সিসা একটি বিষাক্ত পদার্থ। খাবার, পানীয় ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে সিসা। এই বিষাক্ত পদার্থ শরীরে রক্তের সঙ্গে মিশে গিয়ে যকৃৎ, কিডনি, হাড়সহ সবকিছুর ক্ষতি করে। দেহের কোমল পেশিতন্ত্রগুলোও সিসায় আক্রান্ত হয়।
এই উচ্চ ক্ষতিকারক সিসার উপস্থিতি রয়েছে সিলেটের শিশুদের রক্তে। এখানকার দুই থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের শতভাগের শরীরেই সিসার উপস্থিতি ধরা পড়েছে।
আন্তর্জাতিক শিশু সংস্থা ইউনিসেফের উদ্যোগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) গবেষণায় ওঠে এসেছে এমন চিত্র। সম্প্রতি এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা, সিলেট, টাঙ্গাইল, খুলনা ও পটুয়াখালী এই চার জেলার শিশুদের ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়। ঢাকা বাদে বাকি চার জেলা থেকে ৯৮০ শিশুকে গবেষণার আওতায় আনা হয়। এসব শিশুর প্রত্যেকের রক্তে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
তন্মধ্যে ৬৫ শতাংশ শিশুরই রক্তে সিসার মাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি নির্ধারিত মাত্রা ৩ দশমিক ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি। এ ছাড়া ২৪ মাস থেকে ৪৮ মাস বয়সী শিশুদের শতভাগের শরীরেই সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এদিকে, ঢাকা জেলার ৫০০ শিশুকে গবেষণার আওতায় আনা হয়। তাদের প্রত্যেকের শরীরের রক্তে সিসার উপস্থিতি মিলেছে।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের শরীরে সিসার নেতিবাচক প্রভাব বেশি। এর প্রভাবে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা কমে যায়। মনোযোগের ঘাটতি তৈরি করে এবং লেখাপড়ায়ও তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। ছোটবেলা থেকেই যাদের শরীরে সিসার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি মিলছে, বড় হয়ে তাদের আগ্রাসী হয়ে ওঠার আশঙ্কাও অনেক বেশি।
গবেষকরা জানান, সিসা একটি শক্তিশালী নিউরোটক্সিন যা শিশুদের মস্তিষ্কে অপূরণীয় ক্ষতি করে। এটি বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে ধ্বংসাত্মক পরিণতি বয়ে আনে। মস্তিষ্কের পুরোপুরিভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাওয়ার আগেই ক্ষতিসাধন করে। এতে শিশুদের সারাজীবনের জন্য স্নায়বিক, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধিকতার মুখে পড়তে হয়। মারাত্মক সিসা দূষণ অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়।
গবেষকরা আরও জানান, সিসা দূষণে দেশে প্রতি বছর ৩১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। যা দেশে মোট মৃত্যুর ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
তবে সিসা দূষণের ক্ষেত্রে সিলেট জেলায় ঝুঁকি কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
আইইডিসিআরের গবেষক ও সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. নওরোজ আফরিন বলেন, ‘টাঙ্গাইল, খুলনা, সিলেট ও পটুয়াখালী এ চার জেলায় শিশুদের (১৮ বছরের কম বয়স) দেহে সিসার মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এতে পরীক্ষিত ৯৮০ শিশুর রক্তে সিসা মিলেছে। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ শিশুর রক্তে সিসার মাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি নির্ধারিত মাত্রা ৩ দশমিক ৫ মাইক্রোগ্রামের চেয়ে বেশি। ২৪ থেকে ৪৮ মাস বয়সী শিশুদের শতভাগের শরীরেই সিসা পাওয়া গেছে। খুলনা ও টাঙ্গাইল জেলা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এবং সিলেট ও পটুয়াখালী জেলায় ঝুঁকি কম।’
শেয়ার করুন