মেয়র আরিফ বললেন- সম্ভবত এটাই আমার শেষ বাজেট

সিলেট

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১০৪০ কোটি ২০ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।  

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে মহানগরীর আরামবাগস্থ আমানউল্লাহ কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিসিক মেয়র এ বাজেট ঘোষণা করেন।

 

 

শুরুতেই তিনি বলেন- এটি সম্ভবত আমার পরিষদের শেষ বাজেট। মহানগরবাসীর সুযোগ-সুবিধা ও সেবা প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবার সর্বমোট ১০৪০ কোটি ২০ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা আয় ও সমপরিমাণ টাকা ব্যয় ধরে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।

সিসিক মেয়র বলেন, টানা ৩বার সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নে দেশের সকল সিটির মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে দেশের সকল সিটির মধ্যে প্রথম হওয়ার পাশাপাশি মন্ত্রনালয়ের ২০টি দপ্তর ও সংস্থার মধ্যে ২য় বারের মতো দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এই অর্জনের স্বীকৃতি স্বরূপ অভিনন্দন স্মারক ও সনদ প্রদান করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।

বাজেট ঘোষণার বক্তব্যে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন- বন্যাকবলিত সিলেট অঞ্চল পরিদর্শন শেষে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী স্বতঃফূর্তভাবে মেয়র তথা সিসিকের কর্মতৎপরতা নিয়ে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেছন। প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য নাগরিকসেবায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে কর্মরত সিটি কর্পোরেশনের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে।

 

সিলেট নগরের ধারাবাহিক উন্নয়নের জন্য মেয়র বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এমপির প্রতি।

বাজেট বক্তৃতায় মেয়র বলেন, সাম্প্রতিককালের আকস্মিক বন্যার কারণে সিলেট বিভাগের লাখ লাখ মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। সিলেট মহানগরবাসীও এই অসহনীয় কষ্ট ও দুর্দশা থেকে পরিত্রাণ পাননি। এই দুর্ভোগ মহানগরবাসীর কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। যা থেকে পরিত্রাণের পথ আমাদের জরুরি ভিত্তিতে খুঁজতে হবে। এক্ষেত্রে বাস্তবতাকে স্বীকার করেই আমাদেরকে সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা ও বন্যা- এই দুটো বিষয়কে এক করে দেখলে চলবে না। দুটো বিষয় আলাদা। এবার আকস্মিক বন্যার কারণে টানা কয়েকদিন মহানগরীর বেশ কয়েকটি এলাকার পানি নামতে পারেনি মূলত নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে।

মেয়র বলেন, মহানগরীর ড্রেন ও ছড়ার পানি নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু সেই নদীও ড্রেজিং না হওয়াতে ভরাট হয়ে গেছে। বিপত্তি ঘটে তখনই যখন উজান থেকে ঢল এসে সুরমা নদীর পানি স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই ছড়া ও খাল দিয়ে প্রবাহিত পানি সুরমা নদী হয়ে নামতে পারবে না। উল্টো সুরমা নদীর পানি মহানগরীর ছড়া দিয়ে ঢুকে অনেক এলাকা প্লাবিত করে ফেলে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ইন্সটিটিউট অব ওয়ারটার মডেলিং কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে এই বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছে। এসব প্রস্তাবনার মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নদী খনন করা, নিচু এলাকা যেমন উপশহরে পানির পাম্পিং স্টেশন করা, ছড়ার সংযোগস্থলে স্লুইচ গেইট তৈরী, ড্রেনের প্রশস্ততা আরও বৃদ্ধি করা।

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বন্যার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট এসেছিলেন। প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে আমাকে সেখানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। আমি আমার বক্তব্যে সিলেট শহর রক্ষা বাঁধের কথা বলেছি। জলকপাট দিয়ে ছড়াগুলো নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মন দিয়ে শুনেছেন। আমরা সরকারের একটা নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সিলেট শহরের একটা সার্বিক পরিবেশ সুরক্ষার পরিকল্পনা তৈরি করেছিলাম। সেই রিপোর্ট আমরা তাঁর হাতে তুলে দিয়েছি। সুতরাং আমি মনে করি, এখন সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এই বিষয়ে একটি টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ শুরু করা প্রয়োজন। জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব এখন সিলেট মহানগর এলাকায়ও পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে দিনে প্রচন্ড তাপদাহ, আবার রাতে কিংবা দিনে স্বল্পসময়ে একটানা অস্বাভাবিক বর্ষণের কারণে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ সহ্য করতে হয়েছে নগরবাসীকে। এমনকি এবারের মৌসুমে সিলেট নগরীতে একরাতে স্বল্পসময়ে অর্থাৎ সবচেয়ে কম সময়ে বেশি পরিমাণ বৃষ্টিপাতের রেকর্ডও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। স্বল্পসময়ে অতিবৃষ্টি ছাড়াও চা বাগানের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান ছড়া ও খালের রুগ্ন দশাও আমাদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা ২০১৪ সাল থেকে এসব চা বাগানের ছড়া ও খাল খননের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ জানালেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। সিলেটবাসীর স্বার্থে এসব বাস্তবায়ন জরুরী।

বাজে বক্তৃতায় সিসিক মেয়র বলেন, সিলেট মহানগরীর ব্যবসা বাণিজ্যে আরো অগ্রগতি সাধনের জন্য একটি আধুনিক সুবৃহৎ মার্কেট কমপ্লেক্স নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জানি না, আমি এই মেয়াদে সেই কাজ শুরু করতে পারব কী-না। বিগত বাজেট ঘোষণাকালে আমি উল্লেখ করেছিলাম, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আমরা সিলেটে বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করি। প্রায় ১৭শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ২৬ তলা বিশিষ্ট এই কমপ্লেক্সে থাকবে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, বঙ্গবন্ধু প্লাজা, হেরিটেজ মার্কেট, কমার্শিয়াল হাব, শেখ রাসেল পার্ক, কনভেনশন সেন্টার, অডিটরিয়াম, ফেয়ার প্লেসসহ নানাবিধ সুবিধা। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়েল ট্রাস্টের সভাপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের প্রাথমিক অনুমোদনও প্রদান করেছেন। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আমরা এই প্রকল্প দাখিল করেছি। সিলেটের ব্যবসা বাণিজ্যের গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবেন বলে আমি আশা করছি।

শিক্ষার উন্নয়নে সিসিকের উদ্দ্যোগ নিয়ে মেয়র বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন চারটি স্কুল পরিচালনা করে আসছে। এগুলো হচ্ছে আখালিয়ায় অবস্থিত বীরেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, চৌহাট্টায় অবস্থিত ভোলানন্দ নৈশ উচ্চ বিদ্যালয়, বাগবাড়িতে অবস্থিত বর্ণমালা সিটি একাডেমি এবং চারাদিঘিরপারে অবস্থিত সিটি বেবি কেয়ার একাডেমি। শিক্ষাখাতে আমার স্বপ্ন হচ্ছে কর্মমূখী শিক্ষায় এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা। আমরা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে আছি। শেভরন ও সুইস কন্টাক্টের যৌথ উদ্যোগে ‘উত্তরণ’ প্রকল্পের আওতায় সিলেট মহানগরীর চৌহাট্টায় ভোলানন্দ নৈশ বিদ্যালয় ভবনে একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চলতি বছরেই চালু করা হবে। এখান থেকে প্রতিবছর ১২শ জন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন।

প্রাথমিকভাবে ওয়েল্ডিং, প্লামবিং এন্ড পাইপ ফিটিং, ইলেকট্রিকেল ইন্সটলেশন ও মেইনটেইনেন্স এবং  হাউস কিপিং কোর্স পরিচালনা করা হবে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুধু দেশে নয়, বিদেশে গিয়েও একজন শিক্ষার্থী তার ক্যারিয়ার গঠন করতে পারবে। সিলেট নগরীর ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আমরা একটি নতুন স্কুল করার পরিকল্পনা নিলেও এখনও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকে স্কুলের জন্য ভূমি হস্তান্তরও সম্পন্ন হয়েছে, স্কুলের নামকরণও সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে আমরা শিগগিরই এই স্কুলের কাজ শুরু করতে পারব।
মেয়র জানান, ডিজিটাল সিটি কর্পোরেশন হিসেবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন একটি রোল মডেল। সিসিকের ডিজিটাল কার্যক্রমের মাধ্যমে নগরবাসী অনলাইনে পানির বিল, হোল্ডিং ট্যাক্স, এসেসমেন্ট, ট্রেড লাইসেন্স এবং বিভিন্ন ধরনের সনদ প্রাপ্তিসহ নানা ধরনের সেবা পাচ্ছেন।ট্রেড লাইসেন্স শাখাটি সম্পূর্ন ডিজিটালইজড হওয়ায় যেকোনো ব্যবসায়ী অতি সহজেই ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন, নবায়ন, লাইসেন্স সংশোধন ইত্যাদি কাজ অনলাইনে অনায়াসে করতে পারছেন। এসেসমেন্ট ও হোল্ডিং ট্যাক্স শাখাকেও প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সফটওয়্যার ভিত্তিক বিলিং প্রক্রিয়ার ফলে বিলিং সিস্টেম আরও সহজতর হয়েছে। ডিটিজাল সনদ সিস্টেম ওয়েবসাইটে লগইন করে একজন নাগরিক তাঁর চাহিদা মোতাবেক যে কোনো প্রকার সনদের জন্য আবেদন করতে পারেন এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি তার কাক্সিক্ষত সনদটি অনলাইনের মাধ্যমে পেয়ে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, এই সেবাটি সিটি কর্পোরেশনের বর্ধিত ওয়ার্ডের নাগরিকবৃন্দও পাচ্ছেন।

তথ্য প্রযুক্তি খাতে আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হচ্ছে ইমারত নির্মাণের আবেদন। এটি এমন একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন হবে, যার মাধ্যমে একজন নাগরিক স্থাপনা/ইমারত তৈরির অনুমোদন প্রাপ্তির জন্য আবেদন করবেন অনলাইনে, সেই সাথে আবেদনের অবস্থা, বিল পরিশোধ এবং অনুমোদন প্রাপ্তি সহ সামগ্রিক কার্যক্রম অনলাইন সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

 

সিসিক মেয়র বলেন, শুরু থেকে এই পর্যন্ত মোট কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে প্রথম ডোজ ৬ লাখ ৮ হাজার ৮শ ৫৫ জন, দ্বিতীয় ডোজ ৬ লাখ ১০ হাজার ৭শ ২৯ জন এবং বুস্টার ডোজ ২ লাখ ২১ হাজার ৪৪ জন। সবমিলিয়ে টিকা প্রদান করা হয়েছে ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৫শ ৮৮ ডোজ। সেবার মানসিকতা নিয়ে ঝুঁকি উপেক্ষা করে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পালনে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করেছেন।

পর্যটনবান্ধব এই সিলেট নগরীতে কয়েকটি ওয়াকওয়ের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে জানিয়ে মেয়র আরিফ বলেন- কিছু ওয়াকওয়ের কাজ চলমান আছে। ধোপাদিঘী ওয়াকওয়ে, রোজভিউ সংলগ্ন উপশহর ওয়াকওয়ে, জল্লারপাড় ওয়াকওয়ের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। গোয়াবাড়ি ওয়াকওয়ে, ও বালুচর ওয়াকওয়ের নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন। সাগরদিঘীরপাড় ওয়াকওয়ের নির্মাণকাজ চলমান আছে। এমসি কলেজের মাঠের চারপাশ ঘিরে নান্দনিক ওয়াকওয়ে নির্মাণেরও পরিকল্পনা আছে। আশা করছি, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের পর নগরবাসী এবং সিলেটে ঘুরতে আসা পর্যটকরা নগরীর মধ্যে কিছুটা হলেও সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন।  পর্যটকদের সুবিধার্থে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ট্যুরিস্ট বাস চালুরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

মেয়র বলেন, সিলেট মহানগরীতে বিদ্যুতের খুঁটিতে ঝুঁকিপূর্ণ তারের জঞ্জাল সরানো এবং নিরাপদ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে এই পর্যন্ত সিটি এলাকায় সাড়ে ১৪ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা সিলেট মহানগরীর আরো ১১টি সড়কে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা দিয়েছি। সেই প্রস্তাবনার আলোকে পিডিবি এই প্রকল্প বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে এবং একনেকে এই প্রকল্পটি ইতোমধ্যে পাস হয়েছে। বর্ষার কারণে এই কাজ এখনো শুরু হয়নি। আশা করছি খুব শিগগিরই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

 

এছাড়া সুরমা নদীর উত্তর তীর ঘেষে সার্কিট হাউসের সম্মুখ হতে বোরহান উদ্দীন সড়ক পর্যন্ত রিটেইনিং ওয়াল ও ওয়াকওয়েসহ রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।

সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী, মরহুম এম সাইফুর রহমানকে স্বরণ করে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন- বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী, সিলেটবাসীর অহংকার, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী, মরহুম এম সাইফুর রহমানের কাছে আমি চিরঋণী। মরহুম এম সাইফুর রহমান উন্নয়নের প্রশ্নে ছিলেন আপসহীন। তাঁর সেই আদর্শকে ধারণ করেই রাজনৈতিক মতাদর্শের উর্ধ্বে উঠে সিলেট মহানগরীর উন্নয়নে সবসময় কাজ করেছি, ভবিষ্যতেও করে যাবেন বলেন সিসিক মেয়র।

সিসিক মেয়র বলেন, সিলেট সিটির সীমানা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ২৬.৫০ বর্গ কিলোমিটারের সিলেট সিটির নতুন আকার হচ্ছে ৫৯.৫০ বর্গ কিলোমিটার, ২৭টি ওয়ার্ড বৃদ্ধি পেয়ে ৪২টি হয়েছে। নিঃসন্দেহে সিলেট সিটির জন্য এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু এই পদক্ষেপ স্বার্থক হবে তখনই যখন বর্ধিত এলাকার জনগণ সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রকৃত সুফল পাবেন। বর্ধিত এলাকার জনগণের উন্নয়ন কাজের জন্য গত ৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে ৪ হাজার ১ শ ৮৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন করে ইতোমধ্যে আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছি।

 

২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট তৈরীতে সিসিকের অর্থ ও সংস্থাপন কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ, কমিটির সদস্য কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন, কাউন্সিলর আযম খান, কাউন্সিলর শাহানারা বেগম, কাউন্সিলর আব্দুল মুহিত জাবেদ এবং সদস্য সচিব প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আ.ন.ম. মনছুফ।

বাজেটে উল্লেখিত আয়ের খাতগুলো হচ্ছে-
হোল্ডিং টেক্স ৪৫ কোটি ২ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা, স্থাবর সম্পত্তি হস্থান্তরের উপর কর ১৬ কোটি টাকা, ইমারত নির্মাণ ও পুনঃ নির্মাণের উপর কর ২ দুই কোটি টাকা, পেশা ব্যবসার উপর কর ৮ কোটি ৫০ পঞ্চাশ লক্ষ টাকা, বিজ্ঞাপনের উপর কর ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা, বিভিন্ন মার্কেটের দোকান গ্রহীতার নাম পরিবতনের ফি ও নবায়ন ফিস  বাবদ ৮০ লক্ষ টাকা, ঠিকাদারী তালিকাভুক্তি ও নবায়ন ফিস বাবদ ৩০ লক্ষ টাকা, ল্যাব টেষ্ট ফিস বাবদ ৬০ লক্ষ টাকা,  বাসটার্মিনাল ইজারা বাবদ আয় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা,  ট্রাকটার্মিনাল ইজারা বাবদ আয় ৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা,  খেয়াঘাট ইজারা বাবদ ১৮  লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, সিটি  কর্পোরেশনের সম্পত্তি ও দোকান ভাড়া বাবদ ৪ কোটি ৫০ হাজার টাকা, রোড রোলার ভাড়া বাবদ আয় ৫০ লক্ষ টাকা,  রাস্তা কাটার ক্ষতিপূরণ বাবদ আয় ৩০ লক্ষ টাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে আয় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা, দক্ষিণ সুরমা শেখ হাসিনা শিশু পার্কের টিকিট বিক্রয় থেকে আয় ৮০ লক্ষ টাকা,  পানির সংযোগ লাইনের মাসিক চার্জ বাবদ ৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, পানির লাইনের সংযোগ ও পুনঃসংযোগ ফিস বাবদ ১ কোটি টাকা, নলকুপ স্থাপনের অনুমোদন ও নবায়ন ফি বাবদ ২ কোটি টাকা। সম্মানীত নগরবাসী নিয়মিত হোল্ডিং ট্যাক্সসহ অন্যান্য বকেয়া পাওনা পরিশোধ করলে বাজেট বছরে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব খাতে সর্বমোট  ১০১ কোটি ১০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আয় হবে বলে আশা করছি।

বাজেটে তুলে ধরা ব্যয়ের খাতগুলো হচ্ছে-
সরকারি উন্নয়ন সহায়তা থেকে বরাদ্দ খাতে ৫ কোটি টাকা, কোভিট-১৯ মোকাবেলা, ডেঙ্গু মোকাবেলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচার উপ-খাতসহ সরকারি বিশেষ মঞ্জুরী খাতে ৪৬ কোটি  টাকা, সিলেট মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প খাতে ৪৮০ কোটি টাকা, সিলেট মহানগরীর নাগরিক সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্জ্য ব্যবন্থাপনা আধুনিকায়নের জন্য আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সরবরাহ শীর্ষক প্রকল্প খাতে ২০ কোটি টাকা, নগর ভবনের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ প্রকল্প খাতে ২০ কোটি টাকা, দক্ষিণ সুরমা এলাকায় শেখ হাসিনা শিশু পার্কে অবকাঠামো উন্নয়ন ও রাইড স্থাপন খাতে ২ কোটি টাকা, সিলেট মহানগরীর যানজট নিরসন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প খাতে ৫ কোটি টাকা, বিভিন্ন ছড়া খনন ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ প্রকল্প খাতে ১০ কোটি টাকা, সিটি কর্পোরেশন এসফল্ট প্লান্ট স্থাপন ও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে জমি অধিগ্রহণ খাতে ২০ কোটি টাকা, সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ফিলিং স্টেশন স্থাপন খাতে ৫ কোটি টাকা, সিটি কর্পোরেশনের প্লাষ্টিক রিসাইক্লিং প্লান্ট স্থাপন খাতে ৫ কোটি টাকা, কুমারপাড়ায় সিটি কর্পোরেশনের নগর মাতৃসদন ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার স্থাপন খাতে ৫ কোটি টাকা, তোপখানাস্থ সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ভ’মিতে আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার ও স্টাফ কোয়াটার নির্মাণ প্রকল্প খাতে ৫ কোটি টাকা, উৎপাদন নলকুপ স্থাপন খাতে ৫ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মিরের ময়দান এলাকায় ষ্টাফ কোয়াটার নির্মাণ খাতে ১ কোটি টাকা,  সিলেট মহানগরীতে যানজট নিরসনে ৪টি পার্কিং ব্যবস্থা নির্মাণ খাতে ৪ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪টি গরুর হাট নির্মাণ খাতে ৪ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪টি জবাইখানা নির্মাণ খাতে ৪ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪টি খেলার মাঠ নির্মাণ খাতে ৪ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন খাতে ৫ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর গণের স্থায়ী অফিস নির্মাণ খাতে ১০ কোটি টাকা,  সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকার মসজিদ, মন্দির, গির্জা, মাজার, কবরস্থান, শশ্মান ঘাট, ঈদগাহ উন্নয়নে  ১০ কোটি টাকা, ইউনিসেফের অর্থায়নে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সুবিধা বঞ্চিত মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা এবং টিকাদান কর্মসূচী খাতে ২ কোটি টাকা,  সিলেট মহানগরীতে সুয্যারেজ মাস্টার প্লান এর  ফিজিবিলিটি ষ্টাডি করন প্রকল্প ৫ কোটি টাকা, ৫০ এমএলডি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের জন্য ১৩.১৩ একর জমি অধিগ্রহন ৫ কোটি টাকা, আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রকল্প খাতে ৫০ লক্ষ টাকা, নগরীর বস্তি সমুহের উন্নয়ন প্রকল্প খাতে ২ কোটি টাকা এবং সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব  উন্নয়ন প্রকল্প খাতে মার্কেট নির্মাণ বাবদ প্রাপ্ত সালামী ও সিটি কর্পোরেশন আবাসিক প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় গ্রহণ বাবদ মোট ৩৭ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।

 

রাজস্ব খাতে সর্বমোট ৯০ কোটি ৪২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে। তন্মধ্যে সাধারণ সংস্থাপন খাতে ৩৪ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা, শিক্ষা ব্যয় খাতে ৬ কোটি ৫০ লক্ষ  টাকা, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান খাতে ৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা, স্বাস্থ্য ও প্রয়ঃপ্রণালী খাতে ব্যয় বাবদ ১৬ কোটি ৮২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ খাতে ব্যয় ৫০ লক্ষ টাকা, বৃক্ষ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় খাতে ৪৫ লক্ষ টাকা, মোকদ্দমা ফি ও পরিচালনা ব্যয় বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা, জাতীয় দিবস উদযাপন ব্যয় খাতে ৭০ লক্ষ টাকা, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি ব্যয় খাতে ১৫ লক্ষ টাকা, মেয়র কাপ ক্রিকেট,  ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন টুর্ণামেন্ট ব্যয় বরাদ্দ ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা, রিলিফ/জরুরি ত্রাণ ব্যয় বরাদ্দ ২ কোটি টাকা, আকষ্মিক দূর্যোগ/বিপর্যয়/করোনা ব্যয় বরাদ্দ ২ কোটি টাকা, রাস্তার বৈদ্যুতিক বাতির রক্ষণা-বেক্ষল ব্যয় বরাদ্দ ৩ কোটি টাকা, কার্যালয়/ভবন ভাড়া বাবদ বরাদ্দ ১ কোটি টাকা, নিরাপত্তা/সিকিউরিটি পুলিশিং ব্যয় খাতে ৯০ লক্ষ টাকা, ডিজিটাল মেলা আয়োজনে ব্যয বরাদ্দ ২০ লক্ষ টাকা অনান্য ব্যয় খাতে ১৫ লক্ষ টাকা  ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া পানি সরবরাহ শাখার সংস্থাপন ব্যয় সহ পানির লাইনের সংযোগ ব্যয়, পাম্প হাউজ, মেশিন, পাইপ লাইন মেরামত ও সংস্কার সহ সর্বমোট ১৩ কোটি ৫৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বাজেটে রাজস্ব খাতে অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যয় বাবদ মোট ৩৪ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তন্মধ্যে রাস্তা নির্মাণ, রাস্তা মেরামত/সংস্কার, ব্রীজ/কালভার্ড নির্মাণ, ব্রীজ/কালভার্ড মেরামত/ সংস্কার, ড্রেইন নির্মাণ/মেরামত, সরঞ্জাম যন্ত্রপাতি ও সম্পদ ক্রয়, সিটি কর্পোরেশনের ভবন নির্মাণ/মেরামত, সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ষ্টাফ কোয়াটার নির্মাণ ও সংস্কার, ঢাকায় সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব লিয়াজো অফিসের জন্য  ফ্ল্যাট ক্রয়, কসাই খানা নির্মাণ/ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গা উন্নয়ন,  সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন রক্ষায় গ্যারেজ নির্মাণ, সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন রক্ষণা-বেক্ষনে  ওয়ার্কসপ নির্মাণ, হাট বাজার উন্নয়ন, বাসটার্মিনাল  সংস্কার ও উন্নয়ন,  সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পাঠাগার নির্মাণ, নাগরিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন, গভীর নলকুপ স্থাপন, এমজিএসপি প্রকল্পের রক্ষনা-বেক্ষন কাজের নিজস্ব অর্থ ব্যয়, সিটি কর্পোরেশনের জন্য জীপ গাড়ী ও ২টি আধুনিক এ্যাম্বুলেন্স ক্রয় এবং নারীদের উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহন ব্যয়সহ ইত্যাদি ব্যয় উল্লেখযোগ্য।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *