লোডশেডিং বৃত্তে বন্দী সিলেট

সিলেট

একদিকে সিলেটে বাড়ছে গরমের তীব্রতা। সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। দিনে রাতে মিলে অর্ধেক সময়ও বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা নগরবাসী। অনেকটাই লোডশেডিংয়ের বৃত্তে বন্দী হয়ে আছে সিলেট। এমনিতেই দেশে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছেনা। এর উপর কয়লা সংকটে ফের বন্ধ হয়ে গেছে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। ফলে সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও বেড়েছে লোডশেডিং।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার লোডশেডিং তেমন না হলেও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে বিদ্যুৎ বিড়ম্বনায়। দিনের বেলায় দফায় দফায় লোডশেডিং হলেও রাতের বেলায় এর মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে মধ্যরাত পর্যন্ত নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে সিলেটের কয়েক লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহককে। রোববার থেকে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। নগরজুড়ে লোডশেডিংয়ের অস্থিরতা আরো বেড়েছে।

জানা গেছে, নগর এলাকায় ১ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের পর বিদ্যুতের দেখা মিললেও গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জেলা উপজেলা ও গ্রামীণ জনপদে দিনে রাতে মিলে গড়ে ৬ ঘন্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা মানুষ। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে সর্বত্র জনজীবনে চলছে হাঁসফাঁস। এখন সুনামগঞ্জ জেলায় গড়ে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছে মানুষ, বাকী সময় চলছে লোডশেডিং। অনেক এলাকায় গভীর রাতেও লোডশেডিংয়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরে তীব্র গরমে ঘুমাতে পারছে না এসব এলাকার মানুষ। এতে চরম অস্বস্থিতে দিন ও রাত পার করছেন নগরের মানুষ। নগর ছাড়াও বিভিন্ন জেলা শহরেও লোডশেডিং বেড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিদ্যুৎ খাতের পরিকল্পনা কোনোকালেই টেকসই ছিল না। সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের পর বিদ্যুৎ খাতে সরকারের দ্বিতীয় শীর্ষ উন্নয়ন ব্যয়ের খাত হলেও এই খাতকে টেকসই করা যায়নি; বরং কিছু অতি ধনী ও সুবিধাভোগী গোষ্ঠী তৈরি করেছে। চুক্তির ফাঁকে ও ফাঁদে আটক দেখিয়ে আদতে কতিপয় লোকই কৌশলে সরকারের বাজেট-সংকট তৈরি করেছে। সব মিলিয়ে যা দেখা যায়, তার চেয়েও বাস্তব সংকটের গভীরতা বেশি।

নগরীর পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ কখন যায় আর আসে ঠিক নেই। ১ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। ফিরছে ১ঘন্টারও বেশী সময় পর। গেল ২৪ ঘণ্টায় পাঠানটুলা এলাকায় গড়ে ১০ ঘন্টার বেশী সময় লোডশেডিং হয়েছে। শহরের পরিস্থিতি যদি এমন হয়। তাহলে গ্রাম এলাকায় কি হচ্ছে তা কল্পনাই করা যায়না। গ্রামের মানুষ বলে থাকেন- গ্রামে বিদ্যুৎ যায়না মাঝে মাঝে আসে।

নগরীর কাজলশাহ এলাকার রাহেলা খাতুন নামের এক গৃহিণী জানান, দিনে তো বিদ্যুৎ যাচ্ছেই, আবার রাতেও যাচ্ছে। রাতে বিদ্যুৎ যাওয়ার কারণে ঘুম হচ্ছে না। বাচ্চারা ঘুমাচ্ছে না। অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। জানি না এভাবে আর কতদিন চলবে।

জানা গেছে, শহরের বাইরে এ সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। আগে তাও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭-৮ ঘন্টা লোডশেডিং স্বাভাবিক হিসেবেই নিয়েছিল গ্রাম-গঞ্জের মানুষ। কিন্তু এখন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ ঘন্টাই থাকছে না বিদ্যুৎ। এতে নাজেহাল হতে হচ্ছে এসব এলাকার মানুষদেরকে। লোডশেডিং নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

এদিকে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কয়লা সংকটে আবারও বন্ধ হয়ে গেছে বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। রোববার ভোররাতে কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব রোববার সকাল থেকেই পড়তে শুরু করেছে পুরো সিলেটজুড়ে। সকাল থেকেই বিভাগে বেড়েছে লোডশেডিং। ৪ শতাংশ লোডশেডিং বাড়িয়ে সিলেটে লোডশেডিং করা হয়েছে ৩৬ শতাংশ। যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর চালু হওয়ার পর কয়লার অভাবের ৭ মাসে পাঁচবার বন্ধ হয়েছে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। বারবার প্রথম ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় এ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। এতে সিলেটসহ সারা দেশে বিদ্যুতের পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর আগে টারবাইন ত্রুটির কারণে গত ১৬ জুলাই বন্ধ হয়ে যায় রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। টারবাইন মেরামত শেষে ২০ জুলাই দুপুর থেকে উৎপাদন শুরু হয়।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদির দৈনিক জালালাবাদকে জানান, কয়লা সংকটের কারণে রোববার ভোর সাড়ে ৩টায় রামপালের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে সিলেটে লোডশেডিং এর পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। সিলেট বিভাগে রোববার লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল ৩২ শতাংশ। রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের পর তা করা হয়েছে ৩৬ শতাংশ। তবে তা আরো কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

তিনি জানান, রোববার সিলেট বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৫৪৫ মেগাওয়াট। আর আমরা পেয়েছি ৪০০ মেগাওয়াট। এমনিতেই দেড়শো মেগাওয়াটের মত কম বিদ্যুৎ পেয়েছি তার উপর লোডশেডিং বাড়ানোর কারণে আরও কম বিদ্যুৎ পাবো। তবে বন্ধ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু হয়ে গেলে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। রোববার দিনের বেলায় লোডশেডিং কিছুটা বাড়লেও সন্ধ্যার পর থেকে লোডশেডিং কমানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *