সিলেটে টাকার অভাবে সারানো যাচ্ছে না অপরাধী ধরার ‘অন্ধ চোখ’!

সিলেট

সিলেটকে ‘ডিজিটাল সিটি’ গড়তে মহানগরীর ১১০টি পয়েন্ট ও স্থানে স্থাপন করা হয়েছিলো সিসি এবং আইপি ক্যামেরা। যেগুলোর মাধ্যমে অপরাধীর চেহারা ও যানবাহানের নম্বরপ্লেট শনাক্ত করে পুলিশ। কিন্তু স্থাপনের কিছুদিন পরই ৮০টি ক্যামেরা বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে যায়। চালু ছিলো মাত্র ৩০টি ক্যামেরা। তবে সম্প্রতি পুলিশের উদ্যোগে নষ্ট ২১টি ক্যামেরা সচল করা হয়েছে। বর্তমানে ১১০টির মধ্যে ৫১টি সিসি ও আইপি ক্যামেরা সচল রয়েছে। 

এসব তথ্য জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিন পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ। শুক্রবার (২৬ আগস্ট) সিলেট সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত ‘বন্যা পরবর্তী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতবিনিময়’ সভায় এসএমপি কমিশনার এসব তথ্য তুলে ধরেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

নিশারুল আরিফ তাঁর বক্তব্যে বলেন- ‘আমাদের চাহিদা ছিলো পুরো সিলেট মহানগরীর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এক হাজারেও বেশি সিসি এবং আইপি ক্যামেরা স্থাপনের। কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয় ও একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের অধীনে সিলেট নগরীর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ২০১২ সাল থেকে কয়েকটি ধাপে বিভিন্ন সড়ক এবং পয়েন্টে বসানো হয় ১১০টি চেহারা ও গাড়ির নম্বরপ্লেট চিহ্নিতকরণ ক্যামেরা। আমি এসএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা এগুলোর দায়িত্ব আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা অফিসিয়ালি এগুলো বুঝে নেইনি। কারণ- ওই সময় আমরা দেখতে পাই, বেশিরভাগ ক্যামেরা নষ্ট। ওই সময় একটি বিষয় ঘটে- তখন সিলেট সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন রকম উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছিলো। এর মধ্যে বৈদ্যুতিক ও ইন্টারনেটের তারের জঞ্জাল মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছিলো সিসিক। এসময় এসব ক্যামেরার অনেক ক্যাবলও কাটা পড়ে। পরবর্তীতে সেগুলো আর ঠিক করে দেয়নি সিসিক। এক পর্যায়ে ১১০টির মধ্যে ৮০টি ক্যামেরাই নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থায় ক্যামেরাগুলো সচল করার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে বাজেট বরাদ্দের জন্য লিখিতভাবে আবেদন জানানো হয়। কিন্তু প্রকল্পের বাজেট শেষ হয়ে যাওয়ায় মন্ত্রণালয় থেকে সিলেট সিটি করপোরেশনকে বলা হয় এগুলো মেরামত করার জন্য। কিন্তু সিটি করপোরেশন এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তবে ক্রাইম কন্ট্রোলের জন্য যেহেতু আমাদের এই ক্যামেরাগুলো সচল রাখা খুবই দরকার, তাই আমি নিজ খরচে দুটি মেশিন ক্রয় করেছি। যেগুলো ক্যাবল কাটার জায়গা শনাক্তকরণ এবং জোড়া লাগানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। আমি নিজ অর্থায়নে এ দুটি মেশিন ক্রয় করে কিছু ক্যামেরা সচল রাখার চেষ্টা করেছি। বর্তমানে ১১০টির মধ্যে ৫১টি ক্যামেরা সচল রয়েছে।’

‘ডিজিটাল সিলেট সিটি’ প্রকল্পের আওতায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মহানগরীর বিভিন্ন সড়ক ও পয়েন্টে বসানো হয়েছিল ১১০টি চেহারা ও গাড়ির নম্বরপ্লেট চিহ্নিতকরণ ক্যামেরা। তবে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব ক্যামেরার বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে অপরাধী শনাক্তে এখন বেশ পেতে হয় মহানগর পুলিশকে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়কারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের কাজ শুরু করার পর থেকে প্রায় এক বছর আইসিটি মন্ত্রণালয়ের তত্বাবধানে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল বিনামূল্যে চেহারা চিহ্নিতকরণ ক্যামেরাগুলো দেখভাল করেছে। এক বছর পর এসব ক্যামেরার দায়িত্ব সিলেট মহানগর পুলিশকে (এসএমপি) বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ফলে এখন এগুলো দেখভালের দায়িত্ব পুলিশের।

চীনের হুয়াওয়ে কোম্পানির সহায়তায় প্রায় ৪ কোটি টাকা খরচে দেশে প্রথমবারের মতো ফেস রিকগনিশন ও যানবাহনের নম্বর প্লেট চিহ্নিতকরণ আইপি ক্যামেরা বসানো হয়েছিলো সিলেটে। মহানগরীর জিন্দাবাজার, সুরমা মার্কেট, লামাবাজার, আম্বরখানা, শাহজালাল মাজারগেট, জেল গেট, সুবিদ বাজার, শাহী ঈদগাহ এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মোড়ে এসব আইপি ক্যামেরা বসানো হয়। এসব আইপি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয় মহানগর পুলিশের হাতে। এজন্য সিলেট কোতয়ালি মডেল থানায় মনিটরিং কক্ষ স্থাপন করা হয়। তবে এসব ক্যামেরার বেশিরভাগই  বিকল হয়ে পড়ায় অপরাধী শনাক্ত বা গ্রেফতারে অনেক সময় বেকায়দায় পড়তে হয় পুলিশকে।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, সিলেট মহানগরীতে আইপি ক্যামেরা স্থাপনের পর অপরাধী শনাক্তে বেশ সুবিধা হয়েছিলো। এই ক্যামেরাগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে ৩৬০ ডিগ্রি জুমিং সুবিধা রয়েছে। এসব ক্যামেরা ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটনও করে পুলিশ। কিন্তু এখন বেশিরভাগ ক্যামেরা নষ্ট হওয়াতে অপরাধী শনাক্তে বেগ পেতে হয়।

ক্যামেরাগুলো মেরামতের বিষয়ে সিসকি’র বৈদ্যুতিক ও পরিবহন শাখার মো. রুহুল আলম নির্বাহী প্রকৌশলী সিলেটভিউ-কে বলেন- সব নষ্ট ক্যামেরা মেরামতের মতো বাজেট সিটি করপোরেশনের নেই। সেটি আমরা মহানগর পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছি। তবে তাদের দাবি- মহানগরীর রাস্তা সম্প্রসারণ এবং তারের জঞ্জাল সাফ করতে গিয়ে কিছু ক্যামেরার ক্যাবল কাটা পড়েছে। তাদের দাবি রাখতে গিয়ে আমরা খুঁজে বের করে এমন ক্যাবলগুলো মেরামত করে দেবো। এতে হয়তো কিছু ক্যামেরা সচল হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *