যৌনকর্মী খুন করে ‘লাল কালির চিঠি’তে যা লিখতো সিরিয়াল কিলার

জাতীয়

ঊনবিংশ শতাব্দীতে লন্ডন শহরে এক রোমাঞ্চকর হত্যাকাণ্ডের হাড়হিম ঘটনাবলি মানুষকে অস্থির করে তুলেছিল। জন্ম দিয়েছিল জ্যাক দ্য রিপারের। পরবর্তী প্রায় দেড়শ’ বছরে নৃশংস খুনিদের দেখা মিলেছে বার বার। তাদের অনেকেই সিরিয়াল কিলার।

সেই সব স্বভাব-হিংস্র আততায়ীদের ভিড়েও জ্যাক রয়ে গিয়েছে প্রবল পরাক্রমেই।

 

এত বছরেও অধরা রহস্য। যা আরও বেশি করে কুয়াশা ছড়িয়ে দিয়েছে জ্যাকের ব্যক্তিত্বে। আজও যে কোনো ধারাবাহিক নৃশংস হত্যাকাণ্ডে অবধারিতভাবে ফিরে ফিরে আসে সে।

অথচ আদৌ কি সে একজনই? নাকি অনেকগুলো খুনির নৃশংসতা একসঙ্গে জড়িয়ে গিয়ে জন্ম দিয়েছিল এক মিথের? প্রশ্নগুলো সহজ নয়, উত্তর জানা যায়নি। যাবেও কি কোনোদিন?

 

কিন্তু কী এমন নৃশংসতা? কোন ম্যাজিকে শতাব্দী প্রাচীন এক সুদূর সময়ের খুনিকে আজও মনে রেখেছে আধুনিক বিশ্ব? এর পেছনে কি প্রধান কারণ সাহিত্য-সিনেমায় তার বারংবার উপস্থিতি? সেকথায় আসার আগে একবার ফেরা যাক লন্ডনের পূর্ব প্রান্তের সেই দরিদ্র লোকবসতি হোয়াইটচ্যাপেলে।

১৮৮৮ সাল। পরপর একই কায়দায় খুন হচ্ছিলেন যৌনকর্মীরা। গলার নলি কেটে তাদের খুন করছিল খুনি। কেবল তাই নয়, নাড়িভুঁড়ি, কিডনি রীতিমতো খুবলে নেয়া হচ্ছিল মৃতদেহ থেকে। যেভাবে অন্তত তিনটি মৃতদেহের ক্ষেত্রে ছুরি-কাঁচি চালিয়ে অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বের করে নেয়া হয়েছিল তা থেকে ধারণা করা হয়, শারীরবিদ্যা সম্পর্কে রীতিমতো জ্ঞানী ছিল এই সিরিয়াল কিলার। স্বাভাবিকভাবেই পরপর এমন খুনে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন বিশ্ববিখ্যাত স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের গোয়েন্দারাও।

জ্যাক দ্য রিপার

এমনিতে হোয়াইটচ্যাপেল জায়গাটা খুবই ঘিঞ্জি, অপরিচ্ছন্ন। এখানকার বাসিন্দারাও দরিদ্র। সেখানকার হতভাগ্য যৌনকর্মীরাই ছিলেন জ্যাক দ্য রিপারের শিকার। তবে পুলিশ প্রথম ‘হোয়াইটচ্যাপেল মার্ডার ফাইল’ খোলে ১৮৮৮ সালের এপ্রিলে। সেই সময় এমা স্মিথ নামের এক যৌনকর্মীর উপরে হামলা করে দুষ্কৃতীদের এক দল। পরদিনই তার মৃত্যু হলে ফাইলটি খোলা হয়। এই ফাইলে মোট ১১টি কেস রয়েছে। যার মধ্যে পাঁচটি খুনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জ্যাক দ্য রিপারের নাম। এর বাইরেও জ্যাকের শিকার রয়েছে কিনা তা অবশ্য ইতিহাসের অন্ধকারে চিরকালের জন্য মুখ লুকিয়েছে। তাই জ্যাকের শিকারের সংখ্যা যে পাঁচের বেশি হতেই পারে, এই থিয়োরিকে আজও মান্যতা দেওয়া যায়নি।

৩১ আগস্ট, ১৮৮৮। মেরি নিকোলাস নামে এক যৌনকর্মীর দেহ উদ্ধার হয়। মনে করা হয়, তিনিই জ্যাক দ্য রিপারের প্রথম শিকার। এরপর একে একে অ্যানি চ্যাপম্যান, এলিজাবেথ স্ট্রাইড, ক্যাথরিন এডোস, মেরি কেলি নামের আরো চার যৌনকর্মী খুন হন। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরেই হয় তিনটি খুন। আরেকটি নভেম্বরে। ধীরে ধীরে জ্যাক দ্য রিপার হয়ে ওঠে রহস্যঘন এক নাম। সেই কুয়াশা আজও কাটেনি।

কিন্তু খুনি যদি ধরাই না পড়ে, তাহলে এই নামকরণ করল কে? অন্য সিরিয়াল কিলারদের তুলনায় কোথায় অনন্য জ্যাক? এই দুই প্রশ্নের উত্তর একই। নিজের নামকরণ সে নিজেই করেছিল। তার লেখা বিখ্যাত ‘ডিয়ার বস’ চিঠি আজও হাড়হিম আতঙ্কের খনি। সেই চিঠিতেই জ্যাক ‘সদর্পে’ ঘোষণা করে, পুলিশ যে খুনের কিনারা করতে অস্থির হয়ে উঠেছে, সেই সব খুন তারই করা। ১৮৮৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে লেখা সেই চিঠি ছিল ঘন লাল কালিতে লেখা।

জ্যাকের দুঃখ ছিল, রক্ত দিয়ে চিঠিটি না লিখতে পারা নিয়ে! তাই বিকল্প পথে হেঁটে লাল কালিতেই চিঠি লেখা মনস্থ করেছিল সে। সেই চিঠিরই তলায় প্রেরকের নাম হিসেবে লেখা ছিল ‘ইওরস ট্রুলি জ্যাক দ্য রিপার’। মানে আপনার অনুগত জ্যাক দ্য রিপার। সেখানে সে জানিয়ে দিয়েছিল ‘মজার ছোট্ট ছোট্ট খেলাগুলো’ সে এরপরও খেলবে। এবং এও জানিয়েছিল যখন পুলিশ নিজেকে চালাকভাবে, সে হা হা করে হাসতে থাকে মনে মনে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *