ফারুক আহমদ
স্টাফ রিপোর্টার
শিম গাছের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলাকে কেন্দ্র করে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের তালুকজগত গ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষের পর থানায় গণধর্ষণ মামলা দায়েরের ঘটনায় এলাকার নানান জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে।
গত রোববারের (২০ আগস্ট) সংঘর্ষের ঘটনায় মধ্যস্থকারীসহ দু’পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
মধ্যস্থকারীসহ একাধিক সহোদর-ভাতিজাদের অভিযুক্ত করে সংঘর্ষের ঘটনাটি ভিন্নখ্যাতে প্রবাহিত করার জন্য থানায় গণধর্ষণ মামলা দায়েরের ফলে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। আহতদের মধ্যে আবার কয়েক জনের অবস্থা গূরুত্বর।
এনিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করার খবর পেয়ে বিশ্বনাথে কর্মরত একদল সাংবাদিক শুক্রবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
এসময় স্থানীয়দের কাছ থেকে জানাগেছে, উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের তালুকজগত গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (মামলার বাদী) ও শামছুল হকের মধ্যে সীম গাছের চারার উপর ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিয়ে বিরোধ চলছে। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়, কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে মধ্যস্থতাকারীসহ দু’পক্ষের অন্তত ১৫ জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। এ ঘটনাকে আড়াল করে মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী গণধর্ষণ হয়েছে মর্মে সংঘর্ষের মধ্যস্থতাকারীসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলা নং ১৭ (তাং ২২.০৮.২৩ইং)।
শুক্রবার (২৫ আগস্ট) বাদ জুম্মা এলাকাবাসী সাজানো মিথ্যা গণধর্ষণ মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সীম গাছের চারার উপর ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিয়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। গণধর্ষনের ঘটনা সম্পূর্ণ সাজানো ও মিথ্যা। এতে এলাকার মান-সম্মান নষ্ট করেছে জাহাঙ্গীর গংরা।
এসময় সাংবাদিকদের কাছে পঞ্চয়েতের পক্ষে বক্তব্য দেন এলাকার মুরব্বী হাজী উস্তার আলী, ছমির আলী, ইসকার আলী ও যুবক মোহাম্মদ আলী।
তবে, গুরুত্বর আহত সামসুল হকের সঙ্গে পূর্ব বিরোধের কথা স্বীকার করে মামলার বাদি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার ৩৮ বছর বয়সী স্ত্রী একজন ডায়াবেটিস রোগী। তার সঙ্গে গণধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে এবং প্রতিপক্ষ কর্তৃক একাধিকবার হামলার স্বীকারও হয়েছেন তারা। তাই ন্যায় বিচার পেতে তিনি থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় (৪নং) ওয়ার্ডে মেম্বার শাহনুর হোসাইন জানান, ময়লা-আবর্জনা ফেলাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই মধ্যস্থকারীসহ দু’পক্ষের লোকজন আহত হয়েছেন। পরে গ্রামের মুরব্বীদেরকে নিয়ে শালিসের মাধ্যমে বিষয়টি শেষ করার প্রস্তাব দেই। শামসুল পক্ষ শালিস মানলেও জাহাঙ্গীর আলম মানেনি। পরে শুনি থানায় গণধর্ষণ মামলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ওই দিন আমাদের এলাকায় ধর্ষণ বা গণধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেনি।
এব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া জানান, এলাকার লোকজন ও বাদীর আপন চাচাতো ভাই বলেছেন এখানে শুধু মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণ বা গণধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেনি। প্রশাসনকে আমি অনুরোধ জানাবো কাউকে অযথা হয়রাণী না করে, সুষ্টু তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, গণধর্ষণ ও মারামারির ঘটনায় একটি মামলা নেয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। এঘটনায় কাউকে পুলিশ হয়রাণী করবে না, করছেও না। তদন্তের পর ঘটনাটি মিথ্যা প্রমানিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেয়ার করুন