মাত্র এক কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ। এতে দেখা দিয়েছিলো সংঘাতের শঙ্কা। নগরজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছিলো। তবে শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে সিলেটে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
শনিবার দুপুরে সিলেট নগরের রেজিস্টারি মাঠে দশ দফা দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ করে বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। বিএনপির সমাবেশের ঘন্টাখানেক পর সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হয় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গির কবির নানক। সন্ধ্যার আগে আগেই শেষ হয় দুদলের সমাবেশ।
দুপুর থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে নিজেদের সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাজপথে দুই দলের পাল্টাপাল্টি মিছিলে উত্তেজনা দেখা দিলেও কোন সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি।
শান্তিপূর্ণভাবেই দুই দলের সমাবেশ শেষ হয়েছে জানিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস বলেন, দুই দলের কর্মসূচীর কারণে যাতে কোন অপ্রীতির ঘটনা না ঘটে এজন্য নগর ও নগরের প্রবেশ পথে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। একাধিক চেকপোস্ট বসিয়েও তল্লাশি চালানো হয়। সমাবেশ এলাকার যান চলাচলও সীমিত করা হয়েছিল। ফলে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বিএনপির সমাবেশ:
বেলা আড়াইটার দিকে সিলেট নগরের রেজিস্টারি মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ শুরু হয়। ‘আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমন-নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে, বিরোধী দলের গ্রেপ্ততারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা’ দাবিতে এ সমাবেশ করে বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, জনগনের পেটে লাথি মেরে সরকার উন্নয়নের গান গাইছে। কিন্তু উন্নয়ন মানে হলো জনগনের উন্নয়ন। তবে এই সরকার জনগনের কোন উন্নয়ন করেনি। আজ দেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা। বিদ্যুৎ, নিত্যপ্রওয়াজনী দ্রব্যসহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধির কারনে জনগনের নাভিশ্বাস উঠেছে। তাই জনগন আর এই সরকারকে চায় না।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকীর সভাপতিত্বে সমাবেশে তিনি আরো বলেন,
আজ মধ্যবিত্তরা গরীব হয়ে যাচ্ছে। গরীব আরো গরীব হচ্ছে। তারা খেতে পারছে না। অপুষ্টি বাড়ছে। অথচ এমন সময়েও একদল কোটি কোটি টাকা বানিয়েছে। হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। এই লুটেরা গোষ্টির কাছ থেকে জনগনকে মুক্ত করতে হবে।
সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতা সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা তাহসিনা রুশদীর লুনা, ডা এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সুহেল বলেন, আমরা যখন এইখানে সমাবেশ করছি তখন সিলেটে আরেকটি সমাবেশ হচ্ছে। পিস্তল রাইফেল বন্দুক নিয়ে শান্তি সমাবেশ করা হচ্ছে। আমাদের চুলকানি দেয়ার জন্যই একইদিনে সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগ।
এতে আরো বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহ ক্ষুদ্র ঋন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য আবুল কাহের শামীম, মিজানুর রহমান, শাম্মী আখতার প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের সমাবেশ:
বিএনপির সমাবেশস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে বিকেল ৪ টায় শুরু হয় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ। ‘ বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও অগ্নিসন্ত্রাস’-এর প্রতিবাদে এই শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সরকারের উপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তবে কোনো রক্তচক্ষু দেখিয়ে শেখ হাসিনাকে দমানো যাবে না।
এ সময় তিনি আরও বলেন, বিএনপির ক্ষমতায় থাকাকালে আমাদের সভা সমাবেশ করতে দেয়নি। এখন তারা গণতন্ত্রের কথা বলে। দেশে গণতন্ত্র আছে কিন্তু বিএনপির জনসমর্থন নেই। জনগণের সমর্থন হারিয়ে আবুল তাবুল বলছে।
বিএনপি নেতাবিহীন উল্লেখ করে তারেক রহমানের লন্ডনে রাজকীয় জীবনের টাকা কোথা থেকে আসে সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এ সময় নানক আরও বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী চক্র জামায়াত ইসলামের সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিএনপি বারবার বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করেছে। তাদের নৈরাজ্য আর অগ্নিসন্ত্রাসের কথা মানুষ ভুলেন নি। আর তাই দেশের রাজনীতি থেকে এই দুটি দলকে তারা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। জন সমর্থন হারিয়ে বিএনপি নেতারা আজ আবোল তাবোল বকছেন।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, আব্দুল খালিক, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক আনোরুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ।
শেয়ার করুন