সরকারি কাজে বাধার অভিযোগে কোটা আন্দোলনকারীদের নামে মামলা

জাতীয়

সরকারি কাজে বাধা ও সম্পত্তি ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শুক্রবার (১২ জুলাই) শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়।

শনিবার দুপুরে বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমকে জানান শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন।

তিনি বলেন, সরকারি সম্পত্তি ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ এনে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের হয়েছে। এ ছাড়া সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তারা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন।

কোটা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরেই আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে সড়ক-মহাসড়ক, এমনকি রেলপথ অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ করছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘বাংলা ব্লকেড’ চলাকালে গত বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।

২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলনের পর সরকার কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে। সরকারে এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন সাত শিক্ষার্থী। রিটের নিষ্পত্তি করে গত ৫ জুন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল ঘোষণা করে। এরপর শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। ৯ জুন রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। গত ১০ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা দেয়।

হাইকোর্টের রায়ের পরেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনকারীরা কীভাবে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন তার কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক প্যানেল। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি খোলা বার্তা শেয়ার করেন সমন্বয় নাহিদ ইসলাম।

এতে উল্লেখ করা হয়, যেভাবে আন্দোলন পরিচালনা করবেন-

১. বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, জেলা ও মহানগরে যারা আন্দোলন সমন্বয় করছেন সবাই সংগঠিত হওয়ার জন্য আলাদা করে সমন্বয়ক কমিটি তৈরি করুন। দল, মত নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখুন৷ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করুন এবং সবার আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। তবে আন্দোলনের স্বার্থে বিতর্কিত বা রাজনৈতিকভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে এরকম কাউকে নেতৃত্ব পর্যায়ে রাখবেন না।

২. আন্দোলনকে কোনো একক বা মূল নেতৃত্বের উপর নির্ভরশীল করবেন না। সবসময় বিকল্প নেতৃত্ব প্রস্তুত রাখুন। প্রথম দিকের নেতৃত্বে উপর ঝামেলা হলেও তাহলে আন্দোলন স্তিমিত হবে না। নেতৃত্বে নতুন চেহারা আনার চেষ্টা করুন।

৩. ইন্টার্নালি সংগঠিত থাকুন কিন্তু আন্দোলনকে কোনো সাংগঠনিক রুপ দিবেন না। কমিটিটা শুধু শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। আন্দোলনের স্বতঃস্ফূর্ত চরিত্র যাতে বজায় থাকে৷ তবে কোনো পক্ষ অনুপ্রবেশ করে যাতে স্যাবোটেজ করতে না পারে এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন৷ আন্দোলন সব সময় শান্তিপূর্ণ ও অহিংস হবে।

৪. যে স্থানে কর্মসূচি করবেন সেখানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যোগাযোগ করতে চাইলে তাদের সঙ্গে কোঅপারেট করুন। কিন্তু সকল সিদ্ধান্ত আপনারাই নেবেন। কোনো ধরনের আপস করা যাবে না।

৫. সম্মিলিতভাবে আন্দোলন করার চেষ্টা করুন। জেলা বা মহানগরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করুন এবং একসঙ্গে বড় জমায়েত করার চেষ্টা করুন।

৬. কারও ওপর কোনো আঘাত বা হুমকি আসলে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করুন। ভয় পাবেন না। পিছিয়ে যাবেন না। সামনে এসে কথা বলুন। এখানে গোপনীয়তার কিছু নাই। আমাদের দাবি ও বক্তব্য সুস্পষ্ট ও যৌক্তিক।

৭. বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনকে যুক্ত করুন। কর্মসূচিতে সাংস্কৃতিক আয়োজন রাখুন। জেলা ও মহানগরের নাগরিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কর্মসূচির আগে মাইকিং ও লিফলেটের মাধ্যমে ব্যাপক গণসংযোগ করুন। হলের রুমে রুমে, লাইব্রেরিতে প্রচার করুন।

৮. মিডিয়া ও সংবাদকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখুন। মিডিয়ার সামনে বুঝে শুনে কথা বলুন যাতে মূল বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ থাকে। প্রোগ্রামে ও মিডিয়ায় আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এরকম বক্তব্য বা স্লোগান দিবেন না।

৯. ঢাকার সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি রাখার চেষ্টা করুন। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানার যারা ব্যবহার করবেন তারা অবশ্যই ঢাকার সঙ্গে আলোচনা করে নেবেন।

১০. অর্থ সংগ্রহের জন্য সরাসরি ক্রাউড ফান্ডিং করুন। কোনো অনলাইন মিডিয়াম ব্যবহার করবেন না। অর্থের নিয়মিত হিসাব রাখুন এবং সমন্বয়ক টিমের কাছে হিসাব ক্লিয়ার রাখুন। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নেবেন না। কারও কাছ থেকে বেশি অঙ্কের টাকা নেবেন না। রাজনৈতিক স্বার্থ আছে এরকম কারও কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা নেবেন না।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *