‘ভৌগলিক’ কারণে সিলেটে তাপপ্রবাহের ঝুঁকি

সিলেট

সিলেটসহ দেশের পাঁচটি প্রধান শহরের ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রচ- গরমের বিপদে রয়েছেন। সিলেট ছাড়াও এ শহরগুলো হলো- রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী।অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় দাবদাহ বা প্রচ- গরম নিয়ে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।কোন শহরে কী কারণে তাপপ্রবাহের ঝুঁকি বাড়ছে, তা-ও গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, সিলেটে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ৮৩ শতাংশ এলাকা বেশি উত্তপ্ত থাকে। ফলে তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে রয়েছেন ৫ লাখ মানুষ। চট্টগ্রামে এই সংখ্যা ২৯ লাখ, যা শহরটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৩ শতাংশ। খুলনায় তা সাত লাখ মানুষ (শহরের জনসংখ্যার ৬৯ শতাংশ)।

গবেষণায় বড় শহরগুলোর সবচেয়ে উত্তপ্ত অংশগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী শহরের সবচেয়ে উত্তপ্ত এলাকাগুলো হলো প্রধান সড়কের চারপাশের এলাকা। ওই শহরগুলোর মাঝখানের অংশে উত্তাপ সবচেয়ে বেশি।আর রাজধানী ঢাকার অপরিকল্পিত নগরায়ণ, গাছপালা উজাড়, সড়কের দুই পাশে গাছপালা না থাকা এবং জলাভূমি ধ্বংস করাকে তাপপ্রবাহের জন্য দায়ী করা হচ্ছে। ঠিক উল্টো চিত্র রাজশাহীতে। সেখানে পরিকল্পিত নগরায়ণ, গাছপালা রোপণ এবং বাতাসপ্রবাহের যথেষ্ট ব্যবস্থা থাকায় সেখানে তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে থাকা মানুষ সবচেয়ে কম।

গ্রীষ্মকাল তো বটেই, ভরাবর্ষায়ও তাপপ্রবাহের কারণে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় পড়ছেন এসব শহরের মানুষ। এর মধ্যে ৯ বছরের কম ও ৬৫ বছরের চেয়ে বেশি বয়সী মানুষেরা গরমের কারণে সবচেয়ে বেশি শারীরিক সমস্যায় পড়ছেন।গবেষণায় বলা হয়েছে, এ তাপপ্রবাহের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার সক্ষমতার বিষয়টি যতটা না প্রাকৃতিক, তার চেয়ে আর্থসামাজিক। যেমন তাপপ্রবাহের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার সক্ষমতা সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রামের অধিবাসীদের। ওই শহরের মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশের সে সক্ষমতা রয়েছে। ঢাকার তা ৭৯ দশমিক ৩ শতাংশ, খুলনার ৭৯ শতাংশ, রাজশাহীর ৮৭ ও সিলেটের ৪৮ শতাংশ।

গবেষণাটিতে দেশের বড় শহরগুলোয় তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির দুটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এক. দ্রুত নগরায়ণ ও ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, দুই. ভৌগোলিক অবস্থান এবং আবহাওয়াগত পরিবর্তন। গবেষণায় বলা হচ্ছে, ভৌগোলিক অবস্থান এবং আবহাওয়াগত কারণে সবচেয়ে কম তাপপ্রবাহপ্রবণ এলাকা হওয়ার কথা ছিল ঢাকা শহরের। আর রাজশাহী ও সিলেট সবচেয়ে তপ্ত শহর হওয়ার কথা। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে তার উল্টো। ঢাকার ৭৮ শতাংশ বা ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষ তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে পড়েছে। কিন্তু রাজশাহীতে ওই হার মাত্র ৪৫ শতাংশ বা চার লাখ মানুষ এ ঝুঁকিতে পড়েছে।

গবেষণাটি অন্যতম প্রধান মো. সরফরাজ গণী আদনান বলেন, শুধু আবহাওয়াগত কারণে কোনো এলাকায় বেশি তাপপ্রবাহ হয়, আর মানুষের কষ্ট বাড়ে-আমাদের গবেষণায় আমরা তেমনটা দেখতে পাইনি। প্রাকৃতিক ও আর্থসামাজিক এবং সরকারি পরিকল্পনার বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। ফলে কোন এলাকায় তাপপ্রবাহের প্রভাব কমাতে হলে ওই সব বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ ব্যাপারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের নানা ধরনের বিপদ নিয়ে বেশি কথা বলি। কিন্তু আমরা অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে শহরগুলোকে একেকটি উত্তপ্ত দ্বীপে পরিণত করছি। ফলে আমাদের শহরগুলোর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে বদল আনতে হবে। শুধু অবকাঠামো বাড়িয়ে যে উন্নয়ন হয় না, তা যে তাপপ্রবাহের মতো দুর্যোগও ডেকে আনে, তার বড় প্রমাণ তো আমাদের শহরগুলো। এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।

জলবায়ু ও পরিবেশ গবেষকেরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও আবহাওয়ার পরিবর্তন ছাড়াও শহরে দ্রুত দালানকোঠাসহ সব ধরনের ভৌত অবকাঠামো ও জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে তাপপ্রবাহ বাড়ছে। সার্বিকভাবে বৃষ্টি কমে যাওয়া ও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় প্রচণ্ড গরমের বিপদ নিয়মিত সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *