্য অনুযায়ী প্রতি বছরের মাঘ মাসের পহেলা তারিখ এই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হত কিন্তু এবার বিলে মাছ বেশি থাকায় এলাকাবাসী মিলে এসময় পলো বাওয়ার সিদ্বান্ত নেন।

“পলো বাওয়া উৎসবকে” কেন্দ্র করে গোয়াহরি গ্রামে গত কয়েকদিন ধরে উৎসবের আমেজ রিবাজ করছিল। এই উৎসব আগামী ১৫ দিন পর্যন্ত চলবে। গোয়াহরি গ্রামের পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে এই পনের দিন বিলে মাছ ধরায় আটল (নিষেধাজ্ঞা) নেই। তবে গ্রামবাসীর ঐতিহ্য অনুযায়ী আগামী ১৫ দিন পর ২য় ধাপে পলো বাওয়া হবে। এই পনের দিনের ভিতরে বিলে হাত দিয়ে মাছ ধরা হবে এবং কেউ চাইলে পেলান জাল (হাতা জাল) দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন।

পলো বাওয়া এই উৎসবে অংশ নিতে শনিবার সকাল ৮টা থেকে গোয়াহরি গ্রামের সৌখিন মানুষ বিলের পারে এসে জমায়েত হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিলের পারে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। পূর্ব নির্ধারিত সময় সকাল সাড়ে ১০টা হওয়ার সাথে সাথে সবাই এক সাথে বিলে নেমে শুরু করেন পলো বাওয়া। শুরু হয় ঝপ ঝপ পলো বাওয়া। প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী এ “পলো বাওয়া উৎসবে” গোয়াহরি গ্রামের সব বয়সী পুরুয় অংশ নেন।

সরেজমিনে গোয়াহরি বিলে গিয়ে দেখা যায়, মাছ শিকার করতে নিজ নিজ পলো নিয়ে বিলের উপর ঝাপিয়ে পড়েন লোকজন। যাদের পলো নেই তারা মাছ ধরার ছোট ছোট বিভিন্ন জাল নিয়ে মাছ শিখারে ব্যস্ত সময় কাটান।
এসময় মাছ ধরার এ দৃশ্যটি উপভোগ করতে বিলের পারে ছোট ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের পুরুষ-মহিলা, দূর থেকে আসা অনেকের আত্বীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে দায়িড়ে থাকতে দেখা যায়।

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ছেলে বুড়ো মিলিয়ে প্রায় ৫ শতাধিক লোক পলো বাওয়া উৎসবে অংশগ্রহন করেন। বিল থেকে অন্যান্য বছরের তুলনায় মাছ শিকার হয়েছে বেশি।
গোয়াহরি গ্রামের ইকবাল হোসেন বলেন, পলো বাওয়া উৎসব আমাদের গ্রামের একটি ঐতিহ্য। আমার কাছে পলো বাওয়া উৎসব খুব মজার বিষয়। শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমি এ উৎসবে অংশ গ্রহন করি। আমাদের গ্রামবাসী যুগ যুগ ধরে এই উৎসব পালন করে আসছেন।
মাদ্রাসা শিক্ষক গোয়াহরি মাওলানা লুৎফুর রহমান বলেন, আমি একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। এই মাছ ধরায় অংশ নিতে পেরেছি তাই আমার খুব আনন্দ লাগছে।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী আশরাফুজামান বলেন, আমি পলো বাওয়ায় অনেক বছর দেখিনি। আমার ভাগ্যভাল এবার এ উৎসব দেখতে পারলাম আমার খুবই ভাল লাগছে। পলো দিয়ে মাছ শিকার একটি মজার বিষয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *