সিলেটে সিএনজিচালিত অটোচালকদের দৌরাত্ম্যে যাত্রীরা অসহায়

সিলেট

সিলেটে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্য দিনদিন বেড়েই চলেছে। তাদের অত্যাচার নিরবে সহ্য করতে হচ্ছে যাত্রীদের। তারা অসহায় বোধ করছেন। আর অটোচালকরা কায়েম করেছেন রীতিমতো সন্ত্রাসের রাজত্ব। তাদের কাছে প্রতিদিন নগরীর কোথাও না কোথাও হয়রানি ও লাঞ্চনার শিকার হচ্ছেন কেউ না কেউ।

মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে তেমন এক ঘটনা ঘটে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায়। প্রায় পঞ্চাশোর্ধ্ব এক যাত্রীর সঙ্গে অশোভনীয় আচরণের এক পর্যায়ে একজন অটোচালক ওই যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। এতে যাত্রী সামান্য আহত হয়েছেন। ওই চালকের অটোরিকশার নম্বর- ১১, ৫২৫৮।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এই কোর্টপয়েন্ট এলাকায় প্রতিদিন এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে। যাত্রীদের কাছ থেকে অযৌক্তিক ভাড়া দাবি করলে ওই যাত্রী তা দিতে অস্বীকার করেছিলেন। তাই তার সাথে এমন আচরণ।

২/৩ দিন আগে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে আম্বরখানা পয়েন্টে। কয়েকজন যাত্রীকে গাড়িতে উঠানোর পর ওই স্ট্যান্ডের ম্যানেজার গাড়িটি আটকে অন্য গাড়িতে প্যাসেঞ্জারদের উঠার নির্দেশ দেন। তখন যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে ওই ম্যানেজার বারবার তাদের দিকে লাঠি নিয়ে তেড়ে যেতে দেখা গেছে। শেষ পর্যন্ত অসহায় যাত্রীরা গাড়ি বদল করতে বাধ্য হয়েছেন।

নগরীর রিকাবিবাজার, ওসমানী মেডিকেল কলেজ রোড, তালতলা, সুরমা পয়েন্ট, কামরান চত্ত্বরসহ গোটা নগরীতে সিএনজি চালকদের এমন দৌরাত্ম্য চলছে। তারা ১০টাকার ভাড়ার স্থলে ২০ টাকা আদায়ের অপচেষ্টা করেন। এরপর তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে অসহায় যাত্রীদের উপর চড়াও হচ্ছেন। অনেক সময় যাত্রীদের শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি তাদের মোবাইল টাকা পর্যসাও ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটছে। আর লোকলজ্জাসহ অয়থা হয়রানির ভয়ে যাত্রীরাও এসব ঘটনা চেপে যাচ্ছেন।

কোর্টপয়েন্টে অযথা হয়রানির শিকার হওয়া যাত্রীর সাথে আলাপকালে তিনি নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, চালকটি চরম বেয়াদব। অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেছে। পাশাপাশি যাত্রীদের সাথে সে তুই তুকারি করে কথা বলছিল।

তিনি এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নিবেন কি না, বা চালকদের সমিতিকে বিষয়টি অবগত করবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতে কোন লাভ হয়না। কেবল  হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই এগুলো এভয়েড না করে আর কোন উপায় নেই।

আর পুলিশ প্রশাসনের সোজা কথা, এসব ব্যাপারে তাদের কাছে কেউ লিখিত কোন অভিযোগ করেনা। তাই তাদের কিছু করারও থাকেনা। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়।

এজাতীয় অপরাধ হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতেন শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। কিন্তু তারাও অধিকাংশ সময়ে কুটনৈতিক জবাব দেন। অভিযোগ পেলে অবশ্যই দোষী চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না বলেই মনে করেন ভুক্তভোগীরা।

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে সিলেট জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জাকারিয়া বলেন, মঙ্গলবারের বিষয়টি আমি জেনেছি। অবশ্যই এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সবাই এটা জানবেন।

বিচারহীনতার ব্যাপারে এ পরিবহন শ্রমিক নেতা বলেন, আসলে যেসব যাত্রী হয়রানির শিকার হন তারা আমাদের না জানানোর কারণে উশৃঙ্খল চালকদের আমরা শাস্তির আওতায় আনতে পারিনা। ঘটনার সাথে সাথে আমাদের জানালে আমরা অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

জাকারিয়া ভুক্তভোগীদের তার মোবাইল ০১৭১৩৫২১১৫১ নম্বরে যোগাযোগ করতে বা অভিযোগ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *