ঝন্টু বর্মণ (৩৩) পেশায় ছিলেন পত্রিকা বিক্রেতা (হকার)। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তিনি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দিন-রাত, রোদ-বৃষ্টি, গরম-শীত, মৌসুমি নিম্নচাপসহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হতো তার জীবনযুদ্ধ। ৪-৫ কিলোমিটার হেঁটে খবরের কাগজ বিক্রি করে পরিবারকে অন্নের জোগান দেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ কী এমন হলো- যে হাতে পত্রিকা বিক্রি করতেন, সে হাতে আমড়ার থালা নিয়ে আমড়া বিক্রি করতে রাস্তায় নেমে গেলেন?
তা জানতে কথা হয় হকার ঝন্টু বর্মণের সাথে। তিনি জানান, পরিবারের চার সদস্য নিয়ে বাস করেন উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের চাঁন্দপুর গ্রামে। সকালে বাসায় বাসায় পত্রিকা বিলি করে বাকি সময় রাস্তার মোড়ে ও রাস্তায় হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করে যে টাকা পান তা দিয়ে কষ্টে দিন চলছিল তার পরিবারের।
সারাদিনের পরিশ্রমের ফল সর্বসাকল্যে মাত্র ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। পত্রিকা যেদিন ভালো বিক্রি হয় সেদিন ৩৫০-৪০০ টাকা আয় হয়। এই টাকা দিয়ে পরিবার, পরিজন ও সন্তান লালন-পালন, তাদের শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য ব্যয় মিটিয়ে বর্তমান সময়ে টিকে থাকা তার জন্য খুবি কঠিন হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে সিলেটের পত্রিকা এজেন্ট মালিককে পাওনা টাকা দিতে না পারায় তিনি দিরাইয়ে দীর্ঘদিন ধরে পত্রিকা পাঠান না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে পারিবারকে বাঁচাতে রাস্তায় আমড়া বেচতে বের হয়েছেন।
তিনি আরো জানান, প্রতিদিন ছোট বড় মিলিয়ে ১৫০ পিস পত্রিকা আসত। এরমধ্যে ৩০-৩৫ পিস পত্রিকা বিক্রি করে অবশিষ্ট থাকত। কিন্তু ওই পত্রিকা ফেরত নিতেন না মালিকপক্ষ। ফলে প্রতি মাসে প্রায় ৩০০০ টাকার মতো লস দিতে হয়। সেই সাথে প্রতি মাসে ২০০০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিতে হয়। পত্রিকা বিক্রি করে ৩০% কমিশন পাই, তা দিয়ে কী করে নিজের খরচ মিটাই। এছাড়াও করোনার সময় পত্রিকা বিক্রির ৪৪ হাজার টাকা শ্যামারচর বাজারে, কৃষ্ণপুর বাজারে ৪৮ হাজার টাকা আমার বাকি রয়েছে। ৯ হাজার টাকার মতো প্রতি মাসে পত্রিকা বিক্রি করে পাই। তাই প্রতি মাসে মহাজনের টাকা পুরোপুরি দিতে পারি না। এই অল্প অল্প করে মহাজনের এখন প্রায় দেড় লাখ টাকা পাওনা। ৫ টাকার পত্রিকা এখন ৭ টাকা, ১০ টাকার পত্রিকা এখন ১২ টাকা হয়েছে। সাধারণ মানুষ এখন পত্রিকা কিনতে চায় না। এমনকি অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিসেও পত্রিকা রাখে না। করোনার পর থেকে পত্রিকার বাজারে ধস নেমেছে। বেশিরভাগ মানুষ এখন অনলাইন নিউজ পোর্টাল থেকে খবর পড়ে নেয়। তবে যদি কেউ আমাকে সহযোগিতা করত তাহলে হয়তো এ পেশায় আবারো ফিরতে পারতাম। তা নাহলে এ পেশায় আর আসা হবে না।