সিলেটে ময়নুলের হুংকার: পুলিশ কমিশনারের এত সাহস!

সিলেট

স্টাফ রিপোর্টার: ‘আমরা সিলেটের কর্নধার। সিলেটের পরিবহন সেক্টরকে আমরা কন্ট্রোলিং করি। আমাদের উপরে মামলা নিতে কি পুলিশ কমিশনারের ভেদাবোধ হইলনা? উনি কি ভয় পেলনা? আমাদের উপরে মামলা নিলো। পুলিশ কমিশনার এতবড় সাহস কোথা থেকে পেয়েছে, আমরা জানতে চাই। এই কমিশনার সিলেটে থাকতে চাইলে সারা সিলেটে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলবে। যত সময় পুলিশ কমিশনারকে বদলি না করা হয়েছে এবং আমাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা না হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সিলেটের কোন রোডে কোন ধরনের যান চলাচল করবে না বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি শ্রমিক ভাইদের অনুরোধ করছি, আপনারা আজ সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত রোডঘাট সব বন্ধ করে দেন’।

মাত্র সাড়ে ৪মিনিটের এক ভিডিও বার্তায় উপরোক্ত বক্তব্য দিয়ে সিলেটের পরিবহন শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট বিভাগীয় শাখার সভাপতি ময়নুল ইসলাম।
এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল সিলেট মহানগরী। তিনঘন্টা ধরে অবর্ননীয় দুর্ভোগের শিকার হয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। হঠাৎ এমন কর্মসূচি পালনে চোখের পানি ঝরেছে মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে ফুডপান্ডার কর্মীদের। বিদেশ যাত্রী থেকে শুরু করে নিভৃত পল্লী থেকে চিকিৎসার জন্য নগরীতে আসা রোগী ও তার স্বজনদের। বৃদ্ধ শিশু এবং অসহায় মহিলাদেরও দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে।

বিনা দোষে সাধারণ মানুষকে এমন দুর্ভোগ পোহানোর নেপথ্য কারণ, সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ বলে ওই ভিডিও বার্তায় উল্লেখ করেছেন ময়নুল  ইসলাম। তার বক্তব্যে তিনি জানিয়েছেন, তাদের ৬ দফা দাবি পূরণের ব্যাপারে ১৩ সেপ্টেম্বর সার্কিট হাউসের সভায় প্রশাসন যে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল, তা পূরণের ব্যাপারে আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি বলেছেন, আমার প্রতিনিধি দল পুলিশ কমিশনারের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি বলেছেন, মামলা নিয়েছি। কিন্তু গ্রেফতার করা হয়নি। এখন গ্রেফতার করবো। প্রয়োজনে আরও মামলা দেয়া হবে।
ব্যাস! এরপরই সিলেটের এই তথাকথিত ‘কর্ণধার’ ফুঁসে উঠলেন।  রাস্তায় নামিয়ে দিলেন তার ভুখানাঙা শ্রমিকদের। পুলিশ কমিশনারের ‘এত বড় সাহস হয় কি করে!’
ভিডিও বার্তাটি যারা দেখেছেন, তারা ক্ষোভে ফুঁসলেও রীতিমতো অসহায়। যেনো কারও করার কিছু নেই!

তবে সিলেট লাইনের সাথে আলাপকালে তাদের অনেকেই বলেছেন, পুলিশ কমিশনারের সাথে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার দায় সিলেটের সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়া বিবেক বর্জিত কাজ। সেই কাজটিই করেছেন সিলেটের তথাকথিত কর্নধার ময়নুল। পরিবহন সেক্টরের এই স্বঘোষিত কন্ট্রোলার বিবেক বিবেচনা বিসর্জন দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে প্রচন্ড দুর্ভোগের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন। এমনকি সিলেটজুড়ে ‘দাউ দাউ’ করে আগুন জ্বালানোর হুমকিও দিয়েছেন। এটা মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়।
তাদের মতে, আন্দোলন সংগ্রাম গণতান্ত্রিক অধিকার। সেজন্য প্রস্তুতি লাগে। প্রচারণা লাগে। সাধারণ মানুষকে আগে থেকে জানাতে হয়। এতে দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমে। সেটাই মানবিক। কিন্তু সিলেটের পরিবহন সেক্টরের কন্ট্রোলাররা যে কাজ করেছেন বৃহস্পতিবার, তা এক কথায় অমানবিক। তাদের সেই বোধবুদ্ধি নেই।

সচেতন মহলের দাবি, এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন আরও কঠোর ব্যবস্থা নিক।

এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হুটহাট শুরু হওয়া অবরোধ কর্মসূচি রাত সাড়ে ১০টায় প্রশাসনের সাথে আলোচনার পর প্রত্যাহার করে নেন ময়নুল।
কিন্তু তাহলে কি হবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক এখনো কাটেনি। যখন তখন ময়নুল ও তার লোকজন আবারও বড় ধরনের দুর্ভোগের মধ্যে তাদের ফেলতে পারেন বলে ধারণা করছেন তারা। এ ব্যাপারে কঠোর নিন্দা ও সমালোচনা চলছে সামাজিক মাধ্যমজুড়ে।

বৃহস্পতিবার জকিগঞ্জ থেকে রোগী নিয়ে সিলেট এসে দুর্ভোগে পড়া ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ ( ৪৬) আক্ষেপ করে বলেন, সিলেটের পরিবহন শ্রমিকদের নৈরাজ্যে আমাদের মতো মানুষের দুর্ভোগ পোহানো নতুন কিছু নয়। আগেও বারবার আমরা এমন সমস্যায় পড়েছি। এখন আবারও তা ফিরে এলো। শক্ত হাতে এদের প্রতিরোধ করা দরকার।

এমন দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনমত তৈরির প্রচেষ্টাও চলছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *