সরকার পতনের আন্দোলনে কেন্দ্রীয় বিএনপির ডাকা গত রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ৩দিনের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে। এ দুইদিনের আন্দোলন কর্মসূচিতে সিলেটে রাজপথে দলটির কর্মী-সমর্থকদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায়ও জড়িয়েছেন দলটির অনেকেই।
কিন্তু এই সময়ে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির প্রথম সারির গুটি কয়েক ছাড়া রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচিতে দেখা মিলেনি অধিকাংশ নেতার। তবে মাঠে না থাকলেও আড়ালে আবডালে থেকে বিবৃতিতে সরব রয়েছেন তারা। শুধু জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ সারির নেতারাই নন, দলটির কেন্দ্রীয় সিলেটি নেতাদেরও দেখা মিলছে না রাজপথে। এনিয়ে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে অনেকটা হতাশা বিরাজ করছে।
রোববারের হরতাল কর্মসূচি পালনে রাজপথে দেখা যায়নি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, তাহসিনা রুশদীর লুনা ও ড. এনামুল হক চৌধুরীকে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী এবং মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরীকে ঝটিকা মিছিলে দেখা গেলেও দিনভর কর্মীরা তাদেরকে পাশে পাননি। মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনসহ জেলা ও মহানগর কমিটির অধিকাংশ নেতাদেরই কর্মসূচি পালনে রাজপথে দেখা মেলেনি।
কেবল কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগর বিএনপি-ই নয়, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, ছাত্রদলের শীর্ষ পদবীধারীদের পদচারণা নেই আন্দোলনে। কর্মী সমর্থকদের রাজপথে ছেড়ে অনেকটা নির্ভার তারা। মহাসড়কে আন্দোলনে কোথাও তাদের ছায়াও নেই। কিংবা মিছিল-মিটিং করতে দেখা যায়নি।
তবে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালনে তৎপর থাকতে দেখা গেছে যুবদল ও ছাত্রদলের কর্মী-সমর্থকদের।
সরেজমিনে প্রথম দিনের অবরোধে সিলেট- ঢাকা মহাসড়কের তেতলি এলাকায় ড্রাম ও গাছ ফেলে ‘পিকেটিং’ করেছেন ছাত্রদল ও যুবদল কর্মীরা। অবরোধ কর্মসূচিতে জিল্লুর রহমান জিলু নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বিএনপি নেতাদের দাবি জিলু যুবদল নেতা। তিনি গোলাপগঞ্জ যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। যদিও তার পরিবারের লোকজন বলছেন, জিলু কখনো রাজনীতিতে জড়ায় নি। পুলিশের ভাষ্য জিলু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
এদিকে দিনভর মাঠে না থাকলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আহত দক্ষিণ সিলাম ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সালাহউদ্দিনকে দেখতে হাসপাতালে যান বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা আরিফুল হক চৌধুরী। এরপর গণমাধ্যমের সামনে এসে বলেন, ‘আমি দলের আহত এক নেতাকে দেখতে এসেছি।’ আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নিহত ব্যক্তির পরিবারের কারো সাথে কথা হয়নি, কিভাবে কি হলো তা জানি না।’
বিএনপির চেয়ারপার্সনের আরো তিন উপদেষ্ঠা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, তাহসিনা রুশদীর লুনা ও ড. এনামুল হক চৌধুরীকে যেন স্বপ্নেও মাঠে দেখেননি কর্মী সমর্থকরা।
এছাড়া মহানগর বিএনপির সভাপতি ‘ব্যবসায়ী’ নাসিম হোসাইনকে অবরোধ কর্মসূচিতে মাঠে দেখা যায়নি।
এদিকে, জিল্লুর রহমান জিলু নিহত হওয়ার ঘটনায় তাকে দলীয় নেতা দাবি করে আজ বুধবার সিলেট জুড়ে হরতাল ডেকেছে যুবদল। আর হরতালকে সমর্থন জানিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে জেলা বিএনপি।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পুলিশ হেফাজতে যুবদল কর্মী জিল্লুর নিহতের জেরে যুবদল বুধবার সিলেটে হরতাল ডেকেছে। আমরা এতে নৈতিকভাবে সমর্থন জানিয়েছি। হরতালের পাশপাশি বিএনপির ডাকা তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচিও চলমান থাকবে।’
আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির কয়েকজন কর্মী-সমর্থক বলেন, অতীতের মতো দলের সব কর্মসূচিতেই আমাদের মতো সাধারণ কর্মীরা সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু পদবীধারী নেতাদের অনুপস্থিতি আমাদের ব্যথিত করছে। তাঁরা কর্মী-সমর্থকদের পাশে থেকে দিকনির্দেশনা দিলে আন্দোলন কর্মসূচি আরো বেগবান হতো।
জানা গেছে, রোববার হরতালে কেবল জেলা বিএনপির সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী এবং মহানগর কমিটির সহসভাপতি কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর নেতৃত্বে নগরীর জেল রোড এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের হয়। ওই মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণ হলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তাদের দেখা মিলেনি।
দলটির শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতি ছাড়াই জিন্দাবাজার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় জড়ান বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা।
ওইসময় মাঠে থাকা মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকীসহ দলটির ৫ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
শেয়ার করুন