স্টাফ রিপোর্টার:
সাম্প্রতিক বাংলাদেশ, প্রবাসীদের প্রত্যাশা শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রেসক্লাবের সভাপতি রফিকুল ইসলাম জুবায়েরের সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ও বারা অব নিউহ্যামের সাবেক ডেপুটি স্পীকার ব্যারিস্টার নাজির আহমদ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্বনাথ সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজুল হক, ব্যারিস্টার আহমেদ এ মালিক, সলিসিটর আব্দুল হামিদ টিপু, ইউনাইটেড ওলামা কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মাওলানা লুৎফুর রহমান ক্বাশেমী, উত্তর বিশ্বনাথ আমজদ উল্লাহ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ নেছার আহমদ, বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের সাধারণ সম্পাদক গোলজার খান, দি ওয়ান পাউন্ড জেনারেল হসপিটালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপার্সন ডাক্তার শানুর আলী মামুন, শিক্ষাবিদ ইমাদ উদ্দিন, বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দয়াল উদ্দিন তালুকদার।
বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি তজম্মুল আলী রাজু’র পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বিশ্বনাথ উপজেলা সভাপতি আব্দুল মতিন, বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী শিপন, সাবেক সভাপতি কাজী মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন, সদস্য শহিদুর রহমান, সুজিত দেব, মাজহারুল ইসলাম সাব্বির, সংগঠক মো.জায়েদ আলী, মোজাম্মেল হক, আনোয়ার আলী, আফজল মিয়া, তাজুল ইসলাম, ফাহিম আহমদ, নাছির উদ্দিন, সাব্বির আহমদ।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, প্রবাসীরা দেশে আসলে এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, জায়গা-জমিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানা সসস্যা পোহাতে হয়। এসব হয়রানী থেকে বাঁচতে চায় প্রবাসীরা। হয়রানীর কারণে যাতে প্রবাসীরা দেশে আসা বন্ধ না করে। সেই বিষয়টি লক্ষ রেখে আমাদের দেশকে সাজাতে হবে। বক্তারা আরো বলেন, একটি নিরাপদ, বাসযোগ্য পৃথিবী হোক সবার আশ্রয়স্থল। প্রবাসীরা বিদেশে থাকলেও দেশের প্রতি টান থাকে সবচাইতে বেশী। যার কারণে প্রবাসীরা বারবার দেশে আসেন এবং আর্তসামাজিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখেন।
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘বিশ্বনাথ দারুল উলুম ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্টকারী ও শিক্ষক অপদস্তকারী দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুছসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও বিশ্বনাথের প্রশসানের কাছে যুক্তরাজ্যস্থ হাইকমিশনের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। ২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুরে লন্ডন হাইকমিশনে হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিমের হাতে স্মারকলিপি প্রদান করেন প্রবাসী বিশ্বনাথবাসীদের একটি প্রতিনিধিদল।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেন্টার পেট্রন আলহাজ্ব মানিক মিয়া, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসভাপতি আলহাজ্ব তৈমুছ আলী, যুক্তরাজ্য যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাছিত বাদশা, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন সেলিম, লন্ডন মহানগর বিএনপির সহ সভাপতিত আকলুছ মিয়া, কমিউনিটি নেতা নাসির আহমদ, লুৎফুর রহমান ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বৃহত্তর সিলেটের বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন হযরত মাওলানা মরহুম আল্লামা ইসহাক আহমদ (রহ.) ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং এলাকাবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সার্বিক তত্বাবধনে উপজেলা সদরে (বর্তমান পৌরসভার) পুরানবাজারে ১৯৬০ সালে ‘বিশ্বনাথ দারুল উলুম ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃত। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত মাদরাসাটি আইনানুগভাবে একাডেমিক ও পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করে দেশ ও এলাকার শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ নু’মান আহমদ পারিবারিক অসুবিধার কারণে গত ২৫ আগস্ট থেকে ছুটিতে। তার এ অনুপস্থিতির সময়ে জুলাই ও আগস্ট মাসে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সুযোগে পূর্ব থেকে উঁৎ পেতে থাকা কতিপয় চিহ্নিত দুষ্কৃতিকারী পরিকল্পিতভাবে সাবেক ও বর্তমান কিছু শিক্ষার্থী ও স্বার্থাস্বেষীরা অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করে এলাকাবাসীর নামে গত ১ সেপ্টেম্বর রবিবার সকালে মাদরাসা ঘেরাও করে।
এসময় তারা মাদ্রাসার সুনামধন্য অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ নু’মান আহমদসহ মাদ্রাসা ও মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারীগণের বিরুদ্ধে উদ্দ্যেশেমূলক ভাবে নানারুপ মিথ্যা অপবাদ, অপপ্রচার ও কুৎসা রটনা করে অধ্যক্ষের ‘পদত্যাগ’চায়। তারা সশস্ত্র অবস্থায় জোরপূর্বক মাদ্রাসায় ঢুকে অবকাঠামো ভাঙচুর ও আসবাবপত্র তছনছ করে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তখন ছুটিতে থাকলেও বাধ্য হয়ে অধ্যক্ষ মাদরাসার উপধ্যক্ষের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের একটি পত্র দেন।
কিন্তু দুস্কৃতিকারীরা এটি গ্রহণ না করে তারা অন্যায়ভাবে পদত্যাগের দাবিতে মাদরাসা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিশৃঙ্খল ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে রাখে। পরবর্তীতে তারা মাদরাসার অফিস ও শ্রেণিকক্ষ তালাবদ্ধ করে। এসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ সম্প্রচারে এসে দুষ্কৃতিকারীরা সাধারণ ছাত্র/ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীগণকে প্রাণে হত্যার হুমকি দেয়। যা আমরা প্রবাস থেকে সরাসরি প্রত্যক্ষ করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লাইভে তাদের কথা অমান্য করে মাদ্রাসায় প্রবেশ করলে বা তালা খোলার চেষ্টা করা হলে প্রাণে হত্যা করে উচিত শিক্ষা এবং বাড়াবাড়ি করলে মাদ্রাসা ও তাদের বসতবাড়ি জ্বালিয়ে ধ্বংস, হামলা ও লুটপাট করার হুমকি প্রদান করা হয়। যদিও কয়েকদিন পরে তাদের বোধদয় হলে তারা মাদরাসার তালা খুলে দেয়। তবে তারা অধ্যক্ষ এবং আরও কয়েকজন শিক্ষক ‘পদত্যাগ’না করলে তারা পাঠদানের সুযোগ দেবে না বলে হুমকি রাখে। তারা বর্তমানে স্ব-শরীরে মাদরাসায় এসে এবং স্থানীয় মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি অব্যাহত রেখে মাদ্রাসার অফিস কিংবা পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে দিচ্ছে না।
আমরা প্রবাস থেকে ইতোমধ্যে জ্ঞাত হয়েছি যে, দুষ্কৃতিকারীগণের অপকর্মের বিষয়টি মাদ্রাসার গভর্নিংবডির সদস্যবৃন্দ ও অধ্যক্ষ মহোদয় বিশ্বনাথ উপজেলার সকল শ্রেণী-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, স্বার্থান্বেষী দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন না করায় ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এমতাবস্থার মধ্যে গত ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিশ্বনাথ দারুল উলুম ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতিসহ ৩ জনকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে এই চক্রটি। যে চক্রটি মাদরাসাকে ধ্বংস করতে চাইছে, পড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত করতে চাইছে তারা তাদেরকে জিম্মি করে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নিয়েছে।
সহকারী অধ্যাপক মাওলানা নাজিম উদ্দিনের আহবানে শিক্ষকদের বেতন ব্যাংক থেকে ছাড় করাতে গভর্নিং বডির সভাপতি মাওলানা শফিকুর রহমান, সদস্য ফয়জুল ইসলাম, মো. শামসুল ইসলাম মাদ্রাসায় গেলে শরিষপুর গ্রামের আব্দুল হান্নান, মো. শাহজাহান, আব্দুল খালিকসহ ৩০/৩৫ জন এসে তাদের অফিস কক্ষে তালাবদ্ধ করে ফেলেন। তাদের সাথে যোগ দেন মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মাওলানা নাজিম উদ্দীনও। তিনি ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য তাকে স্বীকৃতি দেয়া সংক্রান্ত একটি রেজুলেশন বের করে সেখানে স্বাক্ষর করতে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু তারা স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে শারীরিকভাবে অফিসে নাজেহাল করা হয়। এক পর্যায়ে বাধ্য করা হয় মাদরাসার সাদা প্যাডে স্বাক্ষর করতে। পরে আমরা দেখেছি সেটিতে তাদের পদত্যাগের কথা লিখা হয়েছে এবং যে ৩টি পদত্যাগ পত্রের কথা বলা হচ্ছে সেখানে একই হাতের লেখা।
দুষ্কৃতিকারীরা এভাবে নির্বিগ্নে তাদের অকপকর্ম চালাতে থাকায় স্থানীয় জনমনে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফলে যে কোন সময় দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি হয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও জানমালের চরম ক্ষয় ক্ষতির আশংকা রয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বনাথের অধিবাসী প্রবাসী হিসেবে আমরা চরম উদ্বিগ্ন। অনতিবিলম্বে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “বিশ্বনাথ দারুল উলূম ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্টকারী, সাধারণ ছাত্র/ছাত্রী ও তাদের অভিভাবক এবং শিক্ষক অপদস্থকারী, মাদ্রাসা ও মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারীরেদর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ অপপ্রচারকারী সুযোগ সন্ধানী দুষ্কৃতিকারীগণকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্থি নিশ্চিত করার জোরদাবী জানানো হয়।