সিলেটে নিজেদের ঘর গুছাতে হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে ওঠেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আগামী জাতীয় সংসদ ও সিটি নির্বাচন এবং আন্দোলন সংগ্রামকে সামনে রেখে দুই দলের মহানগর শাখার প্রতিটি ইউনিট নতুন করে ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে। দুই দলের নেতারাই দাবি করছেন, দল গোছানোর কাজ শেষ হলে নিজেদের সাংগঠনিক কাজে আরও গতি আসবে।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্টিত হয়েছিল ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর। ওই সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদকে সভাপতি ও মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। প্রায় এক বছর পর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে কেন্দ্র থেকে অনুমোদন দেয়া হয় ৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এরপর থেকে বিভিন্ন দিবসে র্যালি, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন আর মিলাদ-দোআ’য় সীমাবদ্ধ ছিল মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। তিনবছর মেয়াদী কমিটির শেষ সময়ে এসে গত জুন মাসে কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে বর্ধিত সভা আয়োজনের তাগিদ আসলে নড়েচড়ে বসেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এরপর থেকে শুরু হয় ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজ। তবে শেষ পর্যন্ত বর্ধিত সভা স্থগিত হওয়ায় ফের ঝিমিয়ে পড়ে ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠনের কার্যক্রম। এবার ওয়ার্ড কমিটি গঠনে কিছুটা হলেও গতি এসেছে। ইতোমধ্যে ৯টি ওয়ার্ডের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে কোনটিতে সমঝোতার ভিত্তিতে আবার কোনটিতে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। নবনির্বাচিতদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরি করে মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দের কাছে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
সাংগঠনিক কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতে মহানগর সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।
তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল জানান, আগামী জাতীয় সংসদ ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখেই দল গোছানোর কাজ চলছে। দেরিতে হলেও ওয়ার্ড পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি ওয়ার্ডে সম্মেলন হয়েছে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আওয়ামী পরিবারের সদস্য ও দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয়দের অধিক মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
এদিকে, ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কেন্দ্র থেকে আবদুল কাইয়ূম জালালী পংকীকে আহ্বায়ক ও মিফতাহ সিদ্দিকীকে সদস্য সচিব করে মহানগর বিএনপির ২৯ সদস্যের কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। তিন মাসের মধ্যে মহানগর শাখার সম্মেলনের কথা থাকলেও এক বছরে সকল ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। তবে ইতোমধ্যে সকল ওয়ার্ডে পুরনো কমিটি ভেঙ্গে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সম্প্রতি পাড়া-মহল্লা কমিটি গঠন করে ওয়ার্ড সম্মেলনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে মহানগর বিএনপিতে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় করতে তাদেরকে আগামীতে কঠোর আন্দোলনে নামতে হবে। এজন্য আন্দোলন ও নির্বাচন উভয় বিষয়কে সামনে রেখে ওয়ার্ড পর্যায়ে দল গোছানোর কাজ করছেন তারা।
সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী জানান, ইতোমধ্যে সকল ওয়ার্ডে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন ওয়ার্ড শাখা পাড়া ও মহল্লা কমিটি গঠন করছে। ৪টি ওয়ার্ডে শিগগির সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। বাকি ওয়ার্ডগুলোতেও পাড়া-মহল্লা কমিটির কাজ দ্রুত সম্পন্নের তাগিদ দেয়া হয়েছে। মিফতাহ সিদ্দিকী জানান, চলতি মাসে অনেকগুলো ওয়ার্ডের সম্মেলন শেষ হয়ে যাবে। আর অক্টোবরের মধ্যে সকল ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজ শেষ করে মহানগর শাখার সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। যারা রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয়, মামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন এবং এলাকায় শক্ত অবস্থান রয়েছে তাদেরকেই কমিটিতে বেশি মূল্যায়ন করা হচ্ছে বলে জানান মিফতাহ সিদ্দিকী।
শেয়ার করুন