সাজা শেষ হলেও দেশে ফিরতে পারছেন না ভারতীয়, বাংলাদেশী তরুণের লড়াই

জাতীয়

মায়ের সঙ্গে অভিমান করে বেরিয়ে পড়েছিলেন ভারতীয় নাগরিক রোহিদাস সরকার (১৮)। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে তাকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরে আদালত তাকে ৩ মাস ২০ দিন কারাদণ্ড দেন। কিন্তু এ রায় ঘোষণার আগেই সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তারপরও ১৫ মাস ধরে কারাগারে আটক রয়েছেন রোহিদাস। ফিরতে পারছেন না নিজ দেশে স্বজনদের কাছে।

এ অবস্থায় রোহিদাস সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন আজাদ মিয়া (২০) নামের বাংলাদেশি এক তরুণ। তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তিনি নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। রোহিদাসের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ছুটে গেছেন ভারতেও। আজাদ মিয়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের দক্ষিণ টাট্রিউলি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মৌলভীবাজার আদালতের এক আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কর্মরত।

কারাগারে আটক রোহিদাস সরকার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাসহর থানার গোবিন্দপুর গ্রামের দুলাল সরকার ও প্রমীলা সরকার দম্পতির ছেলে।

সংশ্লিষ্ট আদালতের নথি সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৩ জুন কুলাউড়ার কর্মধা সীমান্ত এলাকায় বিজিবির হাতে আটক হন রোহিদাস সরকার। এ ব্যাপারে বিজিবির পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় আদালতের নির্দেশনায় রোহিদাসকে মৌলভীবাজারের কারাগারে পাঠানো হয়। ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আদালত তাকে ৩ মাস ২০ দিনের সাজার রায় দেন। তবে এর আগেই সাজার মেয়াদ পার হয়ে যায়।

যখন ওনার (রোহিদাস) কথা শুনেছি, তখন থেকেই কিছু করার কথা মাথায় আসে। এর পর থেকে চেষ্টা শুরু করি। রোহিদাস স্বজনদের কাছে ফিরলেই চেষ্টা সফল মনে করব।

আজাদ মিয়া, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার দক্ষিণ টাট্রিউলি গ্রামের বাসিন্দা দুই মাস আগে আজাদ মিয়া তার আইনজীবীর এক মক্কেলের মাধ্যমে রোহিদাস সম্পর্কে জানতে পারেন।

আজাদ বলেন, স্বজনদের কাছে ফিরে যেতে তিনি কারাগারে প্রায়ই কান্নাকাটি করেন, নিয়মিত খাবার খান না। পরে কারাগারে গিয়ে রোহিদাসের সঙ্গে কথা বলে সান্ত্বনা দেন। সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে মামলাসংক্রান্ত নথিপত্রের নকল সংগ্রহ করেন। রোহিদাসের কাছ থেকে ভারতের স্বজনদের মুঠোফোনের নম্বর সংগ্রহ তাঁদের সঙ্গে কথাও বলেন।

রোহিদাসের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে আজাদ মিয়া ৫ ডিসেম্বর ভারতে গেছেন। গত বৃহস্পতিবার ফেসবুক মেসেঞ্জারে তিনি বলেন, তিনি আরও দু-তিন দিন ভারতে থাকবেন। রোহিদাস দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বাবুর্চির কাজ করে সংসার চালান। মা গৃহিণী। ছোট ভাই অর্জুন সরকার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে বেশ আগে। রোহিদাস অষ্টম শ্রেণির বেশি লেখাপড়া করেননি। বাবার কাজে সহযোগিতা করতেন।

স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে আজাদ বলেন, পারিবারিক বিষয় নিয়ে রোহিদাস মায়ের সঙ্গে রাগারাগি করে মামার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে পড়েন। এরপর আর ফেরেননি। পরে বিভিন্ন সূত্রে স্বজনেরা বাংলাদেশে তাঁর আটক হওয়ার খবর পান। তাঁকে নিয়ে স্বজনেরা উৎকণ্ঠায় পড়েছেন। তাঁরা সন্তানকে ফিরে পেতে চান।

মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলার তানিয়া ফারজানা মুঠোফোনে বলেন, ভারতীয় নাগরিক রোহিদাস সরকারের সাজার মেয়াদ পার হওয়ার পর তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বিজিবির সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়। সেখান থেকে ভারতীয় হাইকমিশনের অনুমতি নিতে বলা হয়। এরপর গত ২৯ নভেম্বর তারা লিখিতভাবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। কর্তৃপক্ষ ভারতীয় হাইকমিশনে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু হাইকমিশন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।

আজাদ মিয়া বলেন, রোহিদাসের বিষয়ে তিনি মৌলভীবাজারের কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তারা বলেছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে অবহিত। ভারতে থেকে ফিরে তিনি রোহিদাসের সব কাগজ নিয়ে সিলেটে সহকারী ভারতীয় হাইকমিশনারের কার্যালয়ে যাবেন। সেখানে সহকারী হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা বলে রোহিদাসের মুক্তির ব্যাপারে চেষ্টা চালাবেন।

রোহিদাসকে নিয়ে আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে আজাদ বলেন, ‘উনি (রোহিদাস) আমার কোনো আত্মীয় নন। আগে থেকে চিনতামও না। মানুষ তো মানুষের জন্যই। যখন ওনার কথা শুনেছি, তখন থেকেই কিছু করার কথা মাথায় আসে। এর পর থেকে চেষ্টা শুরু করি। রোহিদাস স্বজনদের কাছে ফিরলেই চেষ্টা সফল মনে করব।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *