সত্যি কি নারী আম্পায়ার নিয়ে আপত্তি ছিল ক্রিকেটারদের?

খেলাধুলা

ম্যাচের আম্পায়ার নারী, ঠিক এই কারণে কয়েকজন ক্রিকেটার খেলতে আপত্তি জানিয়েছেন-এমন এক খবর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী কয়েকজন ক্রিকেটার বিশেষ করে মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও তামিম ইকবালকে এজন্যে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। এ নিয়ে বিভক্ত সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।

তবে জানা গেছে, প্রকৃত ঘটনা আম্পায়ার সাথিরা জাকির জেসির নারী পরিচয় নয়, ঘটনা মূলত তার অভিজ্ঞতা নিয়ে।

কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, গত ২৫ এপ্রিল শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে মোহামেডান ও প্রাইম ব্যাংক ম্যাচ শুরুর আগে নারী ফিল্ড আম্পায়ার সাথিরা জাকির জেসির অধীনে খেলা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ক্রিকেটাররা। তবে আসল ঘটনা কী, তা জানালেন মোহামেডানের কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম টিটু।

তিনি বলেন, জেসির বিপক্ষে কোনোরকম আপত্তি আমরা উত্থাপন করিনি। প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের বিগ এন্ড ভাইটাল ম্যাচ। জেসি এ বছরই ঢাকার প্রিমিয়ার ক্রিকেটে প্রথম ম্যাচ পরিচালনা শুরু করেছে। এখানে ছেলে ও মেয়ে বিভাজন করিনি। আমরা চিন্তা করেছি মোহামেডান ও প্রাইম ব্যাংক বিগ ম্যাচ। জেসির প্রথম বছর, সে এত বড় ম্যাচের উত্তেজনার সঙ্গে তাল মেলাতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় ছিল আমাদের। সে নারী বলে আমরা তাকে আম্পায়ার মানতে চাইনি, বিষয়টি এমন নয়।

তারিকুল ইসলাম টিটু বলেন, আমাদের ধারণা ছিল তিনি নতুন আম্পায়ার, লিস্ট-এ ক্রিকেটে এ বছরই প্রথম খেলা পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। তাই অভিজ্ঞতা কম। আমরা সাধারণত এসব ম্যাচে সিনিয়র আম্পায়ার চাই। এমন বিগ ম্যাচে সে নির্বিঘ্নে খেলা পরিচালনা করতে পারবে কিনা, সে চিন্তা থেকেই আমরা আলাপের ছলে বলাবলি করেছি। তবে কোনো আনুষ্ঠানিক আপত্তি তুলিনি।

ফলে দাঁড়াল এমন আলোচনা শুধু দুই দলের কর্মকর্তারা করেছেন। ক্রিকেটাররা অর্থাৎ তামিম মুশি রিয়াদরা করেননি।

এদিকে, মোহামেডান ও প্রাইম ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নবীন নারী আম্পায়ার নিয়োগ কেন, এমন প্রশ্নে বিসিবি পরিচালক ও বিসিবি আম্পায়ার্স কমিটি চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু বলেন, দেখেন আমি নিজেও ৪০ বছর ধরে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত। আমিও জানি, একজন নারী এবং জুনিয়র আম্পায়ারের ঢাকার বিগ ম্যাচ পরিচালনা করা সহজ কাজ নয়। তাই বলে আমরা কি কাউকে না কাউকে ওই সব বড় ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব দেব না? জেসি তো এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক ম্যাচও পরিচালনা করেছে। ভারত আর বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট সিরিজেও অনফিল্ড আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছে।

তিনি বলেন, এ বছর বাংলাদেশে নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপ। সেখানে আমাদের নারী আম্পায়ারদের খেলা পরিচালনার দায়িত্ব পাক, আমরা সেই চেষ্টা করছি। তাই জেসিকে সেভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। তিনি নবীন ও অনভিজ্ঞ, ঠিক আছে। কিন্তু তাকে তো গড়ে তুলতে হবে। আর সেটা খেলা পরিচালনা করেই করতে হবে। আমরা সেই চিন্তায় জেসিকে মোহামেডান আর প্রাইম ব্যাংকের খেলা পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছি। সেখানে মোহামেডান ও প্রাইম ব্যাংক শিবির থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক আপত্তি উত্থাপন করা হয়নি। তবে মুখে কেউ কেউ বলেছেন, এমন বড় ম্যাচে জেসিকে আম্পায়ার না রাখলে ভালো হতো।

বিসিবি আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান বলেন, আসলে আমাদের জেসিদের তৈরি করতে হবে। এ জন্য দরকার সবার সহযোগিতা ও উদার মানসিকতা। নারী ও নবীন এবং অনভিজ্ঞ হলেও আগামীতে জেসিরা যেন বড় খেলা পরিচালনা করতে পারেন, তাদের তো তৈরি করতে হবে। আর আমরা যদি ঘরোয়া ক্রিকেটে তাদের তৈরি না করি, তাহলে কোথায় করবো বলুন?

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *