সিলেটে ‘কলঙ্ক’ মুছতে চায় আওয়ামী লীগ

সিলেট

দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে টানা দুবার। অথচ চারদলীয় জোট ও ওয়ান-ইলেভেনের সময় এখানে মেয়র ছিলেন আওয়ামী লীগের। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সময় বিএনপির মেয়র জিতেছেন টানা দুইবার। তবে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বিজয়ের মুখ দেখেনি তাদের প্রার্থী।

সিলেট সিটি নির্বাচন এলেই এই আলোচনা সামনে চলে আসে। নিজ দল ক্ষমতায় থাকলেই দলীয় প্রার্থীর কেন পরাজয়? উভয় দলেই বিষয়টি বেশ আলোচিত।

তাই এবার সিলেটে পঞ্চমবারের নির্বাচনে এই কলঙ্ক মুছতে আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

ভোটের দিন ঘনিয়ে আসছে। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী একেবারেই নতুন মুখ। তবে ক্ষমতায় থাকলেই পরাজয়-এবার আর মেনে নিতে রাজি নয় দলটি। হারানো আসন পুনরুদ্ধারের একাট্টা দলের নেতাকর্মীদের। খতিয়ে দেখা হচ্ছে অতীতের চারটি সিটি নির্বাচনের ফলাফল। চলছে হিসাব-নিকাশ। কারণ এবার বেড়েছে নগরীর এলাকা। বেড়েছে ভোটার সংখ্যাও। এবার নগর ভবনের হারানো ক্ষমতা ফিরে পেতে মরিয়া আওয়ামী লীগ।

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে জেতাতে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেট সফর করে গেছেন। মনোনয়ন বঞ্চিতদের দিয়েই দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি হয়েছে। কামরানের টানা পরাজয়ের জন্য দলের ভেতরে থাকা ‘মোস্তাক বাহিনীকে’ এবার সাবধান হওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক।

লক্ষ্য অর্জনে এখন নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে সবাই মাঠে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং দূর করে একাট্টা করার চেষ্টা চলছে আওয়ামী লীগ পরিবারকে। মাঠে গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ, প্রচারণা অব্যাহত।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এবার নৌকার বিজয় ঠেকানো যাবে না। বিরোধীরা এমন আভাস পেয়েই নির্বাচন ছেড়ে পালানোর পথ খুঁজছেন। এমনকি নির্বাচনি পরিবেশ ঘোলাটে করার অপচেষ্টাও করছেন। তবে নগরবাসী পরিবর্তনের স্লোগান দিয়ে ঐক্যবদ্ধ। কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না।

মেয়র পদে শেষ দুবার হেরে গেলেও এবার আমরা বিজয় চাই বললেন, নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন।

অপরদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থিতার ব্যাপারে এখনও স্পষ্ট কোনো ঘোষণা দেননি। তবে বাজারে রটেছে, প্রার্থিতার ব্যাপারে অনুসারী, সমর্থক, ভোটারদের হ্যাঁ আর দলের পক্ষ থেকে না-এতেই তিনি আটকে আছেন।

প্রার্থিতার ব্যাপারে ঘোষণা না দিলেও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর মতোই তিনিও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। দিন-রাত গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। বিশেষ করে নগরীর নতুন ওয়ার্ডগুলোতে। তার এ তৎপরতা নির্বাচনমুখী বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে তার দলীয়, নির্দলীয় অনুসারীরা আছেন ভোটের সমীকরণে। হিসাব-নিকাশে আছেন মেয়র নিজেও।

মেয়র আরিফ জানিয়েছেন, নির্বাচনমুখী, নাকি রাজনীতিমুখী তা ২০ মে জানাবেন।

সিলেট পৌরসভার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৮৭৮ সালে। ২০০২ সালের ২৮ জুলাই সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। বর্ধিত হওয়ার পর সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬২১ জন। যা আগেরবারের চেয়ে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৮৯ জন বেশি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটার ছিল ৩২১৭৩২ জন। নির্বাচনে গতবার ১২০টি কেন্দ্র থাকলেও এবার কেন্দ্র বেড়ে হয়েছে ১৯০টি।

মেয়র পদে ৪ জনের মনোনয়ন সংগ্রহ, কাউন্সিলরে ২৬৭

২১ জুন অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি নির্বাচন উপলক্ষে চলছে মনোনয়ন সংগ্রহ। গত ২৭ এপ্রিল থেকে সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন প্রার্থীরা।

রবিবার (৭ মে) বিকাল ৪টা পর্যন্ত মেয়র পদে মোট ৪ ও কাউন্সিলর পদে ২৬৭ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

মেয়র প্রার্থী তিনজন স্বতন্ত্র হিসেবে এবং একজন দলীয় প্রতীকে কিনেছেন মনোনয়ন। আর কাউন্সিলর পদে ২৬৭ জনের মধ্যে ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (মহিলা কাউন্সিলর) ৫৯ জন এবং ৪২টি সাধারণ ওয়ার্ডে (পুরুষ কাউন্সিলর) ২০৮ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

মেয়র পদে মনোনয়ন কেনা তিনজন হলেন- মোহাম্মদ আবদুল হানিফ ওরফে কুটু, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান খান, সামছুন নুর তালুকদার ও হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (হাত পাখা)।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের মিডিয়া সেলের (সিটি নির্বাচন) কর্মকর্তা সৈয়দ কামাল হোসেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *